যোগাযোগ মাধ্যম গুলো কি কি?
মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যোগাযোগ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষের চিন্তা, মতামত, অনুভূতি ও তথ্য অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমই হলো যোগাযোগ। এটি ছাড়া সমাজ, প্রশাসন, শিক্ষা কিংবা ব্যবসা—কোনো কিছুই সচল থাকতে পারে না। যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠান এবং দেশ থেকে দেশ পর্যন্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ক্রমাগত আধুনিক হচ্ছে এবং মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মানব জীবনে যোগাযোগ মাধ্যম সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত—মৌখিক যোগাযোগ ও লিখিত যোগাযোগ। এ দুটি ধরণের মাধ্যমের উপবিভাগ নিচে তুলে ধরা হলো।
মৌখিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ:
• কথোপকথন: এটি সবচেয়ে প্রাচীন এবং স্বাভাবিক যোগাযোগ পদ্ধতি, যেখানে মানুষ সরাসরি আলাপের মাধ্যমে ভাব বিনিময় করে।
• সাক্ষাৎকার: নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য বা মত বিনিময়ের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত সময়ে দুই পক্ষের সাক্ষাৎ ঘটে।
• টেলিফোন: দূরে থেকেও অল্প সময়ে সংবাদ বা তথ্য আদান-প্রদানের আধুনিক মাধ্যম।
• মঞ্চ বক্তৃতা: একাধিক মানুষের উদ্দেশ্যে একতরফাভাবে বক্তব্য প্রদান করা হয়।
• দলগত আলোচনা: একাধিক ব্যক্তি কোনো বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করলে তা দলগত আলোচনা হিসেবে পরিচিত।
• সম্মেলন বা কনফারেন্স: একই লক্ষ্য অর্জনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের একত্রে আলোচনার মাধ্যম।
• টেলিভিশন ও বেতার: গণমাধ্যমের মাধ্যমে ব্যাপক জনসংযোগের কার্যকর পদ্ধতি।
• চা-চক্র: অনানুষ্ঠানিক আলাপের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
• প্রশিক্ষণ কোর্স: শিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণভিত্তিক যোগাযোগ।
• কমিটি পর্যালোচনা: আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কার্যকর মাধ্যম।
• অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ: ব্যক্তিগত আলাপচারিতা যেমন—চায়ের টেবিল বা খেলার মাঠে আলোচনা।
• সামাজিক অনুষ্ঠান: বিবাহ, বনভোজন, প্রীতিভোজ ইত্যাদি অনুষ্ঠান মৌখিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করে।
লিখিত যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ:
লিখিত যোগাযোগ আবার দুইভাবে বিভক্ত—ব্যবস্থাপনার জন্য এবং কর্মচারীদের জন্য।
ব্যবস্থাপনার জন্য লিখিত যোগাযোগ:
• সংগঠন সম্পর্কিত নথি: ঘোষণা, নীতি, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি লিখিত আকারে প্রদান করা হয়।
• জরুরি বুলেটিন: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম।
• আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন: প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও উন্নয়নের তথ্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে জানানো হয়।
• চিঠি ও নির্দেশিকা পুস্তক: প্রশাসনিক নীতিমালা বা কাজের নির্দেশনা লিখিতভাবে সরবরাহ করা হয়।
• বিশেষ প্রকাশনা: তত্ত্বাবধান ও উন্নয়নমূলক কাজে সহায়ক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
কর্মচারীদের জন্য লিখিত যোগাযোগ:
• কর্মচারী বুলেটিন ও সংবাদ: জরুরি সংবাদ ও প্রতিষ্ঠানের আপডেট জানাতে ব্যবহৃত হয়।
• মাসিক পত্রিকা ও প্রতিবেদন: প্রতিষ্ঠানের সাফল্য, ব্যর্থতা ও আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ।
• অভিযোগ বই ও নোটিশ বই: কর্মচারীদের অভিযোগ বা জরুরি নির্দেশনা লিপিবদ্ধ করার মাধ্যম।
• বেতন খাম ও স্মারকপত্র: কর্মচারীদের আর্থিক ও প্রশাসনিক তথ্য জানানো হয়।
• কার্যতালিকা ও পঠন তাক: কর্মসম্পাদনের বিস্তারিত বিবরণ ও শিক্ষামূলক তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা।
• রচনা প্রতিযোগিতা: যোগাযোগ ও সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়।
বর্তমান যুগে টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন—ফেসবুক, ইমেইল, ইউটিউব, টুইটার ও ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপস যোগাযোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ফলে তথ্য বিনিময় এখন আগের চেয়ে সহজ, দ্রুত ও বিশ্বব্যাপী পৌঁছে যাচ্ছে।
সবশেষে বলা যায়, যোগাযোগ মাধ্যম মানবজীবনের প্রাণশক্তি। এটি সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্ক, বোঝাপড়া এবং উন্নয়নের প্রধান চাবিকাঠি। দক্ষ ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থাই উন্নত সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি।