জসীম উদ্দীন ছিলেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অমর নাম—একজন কবি, শিক্ষাবিদ, সংগীতসংগ্রাহক এবং পল্লিজীবনের অকৃত্রিম রূপকার। তাঁর লেখায় বাংলার গ্রামীণ মানুষের হাসি-কান্না, প্রেম, সংগ্রাম, লোকসংগীত ও মাটির ঘ্রাণ জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তিনি ছিলেন এমন এক কবি, যিনি শহুরে কৃত্রিমতার বাইরে থেকে পল্লিজীবনের সৌন্দর্য ও মানবিকতাকে কাব্যে রূপ দিয়েছেন।
-
জন্ম: ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি, ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে।
-
তিনি ছিলেন কবি ও শিক্ষাবিদ।
-
কর্মজীবনের সূচনা হয় পল্লিসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে, যার মাধ্যমে তিনি লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হন।
-
ছাত্রজীবনেই তাঁর কবিত্ব প্রতিভার প্রকাশ ঘটে, বিশেষ করে কলেজজীবনে রচিত ‘কবর’ কবিতা তাঁকে এনে দেয় বিপুল খ্যাতি।
-
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই এই কবিতাটি বাংলা প্রবেশিকা সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়—যা ছাত্রজীবনেই তাঁর অসামান্য সাহিত্যিক সাফল্যের নিদর্শন।
-
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে, যা বাংলা পল্লীকাব্যের নতুন ধারা সূচনা করে।
-
তিনি লোকসংগীত সংগ্রহ ও সম্পাদনায়ও ছিলেন সক্রিয়—‘জারীগান’ (১৯৬৮) ও ‘মুর্শীদা গান’ (১৯৭৭) তাঁর সম্পাদিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন।
-
বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘পল্লীকবি’ হিসেবে সুপরিচিত, কারণ তাঁর কবিতায় বাংলার গ্রাম, মানুষ ও প্রকৃতি প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে।
রচিত উপন্যাস:
রচিত কাব্যগ্রন্থ:
রচিত নাটক:
-
পদ্মাপাড়
-
বেদের মেয়ে
-
পল্লীবধূ
-
মধুমালা
-
গ্রামের মায়া
শিশুতোষ গ্রন্থ:
-
এক পয়সার বাঁশী
-
হাসু
-
ডালিম কুমার
ভ্রমণকাহিনি:
-
চলে মুসাফির
-
হলদে পরীর দেশ
-
যে দেশে মানুষ বড়
জসীম উদ্দীনের সাহিত্যকর্মে লোকজ সংস্কৃতি ও মানবিক বোধের অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। তাঁর কবিতায় পল্লীজীবনের প্রেম, দুঃখ, প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিকতা মিলে এক নির্মল মানবতাবাদী কাব্যজগৎ সৃষ্টি করেছে।
তিনি শুধু কবি নন, ছিলেন বাংলা লোকসাহিত্য ও সংগীত ঐতিহ্যের ধারক ও রক্ষক—তাঁর রচনাবলি আজও বাঙালির মাটির গন্ধ, প্রাণের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে আছে।