যৌক্তিক সংজ্ঞা কী?
যৌক্তিক সংজ্ঞা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো শব্দ বা পদের অর্থকে নির্দিষ্ট, স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করা হয়। যুক্তিবিদ্যায় এটি এমন এক পদ্ধতি, যা কোনো বিষয়ের প্রকৃত রূপ ও বৈশিষ্ট্য বুঝতে সহায়তা করে। সংজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো বিষয় ‘কী’ এবং ‘কী নয়’ তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা, যাতে বিভ্রান্তি না থাকে এবং বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
নিচে যৌক্তিক সংজ্ঞার বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হলো:
-
অর্থ নির্দিষ্টকরণ: যৌক্তিক সংজ্ঞা শব্দ বা পদের অর্থকে নির্দিষ্ট করে। এতে অস্পষ্টতা বা দ্ব্যর্থতা দূর হয় এবং পাঠক সহজেই বুঝতে পারে যে শব্দটি কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
-
সংক্ষিপ্ততা ও স্পষ্টতা: এ সংজ্ঞা সংক্ষিপ্ত ভাষায় প্রকাশিত হলেও তার মধ্যে বিষয়বস্তুর সারসত্তা সম্পূর্ণভাবে উঠে আসে। অর্থাৎ, কম শব্দে বেশি অর্থ প্রকাশ করাই যৌক্তিক সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্য।
-
ধারণা প্রকাশ: এটি এমনভাবে রচিত হয় যাতে বিষয়বস্তুর ধারণা একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়। বিষয়টির মূল স্বরূপ বা সারমর্মই এখানে প্রধান।
-
জাত্যর্থ বা সাধারণ গুণাবলি: কোনো বস্তুর যৌক্তিক সংজ্ঞা দিতে হলে তার সাধারণ বা আবশ্যিক গুণাবলি (জাত্যর্থ) উল্লেখ করতে হয়। যেমন, মানুষকে “বিবেচনাশীল প্রাণী” বলা হয়—এখানে “প্রাণী” হলো সাধারণ গুণ, আর “বিবেচনাশীল” হলো বিশেষ গুণ।
-
সারসত্তা নির্ধারণ: সংজ্ঞা এমনভাবে তৈরি হয় যাতে সেই বিষয়ের প্রকৃত সত্তা প্রকাশ পায়। অর্থাৎ, যে গুণগুলো বিষয়টিকে অন্যদের থেকে পৃথক করে, সেগুলোর সমন্বয়ে সংজ্ঞা গঠিত হয়।
-
সংজ্ঞার উদ্দেশ্য: যৌক্তিক সংজ্ঞার মূল লক্ষ্য হলো কোনো বিষয়ের সুনির্দিষ্ট ধারণা তৈরি করা, যেন তা সম্পর্কে ভুল ধারণা বা বিভ্রান্তি না থাকে।
-
উদাহরণ: যেমন, “মানুষ হলো বিবেচনাশীল প্রাণী”—এই সংজ্ঞায় মানুষ কী তা স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে; আবার মানুষ কী নয়, তাও পরোক্ষভাবে বোঝানো হয়েছে।
সুতরাং, যৌক্তিক সংজ্ঞা হলো এমন এক যুক্তিনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতি, যা কোনো শব্দ বা পদের প্রকৃত অর্থকে নির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করে। এতে বিষয়টি যেমন সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপিত হয়, তেমনি তার সঠিক তাৎপর্যও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।