তৎসম শব্দ চেনার উপায় কি?
তৎসম শব্দ চেনার উপায় জানতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে তৎসম শব্দ কী। মূলত, তৎসম শব্দ হলো সেই শব্দ যা সংস্কৃত ভাষা থেকে হুবহু অপরিবর্তিত অবস্থায় বাংলায় ব্যবহৃত হয়েছে। এসব শব্দের গঠন, উচ্চারণ ও রূপ সাধারণত সংস্কৃতের মতোই থাকে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বহু শব্দই সংস্কৃত উৎস থেকে এসেছে, তবে তৎসম শব্দকে অন্য শব্দ থেকে আলাদা করে চেনার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে সহজভাবে সেসব উপায় তুলে ধরা হলো।
-
সংস্কৃত ধ্বনি অক্ষুণ্ণ থাকে: তৎসম শব্দে সাধারণত সংস্কৃতের অক্ষর ও ধ্বনি অপরিবর্তিতভাবে বজায় থাকে। যেমন— অগ্নি, কর্ম, মন্ত্র, বিদ্যা, গগন ইত্যাদি শব্দে সংস্কৃত উচ্চারণ 그대로 রয়েছে।
-
অল্পপ্রচলিত বা কঠিন ধ্বনি ব্যবহৃত হয়: যেমন ক্ষ, ঋ, হৃ, ৠ প্রভৃতি ধ্বনি সাধারণত তৎসম শব্দে পাওয়া যায়। উদাহরণ— ক্ষত্রিয়, ঋষি, হৃৎপিণ্ড, কৃতজ্ঞ ইত্যাদি।
-
অর্থ প্রায় অপরিবর্তিত থাকে: তৎসম শব্দের অর্থ সংস্কৃতের সঙ্গে একই বা কাছাকাছি থাকে। যেমন বিদ্যা মানে জ্ঞান, কর্ম মানে কাজ— দুই ভাষাতেই একই অর্থে ব্যবহৃত।
-
শব্দে সংযোগ বা রূপান্তর কম: এই ধরনের শব্দে বাংলা ধ্বনিগত পরিবর্তন খুব একটা দেখা যায় না। যেমন অগ্নি শব্দ তদ্ভব রূপে আগুন হয়েছে, কিন্তু তৎসম রূপে অপরিবর্তিতই থাকে।
-
ব্যাকরণগত রূপ সংস্কৃতধর্মী: অনেক তৎসম শব্দের সঙ্গে সংস্কৃতসুলভ প্রত্যয় যুক্ত থাকে যেমন বিদ্যা+ার্থী=বিদ্যার্থী, কর্ম+চারী=কর্মচারী ইত্যাদি।
-
লেখ্য রূপে সংস্কৃত ছোঁয়া থাকে: এসব শব্দে বাংলা উচ্চারণে সহজীকরণ না হয়ে সংস্কৃতের মতো জটিল গঠন থাকে। যেমন গুরুত্ব, সংস্কার, প্রার্থনা ইত্যাদি।
-
উদাহরণে পার্থক্য বোঝা যায়:
-
তৎসম: অগ্নি, কর্ম, মনুষ্য, মিত্র, দেবতা
-
তদ্ভব: আগুন, কাম, মানুষ, মিত্তর, দ্যাতা
এই তুলনা থেকেই বোঝা যায় তৎসম শব্দ কতটা শুদ্ধ রূপে টিকে আছে।
-
-
ধর্মীয় ও সাহিত্যিক ভাষায় ব্যবহৃত: প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ, কাব্য, পুরাণ ইত্যাদিতে তৎসম শব্দের প্রাধান্য বেশি। যেমন ধর্ম, মোক্ষ, পূজা, প্রার্থনা— এসব শব্দ সংস্কৃতের প্রভাব বহন করে।
-
বাংলা ভাষার শুদ্ধরূপ নির্ধারণে সহায়ক: তৎসম শব্দগুলো আধুনিক বাংলায় শুদ্ধ শব্দের উৎস হিসেবে কাজ করে। সরকারি, সাহিত্যিক ও প্রমিত লেখায় এসব শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, তৎসম শব্দ চিনতে হলে দেখতে হবে শব্দটি সংস্কৃতের মূল রূপে আছে কি না, তার ধ্বনি ও অর্থ অপরিবর্তিত কি না এবং তাতে বাংলা ধ্বনিগত পরিবর্তন ঘটেছে কি না। এসব লক্ষণ অনুসারে তৎসম শব্দ চেনা সহজ হয়ে যায়।