বাংলা বর্ণমালায় ফলা কয়টি কি কি?
বাংলা ভাষা ধ্বনিমূল ও বর্ণবিন্যাসে সমৃদ্ধ একটি ভাষা। এই ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো “ফলা”, যা মূলত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন উচ্চারণ বা রূপ তৈরি করে। ফলে উচ্চারণে পরিবর্তন আসে এবং শব্দের বানানেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। বাংলা বর্ণমালায় নির্দিষ্ট কয়েকটি বর্ণ ফলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেগুলোর ব্যবহার ও অবস্থান শব্দগঠনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলা বর্ণমালায় মোট চারটি ফলা রয়েছে, যা নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো—
-
র-ফলা (র্):
এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফলা। কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে ‘র’ যুক্ত হলে ‘র-ফলা’ হয়। যেমন— বর্ষা (ব + র্ + ষা), গর্ভ (গ + র্ + ভ)। এখানে র-ফলা যুক্ত হয়ে উচ্চারণে “র” ধ্বনির ঝোঁক সৃষ্টি করে। -
য-ফলা (য্):
ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ‘য’ যুক্ত হলে এটি য-ফলা হয়। এটি মূলত পূর্ববর্তী বর্ণের সঙ্গে মিশে একধরনের মিলিত ধ্বনি তৈরি করে। যেমন— প্রয়াস (প + র + য্ + আ + স), শ্রদ্ধা (শ + র + য্ + ধা)। য-ফলা সাধারণত “জ” বা “ইয়” ধ্বনির মতো শোনায়। -
ব-ফলা (ব্):
এটি ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উচ্চারণে “ও” বা “ভ” এর মতো ধ্বনি দেয়। যেমন— স্বপ্ন (স + ব্ + প্ন), ত্বক (ত + ব্ + ক)। ব-ফলার উপস্থিতি শব্দে গভীর ও মসৃণ ধ্বনি তৈরি করে। -
ম-ফলা (ম্):
ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ‘ম’ যুক্ত হয়ে ম-ফলা হয়। এটি শব্দের মধ্যে নাসিক্য ধ্বনি সৃষ্টি করে। যেমন— কর্ম (ক + র + ম্), ধর্ম (ধ + র + ম্)। ম-ফলার কারণে শব্দে একধরনের গম্ভীর ও বন্ধ ধ্বনি পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষায় এই চারটি ফলার ব্যবহারই বেশি দেখা যায়। এগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের পর যুক্ত হয়ে যুক্তবর্ণের রূপ নেয় এবং উচ্চারণে সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনে। ফলাগুলোর ব্যবহার জানলে বানান ও উচ্চারণ দুটোই সহজে আয়ত্ত করা যায়।
বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী, ফলা কোনো স্বাধীন বর্ণ নয়; এটি কেবল যুক্ত রূপে ব্যবহৃত হয় এবং শব্দের গঠনকে সমৃদ্ধ করে। এ কারণেই ফলা শেখা ও বুঝা বাংলা ভাষা শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।