বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের জন্য যোদ্ধাদের যে সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক উপাধি প্রদান করা হয় তা হলো ‘বীরশ্রেষ্ঠ’। এই উপাধি দেওয়া হয় সেইসব বীর সন্তানদের, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মোট ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা এই সম্মান পেয়েছেন, যা তাদের আত্মত্যাগকে জাতির শ্রদ্ধার প্রতীক করে তুলেছে।
• বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল – তিনি ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন। ছিলেন ইপিআর (East Pakistan Rifles)-এর সদস্য।
• বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান – মৌলভীবাজার জেলার শমসনগরে যুদ্ধের সময় তিনি শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তার বীরত্ব দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়।
• বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন – তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য ছিলেন। যুদ্ধের সময় তার জাহাজে আক্রমণ হলে তিনি প্রাণ হারান, কিন্তু দেশের জন্য সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন।
• বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান – তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি শত্রু বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে আসার চেষ্টা করেন এবং জীবন উৎসর্গ করেন।
• বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ – যশোর জেলার মহম্মদপুরের এই সৈনিক মুক্তিযুদ্ধের সময় শত্রুদের মোকাবিলা করতে গিয়ে বীরের মতো শহীদ হন।
• বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ – রাঙামাটির বরকল এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হন।
• বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর – তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর সীমান্তে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন।
এই সাতজন শহীদের প্রত্যেকেই দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাদের নামেই বাংলাদেশে বিভিন্ন বিদ্যালয়, সড়ক, বিমান ঘাঁটি, জাহাজ ও স্মৃতিস্তম্ভের নামকরণ করা হয়েছে।
• ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি ১৯৭৩ সালে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়।
• এই উপাধির পাশাপাশি আরও তিনটি বীরত্বসূচক উপাধি রয়েছে— বীর উত্তম, বীর বিক্রম, এবং বীর প্রতীক।
• এই শ্রেণিবিন্যাস করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা ও অবদানের মাত্রা অনুযায়ী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এই সাতজন বীরের নাম উচ্চারণ মানেই এক অনন্য গর্ব ও শ্রদ্ধা। তাদের ত্যাগেই অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ, আর তাই বীরশ্রেষ্ঠরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে চির অমর।