বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচীনতম মুসলমান কবি-
A
শাহ মুহম্মদ সগীর
B
সাবিরিদ খান
C
শেখ ফয়জুল্লাহ
D
মুহাম্মদ কবীর
উত্তরের বিবরণ
শাহ মুহম্মদ সগীর
-
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের প্রথম মুসলিম কবি হিসেবে শাহ মুহম্মদ সগীর সুপরিচিত।
-
তিনি পঞ্চদশ শতকের কবি ছিলেন।
-
গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের শাসনামলে তিনি সাহিত্যচর্চা করেন।
-
বাংলা সাহিত্যে অনুবাদ কাব্য এবং রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ধারার পথিকৃৎ ছিলেন তিনি।
-
তাঁর শ্রেষ্ঠ অনুবাদ রচনা “ইউসুফ-জোলেখা”।
🔹 ইউসুফ-জোলেখা কাব্য:
-
“ইউসুফ-জোলেখা” একটি রোমান্টিক কাহিনিনির্ভর কাব্য, যা শাহ মুহম্মদ সগীর রচনা করেন।
-
এই কাব্য রচনার সময়কাল হিসেবে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
-
ইউসুফ ও জোলেখার প্রেমকাহিনী বাইবেল ও কোরআনে বর্ণিত। ইরানী কবি ফেরদৌসিও এ বিষয়ে কাব্য রচনা করেছেন।
-
তবে শাহ মুহম্মদ সগীর মূলত কোরআন ও ফেরদৌসির কাব্য থেকেই কাহিনির উপাদান সংগ্রহ করেন; বাইবেলের প্রভাব এখানে অনুপস্থিত।
-
তাঁর রচনাটি বাংলা সাহিত্যে এই বিষয়কে প্রথমবার উপস্থাপন করে এবং পরবর্তী অনেক কবির অনুপ্রেরণার উৎস হয়। যেমন— আব্দুল হাকিম ও শাহ মুহম্মদ গরীবুল্লাহ পরবর্তীতে একই নামে কাব্য রচনা করেন, কিন্তু পথিকৃৎ ছিলেন শাহ মুহম্মদ সগীরই।
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর/বাংলাপিডিয়া

0
Updated: 3 months ago
'কবর' নাটক কার রচনা?
Created: 2 months ago
A
শহীদুল্লাহ কায়সার
B
জহির রায়হান
C
মুনীর চৌধুরী
D
সত্যেন সেন
বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিকী নাটক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’। এটি মূলত রচিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল পটভূমিতে।
লেখক নিজেই তখন কারাগারে বন্দি। সেই বন্দিদশায়, ১৯৫৩ সালে কারাগারে থাকা রাজবন্দিদের সহায়তায় প্রথম অভিনীত হয় এই নাটকটি। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
কাহিনির সারসংক্ষেপ
Irwin Shaw-এর বিখ্যাত নাটক "Bury The Dead" (১৯৩৬) অবলম্বনে দেশীয় প্রেক্ষাপটে ‘কবর’ নাটকটি নির্মিত। এতে দেখা যায়, ভাষা আন্দোলনের এক মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহতদের মৃতদেহ শহরের বাইরে গভীর রাতে গোপনে কবরস্থ করতে আনা হয়। এ কাজে নেতৃত্ব দেয় এক পুলিশ ইন্সপেক্টর হাফিজ এবং তার সহযোগী এক নেতা, যার নাম নাটকে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে মিছিলে নিহত এসব আন্দোলনকারীর মৃতদেহ এতটাই বিকৃত যে, ধর্মীয় প্রথা মেনে দাফন না করে তারা একত্রে মাটি চাপা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায় গোর খোদক এবং এক পাগল, যিনি নিজেকে মুর্দা ফকির হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, এ লাশগুলো শহীদের—তাদের কবর দেওয়া যাবে না। নাটকের এক মোক্ষম মুহূর্তে দেখা যায়, মৃতদেহগুলো জীবন্ত হয়ে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেয়: “আমরা কবরে যাব না।” এই দৃশ্য দেখে ইন্সপেক্টর ও নেতা দুজনেই আতঙ্কে পালিয়ে যায়।
নাট্যকার মুনীর চৌধুরী পরিচিতি
মুনীর চৌধুরী ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক ও বলিষ্ঠ বক্তা। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর, মানিকগঞ্জ শহরে। প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী মুনীর চৌধুরী বামপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতি আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
তাঁর মৌলিক নাটকসমূহ:
-
রক্তাক্ত প্রান্তর
-
চিঠি
-
কবর
-
দণ্ডকারণ্য
অনুবাদ নাটকসমূহ:
-
কেউ কিছু বলতে পারে না
-
রূপার কৌটা
-
মুখরা রমণী বশীকরণ
তথ্যসূত্র:
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা – ড. সৌমিত্র শেখর
বাংলাপিডিয়া

0
Updated: 2 months ago
কবি গানের প্রথম কবি কে?
Created: 4 weeks ago
A
গোঁজলা পুট [গুই]
B
হরু ঠাকুর
C
ভবানী ঘোষ
D
নিতাই বৈরাগী
গোঁজলা গুঁই
-
গোঁজলা গুঁই ছিলেন ১৮শ শতকের একজন প্রখ্যাত কবিওয়ালা।
-
আঠারো শতকে বাংলায় এক ধরনের সঙ্গীতধর্মী সাহিত্য তৈরি হয়েছিল, যা কবিগান নামে পরিচিত। তখন ‘কবিওয়ালা’ নামের পেশাদার গায়করা এসব গান পরিবেশন করতেন। সাধারণ মানুষ থেকে অভিজাত শ্রেণি—সবারই এই গান শোনার আনন্দ হতো। গোঁজলা গুঁইকে কবিগানের প্রথম গুরু হিসেবে ধরা হয়।
-
তিনি পেশাদার কবিদল তৈরি করে ধনিকদের বাড়িতে অর্থের বিনিময়ে গান গাইতেন।
-
গোঁজলা গুঁই টপ্পা রীতিতে গান রচনা করতেন। উদাহরণ:
-
‘এসো এসো চাঁদ বদনি / এ রসে নিরস করো না ধনি’
-
‘প্রাণ, তোরে হেরিয়ে দুখো দূরে গেলো মোর’
এই গানগুলো নায়ক-নায়িকার কথার আকারে লেখা হয়েছিল, যা টপ্পার বৈশিষ্ট্য বহন করে।
-
-
তাঁর শিষ্যরা—লালু, নন্দলাল, কেষ্টা মুচি, রঘুনাথ দাস ও রামজী—কবিগানে নতুন মাত্রা যোগ করে এই ধারাকে আরও প্রসারিত ও জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।
উৎস: বাংলাপিডিয়া

0
Updated: 4 weeks ago
বাংলা সাহিত্যের আদি কবি কে?
Created: 1 month ago
A
কাহ্নপা
B
চেণ্ডনপা
C
লুইপা
D
ভূসুকুপা
লুইপা: বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি
-
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম কাব্যগ্রন্থ চর্যাপদ-এর প্রথম কবিতা লুইপা রচনা করেন।
তাই তাকেই বাংলা সাহিত্যের আদি কবি বলা হয়। -
লুইপা ছিলেন একজন প্রবীণ বৌদ্ধ সাধক ও চর্যাপদের একজন কবি।
-
ভাষাবিদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন, লুইপা সম্ভবত ৭৩০ থেকে ৮১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জীবিত ছিলেন।
-
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, লুইপার জন্ম রাঢ় অঞ্চলে (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কিছু অংশ)।
-
তিনি চর্যাপদের ১ম ও ২৯তম পদ রচনা করেছেন।
-
তাঁর রচিত প্রথম চর্যার পঙক্তি দুটি হলো:
"কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীএ পৈঠা কাল।।"
চর্যাপদ: বাংলা সাহিত্যের সূচনা
-
চর্যাপদ হলো বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থ।
এটি বাংলা ভাষার প্রথম কবিতা বা গানের সংকলন হিসেবে ধরা হয়। -
এটি বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন।
-
১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের একটি লাইব্রেরি থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।
-
সুকুমার সেন তাঁর 'বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস' গ্রন্থে চর্যাপদের ২৪ জন কবির নাম উল্লেখ করেছেন।
-
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর Buddhist Mystic Songs গ্রন্থে ২৩ জন কবির নাম দেন।
-
চর্যাপদের সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছেন কাহ্নপা — তিনি মোট ১৩টি পদ রচনা করেন, যার মধ্যে ১২টি পাওয়া গেছে।
-
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ লিখেছেন ভুসুকুপা — তিনি ৮টি পদ রচনা করেন।
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (ড. সৌমিত্র শেখর), বাংলাপিডিয়া।

0
Updated: 1 month ago