ভূগোল শব্দটি কে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছেন?
ভূগোল শব্দের উৎপত্তি ও প্রয়োগ মানব সভ্যতার জ্ঞানচর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পৃথিবী সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকভাবে জানার প্রয়াস থেকেই “ভূগোল” শব্দের উদ্ভব। এটি এমন এক শাস্ত্র যা পৃথিবীর গঠন, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, জলবায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন প্রাচীন গ্রীক জ্ঞানী এরাটোসথেনিস, যিনি ভূগোলবিদ্যার জনক হিসেবে পরিচিত।
ভূগোল শব্দের ব্যবহার ও এরাটোসথেনিসের অবদান সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো—
-
“ভূগোল” শব্দের উৎস: গ্রিক শব্দ Geo (পৃথিবী) এবং Graphy (বর্ণনা বা অঙ্কন) থেকে “Geography” শব্দের উৎপত্তি। এর আক্ষরিক অর্থ “পৃথিবীর বর্ণনা”।
-
প্রথম ব্যবহারকারী: খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে গ্রীক পণ্ডিত এরাটোসথেনিস (Eratosthenes) প্রথমবারের মতো “Geography” শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির প্রধান গ্রন্থাগারিক ছিলেন।
-
জীবনকাল: তাঁর জন্ম ২৭৬ খ্রিস্টপূর্বে সাইরেন (বর্তমান লিবিয়া) অঞ্চলে এবং মৃত্যু ১৯৪ খ্রিস্টপূর্বে ঘটে।
-
মূল অবদান: তিনি প্রথম পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেন এবং অত্যন্ত নির্ভুলভাবে পৃথিবীকে একটি গোলাকার বস্তু হিসেবে বর্ণনা দেন।
-
গ্রন্থ: তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থের নাম “Geographika”, যেখানে তিনি পৃথিবীর গঠন, জলবায়ু, অক্ষাংশ–দ্রাঘিমাংশ এবং মানচিত্র তৈরির পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন।
-
গবেষণার গুরুত্ব: এরাটোসথেনিসের গবেষণা ভবিষ্যতের ভূগোলবিদদের জন্য ভিত্তি তৈরি করে। তাঁর ধারণার উপর ভিত্তি করেই আধুনিক ভূগোলের কাঠামো গড়ে ওঠে।
-
পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়: তিনি সূর্যের ছায়ার কোণ ব্যবহার করে পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন, যা বর্তমান মাপের সঙ্গে প্রায় মিল রয়েছে।
-
অন্য অবদান: তিনি অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের ধারণা প্রবর্তন করেন এবং মানচিত্রে স্থান নির্ধারণের একটি পদ্ধতি দেন, যা পরবর্তীতে নাবিক ও ভূগোলবিদদের জন্য অমূল্য সহায়ক হয়।
-
ভূগোলের শাখা: এরাটোসথেনিসের কাজ থেকেই পরবর্তীতে প্রাকৃতিক ভূগোল, মানব ভূগোল ও অর্থনৈতিক ভূগোলসহ বিভিন্ন শাখার বিকাশ ঘটে।
-
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: তাঁর গবেষণা প্রমাণ করে যে প্রাচীন গ্রীসে বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর চিন্তাধারার কতটা বিকাশ ঘটেছিল, যা আজও মানব জ্ঞানের ইতিহাসে এক অসাধারণ অধ্যায়।
সুতরাং বলা যায়, “ভূগোল” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন প্রখ্যাত গ্রীক জ্ঞানী এরাটোসথেনিস (২৭৬–১৯৪ খ্রিস্টপূর্ব), যিনি পৃথিবীকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করে মানব সভ্যতার জ্ঞানচর্চায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন।