নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র কি?
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক সূত্র যা বলে, কোনো বস্তুর উপর প্রয়োগ করা বল তার ভর ও ত্বরণের গুণফলের সমান। অর্থাৎ, এই সূত্র দ্বারা আমরা জানতে পারি একটি বস্তুতে কতটা বল প্রয়োগ করলে সেটি কত দ্রুতগতিতে চলবে বা তার গতির পরিবর্তন ঘটবে। এটি বস্তুগত গতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি, যার মাধ্যমে গতি, বল ও ভরের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। এই সূত্রটি বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন (Sir Isaac Newton) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica (প্রকাশিত: ১৬৮৭ সালে)-তে প্রকাশ করেন।
নিচে সূত্রটির বিস্তারিত ধারণা তুলে ধরা হলো—
-
মূল সূত্র:
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী,
F = ma
যেখানে,
F = প্রয়োগিত বল,
m = বস্তুর ভর,
a = উৎপন্ন ত্বরণ। -
অর্থ:
এই সূত্রের মানে হলো— কোনো বস্তুর ভর যত বেশি হবে, একই ত্বরণ উৎপন্ন করতে তত বেশি বল প্রয়োজন হবে। আবার, বল যত বেশি হবে, বস্তুর ত্বরণও তত বেশি হবে। -
প্রকৃতিগত ব্যাখ্যা:
যদি কোনো বস্তু স্থির অবস্থায় থাকে এবং তার উপর বল প্রয়োগ করা হয়, তাহলে সেটি ত্বরণ লাভ করে চলতে শুরু করে। বিপরীতে, কোনো গতিশীল বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে তার গতির পরিবর্তন ঘটে — অর্থাৎ ত্বরণ বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। -
একক:
বলের এস.আই. একক হলো নিউটন (Newton), যা সংক্ষেপে N দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
এক নিউটন বল সেই বল, যা ১ কিলোগ্রাম ভরের কোনো বস্তুকে ১ মিটার/সেকেন্ড² ত্বরণ প্রদান করে।
অর্থাৎ, ১ N = ১ kg × ১ m/s² -
উদাহরণ:
যদি একটি বলের ভর ২ কেজি হয় এবং সেটিতে ৩ মিটার/সেকেন্ড² ত্বরণ দিতে হয়, তবে প্রয়োগ করতে হবে—
F = ma = ২ × ৩ = ৬ নিউটন বল। -
গুরুত্ব:
এই সূত্রের মাধ্যমে আমরা যান্ত্রিক বিজ্ঞানে বল, গতি, ভর ও ত্বরণের সম্পর্ক বুঝতে পারি। এটি প্রকৌশল, রকেট বিজ্ঞান, মহাকাশযান পরিচালনা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের অনেক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। -
বাস্তব প্রয়োগ:
গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতা নির্ণয়, রকেট উৎক্ষেপণ, খেলাধুলায় বলের গতি নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই সূত্র ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিকেটে বলারের হাতে প্রয়োগ করা বলের কারণে বলের ত্বরণ তৈরি হয়, যা নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
সুতরাং, নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র মূলত বলে যে, বল কোনো বস্তুর ভর ও ত্বরণের সরাসরি গুণফল — যা পদার্থবিজ্ঞানের গতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং মহাবিশ্বের গতি-বৈশিষ্ট্য বোঝার এক অনন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।