দ্রব্য কাকে বলে?
দ্রব্য এমন এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ধারণা যা মানুষের প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণে সরাসরি ভূমিকা রাখে। সমাজে মানুষের জীবনধারা, উৎপাদন ব্যবস্থা ও বাজারের কার্যক্রম—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে দ্রব্য। এটি শুধু বস্তুগত পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এমনকি মানসিক বা অবস্তুগত সেবাও দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। নিচে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
দ্রব্য সম্পর্কিত মূল তথ্য:
-
অর্থ: অর্থনীতিতে দ্রব্য বলতে এমন সব জিনিসকে বোঝায় যা মানুষের চাহিদা বা অভাব মেটাতে সক্ষম। অর্থাৎ, কোনো বস্তুর প্রতি মানুষের যদি প্রয়োজন থাকে এবং সেটি সেই প্রয়োজন পূরণ করতে পারে, তবে সেটিকে দ্রব্য বলা হয়।
-
বস্তুগত দ্রব্য: যেসব দ্রব্যকে দেখা, ছোঁয়া বা ব্যবহার করা যায়, যেমন—খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, আসবাব, গাড়ি ইত্যাদি। এগুলো সরাসরি ভৌত রূপে বিদ্যমান এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য।
-
অবস্তুগত দ্রব্য: কিছু দ্রব্য দৃশ্যমান নয়, কিন্তু মানুষের চাহিদা পূরণে সমান গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, সেবা, পরিবহন ইত্যাদি। এগুলো মানুষের মানসিক বা সামাজিক প্রয়োজন মেটায়।
-
দ্রব্যের মূল বৈশিষ্ট্য:
-
মানুষের অভাব বা চাহিদা পূরণে সক্ষম হতে হবে।
-
এর কোনো না কোনো উপযোগিতা বা মূল্য থাকতে হবে।
-
এটি সীমিত বা দুষ্প্রাপ্য হতে পারে, যা এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব নির্ধারণ করে।
-
দ্রব্যের ব্যবহার হতে পারে ব্যক্তিগত (যেমন পোশাক, খাবার) অথবা সমষ্টিগত (যেমন রাস্তা, পার্ক)।
-
-
অর্থনীতিতে দ্রব্যের ভূমিকা: অর্থনীতির ভিত্তি গঠিত হয় দ্রব্য ও সেবার আদান-প্রদানের মাধ্যমে। উৎপাদক দ্রব্য তৈরি করে, ভোক্তা তা ব্যবহার করে—এভাবেই বাজারে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভর করে বাজারমূল্য নির্ধারণ হয়।
-
দ্রব্য ও সম্পদের সম্পর্ক: প্রতিটি দ্রব্যই কোনো না কোনো সম্পদ ব্যবহার করে উৎপাদিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য উৎপাদনের জন্য মাটি, শ্রম, পুঁজি ও প্রযুক্তি প্রয়োজন। তাই দ্রব্যকে অর্থনৈতিক সম্পদের একটি রূপ হিসেবেও ধরা যায়।
-
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে গুরুত্ব: অর্থনীতিতে দ্রব্যের ধারণা ব্যবহৃত হয় উৎপাদন, ভোগ, মূল্য নির্ধারণ ও বাজার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে। দ্রব্য ছাড়া অর্থনৈতিক কার্যক্রম বা বাজারব্যবস্থা কল্পনা করা অসম্ভব।
সুতরাং, মানুষের অভাব মেটানোর ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তুগত ও অবস্তুগত সব জিনিসকেই অর্থনীতিতে দ্রব্য বলা হয়। এটি শুধু ভোগ্যপণ্য নয়, বরং এমন সব উপকরণ ও সেবা অন্তর্ভুক্ত করে যা মানবজীবনের প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করে এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা সৃষ্টি করে।