সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার পার্থক্য-
A
তৎসম ও অতৎসম শব্দের ব্যবহারে
B
ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদের রূপে
C
শব্দের কথা ও লেখা রূপে
D
বাক্যের সরলতা ও জটিলতায়
উত্তরের বিবরণ
সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার মধ্যে মূল পার্থক্য হলো ক্রিয়াপদ এবং সর্বনাম পদের ভিন্ন রূপের ব্যবহার। সাধু ভাষায় পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়, যেখানে চলিত ভাষায় সংক্ষিপ্তরূপ বেশি প্রচলিত। এছাড়া, সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রাধান্য থাকে, আর চলিত ভাষায় তদ্ভব শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়।
চলিত রীতি
-
চলিত রীতি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, অর্থাৎ এটি পরিবর্তনশীল।
-
এই রীতিতে তদ্ভব শব্দ বেশি দেখা যায় এবং দেশি ও বিদেশি শব্দের ব্যবহারও থাকে।
-
চলিত রীতির দুই রূপ বিদ্যমান — মৌখিক ও লিখিত।
-
এটি সহজবোধ্য ও সংক্ষিপ্ত হওয়ায় সাধারণ কথোপকথন, আলাপ-আলোচনা এবং বক্তৃতায় ব্যবহার উপযোগী।
সাধু ভাষা / সাধু রীতি
-
দাপ্তরিক কাজ, সাহিত্য রচনা, জ্ঞানচর্চা ও আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য সাধু রীতির উদ্ভব ঘটে।
-
উনিশ শতকের শুরুতে সাধু রীতির বিকাশ হয়।
-
সাধু রীতিতে ক্রিয়াপদ দীর্ঘ ও সম্পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়।
-
ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করে গঠিত হয়।
-
চলিত ভাষার তুলনায় সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ অনেক বেশি আকারিক ও পূর্ণরূপে থাকে।
-
অনেক সর্বনামে ‘হ’ বর্ণ যুক্ত থাকে, যেমন: তাহারা, ইহাদের, যাহা, তাহা, উহা, কেহ ইত্যাদি।
সংক্ষেপে
সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য মূলত ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদের রূপভেদের ওপর নির্ভরশীল। সাধু ভাষা পূর্ণরূপ ও তৎসম শব্দের সমৃদ্ধ, যেখানে চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল, সংক্ষিপ্ত এবং তদ্ভব শব্দভাণ্ডারে সমৃদ্ধ।
উৎস:
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি, নবম-দশম শ্রেণি (সংস্করণ-২০২১)
ভাষা-শিক্ষা, ড. হায়াৎ মামুদ
0
Updated: 5 months ago
সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য
Created: 1 week ago
A
শব্দগঠনের নিয়মে
B
ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদের রূপে
C
উচ্চারণের ভিন্নতায়
D
বাক্যগঠনের পদ্ধতিতে
সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য: বাংলা ভাষার দুটি রূপ—সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা। দুটি রূপের মধ্যে যেমন প্রকৃতিগত সাদৃশ্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্যও রয়েছে। নিচে এ দুয়ের পার্থক্য আলোচনা করা হলো।
| সাধু ভাষা | চলিত ভাষা |
| ১। যে ভাষায় সাধারণত সাহিত্য রচিত হয় এবং যা মার্জিত ও সর্বজনস্বীকৃত, তাই সাধু ভাষা। | ১। শিক্ষিত লোক সাধারণ কথাবার্তায় যে ভাষা ব্যবহার করে থাকে, তা - ই চলিত ভাষা। |
| ২। সাধু ভাষা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত নিয়মের অনুসারী। | ২। চলিত ভাষার সুনির্ধারিত ব্যাকরণ আজও তৈরি হয়নি। |
| ৩। সাধু ভাষা গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী। | ৩। চলিত ভাষা সহজ ও স্বাভাবিক। এ ভাষা মানুষের মনোভাব প্রকাশে উপযোগী। |
| ৪। সাধু ভাষার কাঠামো সাধারণত অপরিবর্তনীয়। | ৪। চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল। |
| ৫। সাধু ভাষা কৃত্রিম। | ৫। চলিত ভাষা কৃত্রিমতা - বর্জিত। |
| ৬। সাধু ভাষা নাটকের সংলাপ, আলাপ - আলোচনা ও বক্তৃতায় তেমন উপযোগী নয়। | ৬। চলিত ভাষা নাটকের সংলাপ, আলাপ - আলোচনা ও বক্তৃতায় বেশ উপযোগী। |
| ৭। সাধু ভাষায় ক্রিয়া ও সর্বনাম পদগুলো সাধারণত দীর্ঘ হয়ে থাকে। যেমন—খাইতেছি, তাহারা ইত্যাদি। | ৭। চলিত ভাষায় ক্রিয়া এবং সর্বনাম পদগুলো সংক্ষিপ্ত। যেমন—খাচ্ছি, তারা ইত্যাদি। |
| ৮। এ ভাষা প্রাচীন। | ৮। এটি আধুনিক। |
| ৯। সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ বেশি। | ৯। চলিত ভাষায় অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রয়োগ বেশি। |
| ১০। সাধু ভাষায় অপনিহিত ও অভিশ্রুতির ব্যবহার নেই। | ১০। চলিত ভাষায় এদের প্রয়োগ লক্ষণীয়। |
বাংলা ভাষার বিবর্তনের পথে সাধুরীতি থেকে চলিতরীতিতে রূপান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষাগত পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভাষাকে সহজ, সাবলীল ও দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা। সাধুরীতি ছিল জটিল, সংস্কৃতনির্ভর এবং কৃত্রিমভাবে গঠিত; অন্যদিকে চলিতরীতি হলো সহজ, প্রাণবন্ত ও সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষার নিকটবর্তী রূপ। সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও প্রশাসনিক কাজে চলিতরীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এটি এখন আধুনিক বাংলা ভাষার মানরূপ হিসেবে স্বীকৃত। তালিকা আকারে সাধুরীতি থেকে চলিতরীতিতে পরিবর্তনের প্রধান নিয়মগুলো নিম্নরূপঃ
• শব্দরূপের সরলীকরণ:
সাধুরীতিতে ক্রিয়া ও শব্দরূপ ছিল দীর্ঘ ও জটিল। চলিতরীতিতে এগুলো সংক্ষিপ্ত ও সহজ করা হয়েছে।
যেমন –
“করিয়াছি” → “করেছি”,
“বলিয়াছিলেন” → “বলেছিলেন”,
“যাইতেছি” → “যাচ্ছি”।
এই পরিবর্তন ভাষাকে বলার ও লেখার উভয় ক্ষেত্রেই সাবলীল করেছে।
• বাক্যগঠনের সংক্ষিপ্তকরণ:
সাধুরীতির বাক্যগঠন ছিল গম্ভীর ও লম্বা প্রকৃতির। চলিতরীতিতে বাক্য গঠন সহজ ও কথোপকথনের ধাঁচে রূপ পেয়েছে।
যেমন –
“তিনি বিদ্যালয়ে গিয়াছিলেন” → “তিনি স্কুলে গিয়েছিলেন।”
এভাবে শব্দসংখ্যা কমে গিয়েছে এবং ভাব প্রকাশ হয়েছে সরলভাবে।
• কথ্য রীতির প্রভাব:
চলিতরীতি গড়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষার ওপর ভিত্তি করে। তাই এতে স্থানীয় উচ্চারণ ও কথ্য ধারা প্রতিফলিত হয়েছে।
যেমন – “যাইতেছি” না বলে “যাচ্ছি”, “খাইতেছি” না বলে “খাচ্ছি”।
• সংস্কৃত শব্দের পরিবর্তে দেশীয় শব্দের ব্যবহার:
সাধুরীতিতে সংস্কৃত শব্দ বেশি ব্যবহৃত হতো, কিন্তু চলিতরীতিতে দেশীয় ও প্রাকৃত শব্দের প্রাধান্য বেড়েছে।
যেমন –
“অগ্নি” → “আগুন”,
“পুষ্প” → “ফুল”,
“গৃহ” → “বাড়ি”।
• সর্বনাম ও অব্যয়ের পরিবর্তন:
সাধুরীতিতে সর্বনাম ও অব্যয়ের রূপ ছিল আনুষ্ঠানিক। চলিতরীতিতে সেগুলো সহজ ও প্রচলিত রূপে ব্যবহৃত হয়।
যেমন –
“তোমরা সকলেই” → “তোরা সবাই”,
“যাহা” → “যা”,
“তাহা” → “তা”।
• উচ্চারণভিত্তিক পরিবর্তন:
চলিতরীতি উচ্চারণ অনুযায়ী শব্দের রূপ দেয়। তাই বানানেও পরিবর্তন এসেছে।
যেমন –
“করিয়াছি” → “করেছি”,
“খাইতেছি” → “খাচ্ছি”।
• লেখ্য ও কথ্য ভাষার মিল:
সাধুরীতিতে কথ্য ভাষা ও লেখ্য ভাষার পার্থক্য ছিল স্পষ্ট। চলিতরীতি সেই ব্যবধান দূর করেছে, ফলে লেখ্য ভাষাও এখন অনেকটা কথার মতো শোনায়।
• সময় ও সমাজের প্রভাব:
উনবিংশ শতাব্দীতে সমাজে শিক্ষার প্রসার, সংবাদপত্রের উত্থান ও আধুনিক সাহিত্যের বিকাশের ফলে সাধারণ মানুষের সহজ ভাষার প্রয়োজন দেখা দেয়। এই সামাজিক প্রেক্ষাপটে চলিতরীতির প্রতিষ্ঠা দ্রুত ঘটে।
• সাহিত্যিকদের ভূমিকা:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকরা সাধুরীতির পরিবর্তে চলিতরীতিকে সাহিত্যভাষা হিসেবে গ্রহণ করেন। এর ফলে এটি বাংলা ভাষার প্রধান রূপে পরিণত হয়।
সবশেষে বলা যায়, সাধুরীতি থেকে চলিতরীতিতে পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভাষাকে সাধারণ মানুষের জীবনের কাছাকাছি আনা। বাক্যরীতি ও শব্দরূপের সরলীকরণের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আজ আরও প্রাণবন্ত, স্বাভাবিক ও পাঠকবান্ধব হয়ে উঠেছে।
0
Updated: 1 week ago
কোনটি সাধু ভাষার শব্দ?
Created: 1 month ago
A
দন্ত
B
বাঘ
C
কান
D
হাতি
কিছু বিশেষ্যপদের সাধু ও চলিত রূপের পার্থক্য নিম্নরূপ:
-
অগ্নি → আগুন
-
কর্ণ → কান
-
চন্দ্র → চাঁদ
-
দন্ত → দাঁত
-
পক্ষী → পাখি
-
ব্যাঘ্র → বাঘ
-
মৎস্য → মাছ
-
হস্তী → হাতি
0
Updated: 1 month ago
চলিত ভাষার শব্দ কোনটি?
Created: 2 months ago
A
জুতা
B
মাথা
C
তুলা
D
বন্য
চলিত ও সাধু ভাষার কিছু শব্দরূপ
-
চলিত ভাষার শব্দ: মাথা
-
সাধু ও চলিত ভাষায় বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের রূপ:
-
আসিয়া → এসে
-
মস্তক → মাথা
-
জুতা → জুতো
-
তুলা → তুলো
-
শুষ্ক/শুকনা → শুকনো
-
বন্য → বুনো
-
উৎস: বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি (২০১৯ সংস্করণ)
0
Updated: 2 months ago