বাংলাদেশে শিক্ষার হার কত?

Avatar
calender 11-11-2025

বাংলাদেশে শিক্ষার হার একটি দেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই পারে একটি উন্নত ও সচেতন সমাজ গঠন করতে। বাংলাদেশের সরকার স্বাধীনতার পর থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার ফলে শিক্ষার হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশের মোট সাক্ষরতার হার ৭১%, যা অতীতের তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে। নিচে বাংলাদেশের শিক্ষার হার, তার অগ্রগতি, ও প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।

  • বর্তমান সাক্ষরতার হার: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাক্ষরতার হার প্রায় ৭১%। এর মধ্যে পুরুষের সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৩% এবং নারীর হার প্রায় ৬৯%

  • গ্রাম ও শহরের পার্থক্য: শহরাঞ্চলে শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে বেশি, যেখানে সাক্ষরতার হার ৭৮% এর কাছাকাছি। অন্যদিকে গ্রামীণ এলাকায় এটি প্রায় ৬৮%। এই বৈষম্য কমানোর জন্য সরকার বিশেষ কর্মসূচি চালু করেছে।

  • প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি: বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি হার প্রায় ৯৮%। সরকার “সবার জন্য শিক্ষা” প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের বিদ্যালয়ে আসা নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে উপবৃত্তি কর্মসূচি এবং ফ্রি টেক্সটবুক বিতরণ কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

  • নারী শিক্ষার অগ্রগতি: স্বাধীনতার পর থেকে নারী শিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের সমান কিংবা কিছু ক্ষেত্রে বেশি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

  • অবৈধ শ্রম ও বাল্যবিবাহের প্রভাব: দেশের কিছু এলাকায় এখনো দারিদ্র্য, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ শিক্ষার অগ্রগতিতে বাধা হিসেবে কাজ করছে। এসব সমস্যা দূর করতে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করছে।

  • উচ্চশিক্ষার বিকাশ: বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১৬০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা বিস্তারের ফলে তরুণ প্রজন্ম কর্মমুখী শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে।

  • জাতীয় শিক্ষানীতি: ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে সকল নাগরিকের জন্য মানসম্মত ও আজীবন শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

  • ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার: “ডিজিটাল বাংলাদেশ” কর্মসূচির আওতায় ই-লার্নিং, অনলাইন ক্লাস, এবং স্মার্ট ডিভাইসের ব্যবহার শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

  • চ্যালেঞ্জ: যদিও শিক্ষার হার বেড়েছে, তবে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও প্রযুক্তির ঘাটতি রয়েছে।

  • ভবিষ্যৎ লক্ষ্য: সরকারের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে শিক্ষার হার ৯০% এ উন্নীত করা। এর জন্য কারিগরি শিক্ষা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, এবং ডিজিটাল উপকরণের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে শিক্ষার হার এখন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। শিক্ষা শুধু ব্যক্তিকে নয়, পুরো জাতিকেই সচেতন ও আত্মনির্ভর করে তোলে।

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD