বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ

Avatar
calender 10-11-2025

বাংলাদেশ একটি ভৌগোলিকভাবে জটিল ও নিম্নভূমি অঞ্চল, যা একে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশের তালিকায় রেখেছে। এখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায় প্রতি বছরই মানুষের জীবন, সম্পদ ও পরিবেশে বিরাট ক্ষতি ডেকে আনে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বঙ্গোপসাগরের নিকটে অবস্থিত হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রবণতা বেশি, আবার উত্তরের এলাকাগুলো খরা ও শৈত্যপ্রবাহের শিকার হয়। ফলে দেশের অর্থনীতি, কৃষি ও জনজীবনে এসব দুর্যোগের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ, ধরন এবং প্রতিরোধব্যবস্থা সম্পর্কে জানা থাকলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই কমানো সম্ভব। নিচে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—

দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের ধারণাঃ দুর্যোগ হলো এমন একটি ঘটনা যা সমাজের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ভয়াবহ বিঘ্ন ঘটায় এবং জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে। ক্ষতিগ্রস্ত সমাজ নিজের সক্ষমতায় তা মোকাবিলা করতে পারে না, ফলে বাইরের সহায়তা প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে বিপর্যয় বলতে বোঝায় আকস্মিক বা চরম প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট ঘটনা, যা জীবনের নিরাপত্তা ও সম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশে প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ 

    • ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বঙ্গোপসাগরের কারণে নিয়মিতভাবে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়, যা ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দুর্যোগ।

    • বন্যা: বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি, নদীর পানি উপচে পড়া এবং পাহাড়ি ঢল মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৬০% এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা ব্যাপক ক্ষতি করে।

    • খরা: উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, পাবনা অঞ্চলে খরার প্রভাব বেশি। বৃষ্টিপাতের অভাব ও উচ্চ তাপমাত্রা এর কারণ।

    • নদীভাঙন: পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর তীরে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার নদীভাঙনের ফলে গৃহহীন হয়।

    • ভূমিকম্প: বাংলাদেশের অবস্থান ভারতীয় ও বার্মিজ টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে হওয়ায় এখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে।

    দুর্যোগের প্রভাব: এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর শত শত মানুষ প্রাণ হারায়, হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়, ফসল ও সম্পদ নষ্ট হয়। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দারিদ্র্যের হার বেড়ে যায়।

    দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি: সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মৌসুমি পূর্বাভাস কেন্দ্র, সিপিপি (Cyclone Preparedness Programme) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গঠন করেছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক দল, আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রাথমিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

    দুর্যোগ প্রশমনের উপায়:

      • পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা ব্যবস্থা জোরদার করা

      • দুর্যোগ-সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ

      • গাছপালা রোপণ ও উপকূলীয় বনায়ন

      • জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

      • দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম

    সর্বোপরি, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অবশ্যম্ভাবী হলেও সচেতনতা, প্রস্তুতি ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। এভাবেই আমরা একটি দুর্যোগ-সহনশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।

    © LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

    Developed by WiztecBD