হিউয়েন সাং কোন দেশের পরিব্রাজক ছিলেন?
হিউয়েন সাং ছিলেন প্রাচীন চীনের একজন খ্যাতনামা ভ্রমণকারী, পণ্ডিত ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। তিনি সপ্তম শতাব্দীতে ভারতের উদ্দেশ্যে এক দীর্ঘ ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক যাত্রা শুরু করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বৌদ্ধ ধর্মের মূল সূত্রগুলো অধ্যয়ন করা এবং সেগুলোকে চীনে প্রচার করা। তার ভ্রমণ ইতিহাস শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং ইতিহাস, ভূগোল ও সংস্কৃতি বোঝার ক্ষেত্রেও এক মূল্যবান দলিল হিসেবে বিবেচিত।
প্রধান তথ্যাবলি:
-
নাম ও পরিচয়: হিউয়েন সাং (Hiuen Tsang বা Xuanzang) ছিলেন চীনের টাং রাজবংশের সময়কার একজন পরিব্রাজক ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। তার জন্ম খ্রিস্টাব্দ 602 সালে চীনের হেনান প্রদেশে।
-
ভ্রমণের উদ্দেশ্য: তার প্রধান লক্ষ্য ছিল বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও মূল সূত্রগুলো জানার জন্য ভারতের বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র নালন্দা মহাবিহারে অধ্যয়ন করা। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভারতের বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ও শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয়ই তার ধর্মজ্ঞান সম্পূর্ণ করবে।
-
ভারত সফর: হিউয়েন সাং খ্রিস্টাব্দ 629 সালে চীন থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে 630 সালে ভারতের সীমানায় প্রবেশ করেন। তার যাত্রাপথে তিনি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপালসহ অনেক অঞ্চল ভ্রমণ করেন।
-
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়: তিনি ভারতের প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বছর ধরে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি বৌদ্ধ দর্শন, যুক্তিবিদ্যা ও সংস্কৃত ভাষা শিখেছিলেন।
-
বাংলার সঙ্গে সম্পর্ক: হিউয়েন সাং তার ভ্রমণের সময় বাংলারও বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তিনি “পুন্ড্রবর্ধন” (বর্তমান বগুড়া অঞ্চল) ও “সমতট” (বর্তমান দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ) অঞ্চলের মানুষ, শিক্ষা, ধর্মীয় রীতি এবং প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন।
-
তার বিখ্যাত গ্রন্থ: চীনে ফিরে যাওয়ার পর তিনি তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা “সি-ইউ-কি” (Si-Yu-Ki) বা “Great Tang Records on the Western Regions” নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। এতে ভারত ও তৎকালীন উপমহাদেশের ভূগোল, রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অমূল্য তথ্য রয়েছে।
-
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: হিউয়েন সাংয়ের লেখায় ভারতীয় উপমহাদেশের সপ্তম শতাব্দীর সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়, যা পরবর্তীতে ইতিহাসবিদদের কাছে এক অমূল্য উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
-
মৃত্যু: তিনি খ্রিস্টাব্দ 664 সালে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তার রেখে যাওয়া দলিল ও গবেষণা এখনো ইতিহাসের এক অসাধারণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।
সর্বোপরি, হিউয়েন সাং কেবল একজন ভ্রমণকারীই নন, তিনি ছিলেন দুই প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে জ্ঞানের সেতুবন্ধন। তার ভ্রমণ ভারতের ধর্ম, সংস্কৃতি ও শিক্ষার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে আজও স্মরণীয়।