‘কবর’ নাটকটির রচয়িতা কে?
A
সৈয়দ শামসুল হক
B
মুনীর চৌধুরী
C
শওকত ওসমান
D
সেলিম আল দীন
উত্তরের বিবরণ
‘কবর’ বাংলা নাট্যসাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি, যেখানে ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও ত্যাগ অত্যন্ত শক্তভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। নাটকটি মূলত শহীদদের স্মরণ এবং অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে রচিত। এর রচয়িতা মুনীর চৌধুরী, যিনি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং একজন প্রগতিশীল সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। এই তথ্যের ভিত্তিতে সঠিক উত্তর স্পষ্টভাবেই নির্ধারিত হয়।
তালিকাবদ্ধ প্রয়োজনীয় তথ্য:
-
মুনীর চৌধুরী (১৯২৫–১৯৭১) ছিলেন একাধারে নাট্যকার, ভাষা কর্মী, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী।
-
‘কবর’ লেখা হয় ১৯৫৩ সালে, ভাষা আন্দোলনের ঘটনার পরপরই।
-
নাটকটি একটি প্রতীকি নাটক, যেখানে কবরে শায়িত শহীদদের সঙ্গে জীবিত চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে অবিচার, শোষণ ও প্রতিবাদের ধারণা তুলে ধরা হয়েছে।
-
এর মূল বার্তা হলো অধিকার আদায়ের সংগ্রাম কখনো থেমে থাকে না।
-
নাটকটি বাংলাদেশের নাট্যধারায় অগ্রগামী ও রাজনৈতিক নাটকের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত হয়।
-
লেখকের শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে শহীদ হওয়া (১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) তাঁর সাহিত্যকে আরও মূল্যবান করে তোলে।
0
Updated: 13 hours ago
ভাষা-আন্দোলন ভিত্তিক ‘কবর’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
Created: 2 weeks ago
A
জসীম উদ্দীন
B
আহমদ ছফা
C
শওকত ওসমান
D
মুনীর চৌধুরী
ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত ‘কবর’ বাংলাদেশের নাট্যসাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি। এটি লিখেছিলেন মুনীর চৌধুরী, যিনি একাধারে ছিলেন সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে এই নাটকটি বাঙালির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। নিচে এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো।
• ‘কবর’ নাটকটি রচিত হয় ১৯৫৩ সালে, অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের ঠিক এক বছর পর। এতে মুনীর চৌধুরী সেই আন্দোলনের বেদনাকে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করেছেন। নাটকটি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি না হলেও এর প্রতিটি চরিত্র ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি বহন করে।
• এই নাটকটি একটি প্রতীকধর্মী একাঙ্ক নাটক, যেখানে জীবিত ও মৃতের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে ভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের চেতনা ফুটে উঠেছে। নাটকের মূল প্রতীক ‘কবর’—যা শুধু মৃতদের আশ্রয় নয়, বরং জাতির পুনর্জাগরণের চিহ্ন।
• মুনীর চৌধুরী (জন্ম: ১৯২৫, মৃত্যু: ১৯৭১) ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাট্যকার। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দি হয়ে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হন। তাই তিনি শুধু লেখক নন, এক মহান শহীদও।
• ‘কবর’ ছাড়াও তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাটক হলো ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’, ‘দণ্ডকারণ্য’, ‘চিঠি’ ও ‘মির্জা গালিব’। এই নাটকগুলোতেও তিনি সমাজের বাস্তবতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্নকে গভীরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
• নাটকের প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মা, ছেলে ও কবরবাসী, যারা মৃত্যুর মধ্য দিয়েও জীবনের বার্তা দেন। এটি প্রতীকীভাবে বোঝায়, ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে, তারা মৃত নয়—তাদের চেতনা বাঙালির অন্তরে চিরজাগরূক।
• নাটকটির ভাষা সহজ, সংলাপগুলো গভীর ও আবেগময়। এতে মুনীর চৌধুরী সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর হিসেবে বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষ ঘটিয়েছেন।
• ভাষা আন্দোলনভিত্তিক নাটক হিসেবে ‘কবর’ বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাসে প্রথম সফল প্রতীকী নাটক। এটি পরবর্তী নাট্যচর্চায় গভীর প্রভাব ফেলে এবং স্বাধীনতাবাদী চেতনার সাহিত্যধারাকে অনুপ্রাণিত করে।
• এই নাটকটি আজও বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্য এবং ভাষা শহীদদের স্মরণে নিয়মিতভাবে মঞ্চস্থ হয়।
সুতরাং, ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক আবহে রচিত ‘কবর’ নাটকের রচয়িতা মুনীর চৌধুরী—যিনি নিজের জীবন দিয়েও প্রমাণ করেছিলেন বাঙালির ভাষা ও স্বাধীনতার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।
0
Updated: 2 weeks ago
'ষোল নয়, আমার মাতৃভাষার ষোলশত রূপ'- কে বলেছেন?
Created: 3 weeks ago
A
ড. নীলিমা ইব্রাহিম
B
ড. আহম্মদ শরীফ
C
মুনীর চৌধুরী
D
ড. মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম
উ. মুনীর চৌধুরী
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে মুনীর চৌধুরী ছিলেন গভীর চিন্তাশীল এক মনীষী। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "ষোল নয়, আমার মাতৃভাষার ষোলশত রূপ" বাংলা ভাষার বহুমাত্রিকতা ও বৈচিত্র্যের প্রতীক। তিনি এই উক্তির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাংলা ভাষা কেবল একটি নির্দিষ্ট রূপে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর রয়েছে অসংখ্য ধ্বনি, উপভাষা ও প্রকাশভঙ্গি।
এই উক্তির মূল বক্তব্য হলো, মাতৃভাষা কোনো যান্ত্রিক বা একঘেয়ে মাধ্যম নয়। এটি মানুষের অনুভূতি, চিন্তা, সংস্কৃতি ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত ও প্রসারিত হয়। মুনীর চৌধুরীর মতে, বাংলা ভাষার সৌন্দর্য এর বৈচিত্র্যের মধ্যেই নিহিত।
ভাষার এই বৈচিত্র্য প্রকাশ পায় শব্দের উচ্চারণ, শব্দভাণ্ডার, বাক্যগঠন এবং আঞ্চলিক ব্যবহারে। গ্রামীণ ও শহুরে ভাষার পার্থক্য, সাহিত্যিক ও কথ্য ভাষার ভিন্নতা—সবই এই ভাষার প্রাণচাঞ্চল্যের প্রমাণ।
তিনি আরও মনে করতেন, ভাষার শক্তি তখনই প্রকৃত অর্থে প্রকাশ পায় যখন তা সব শ্রেণি ও অঞ্চলের মানুষের মুখে জীবন্ত থাকে। তাই তিনি বাংলা ভাষার উপভাষা, আঞ্চলিক রূপ এবং লোকজ উচ্চারণের মূল্যায়ন করেছেন। এই ধারণা বাংলা ভাষাকে কৃত্রিম সীমারেখা থেকে মুক্ত করে একটি বহুমাত্রিক মানবিক প্রকাশের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
মুনীর চৌধুরীর ভাষা-ভাবনায় দেখা যায় যে, তিনি বাংলা ভাষাকে কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মতে, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা মানে কেবল তার সাহিত্য পড়া নয়, বরং তার প্রতিটি রূপ ও প্রকাশকে শ্রদ্ধা করা।
এই দৃষ্টিভঙ্গি ভাষার একরূপতার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। তিনি দেখিয়েছেন যে, একটি ভাষার শক্তি তার শব্দভাণ্ডারের আকারে নয়, বরং তার পরিবর্তন ও অভিযোজনক্ষমতায়। এভাবেই বাংলা ভাষা বিভিন্ন যুগে, অঞ্চলে এবং মানুষের অভিজ্ঞতায় নতুন নতুন রূপ ধারণ করেছে—যা একে জীবন্ত ও চিরন্তন করে তুলেছে।
অতএব, মুনীর চৌধুরীর উক্তিটি বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য, গতিশীলতা ও সার্বজনীনতার এক অনন্য ঘোষণা, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি ভাষার সৌন্দর্য তার বহুরূপীতায়, একরূপতায় নয়।
0
Updated: 3 weeks ago
মুনীর চৌধুরী রচিত "কবর" কোন ধরনের রচনা?
Created: 1 month ago
A
নাটক
B
প্রবন্ধ
C
উপন্যাস
D
কবিতা
‘কবর’ হলো অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী রচিত একটি ঐতিহাসিক ও প্রতীকধর্মী নাটক, যা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত। এটি কেবল বাংলা নাটকের ইতিহাসেই নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত।
-
‘কবর’ নাটকটি ১৯৫৩ সালে রচিত হয়, যখন মুনীর চৌধুরী রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে জেলে অবস্থান করছিলেন।
-
বামপন্থী চিন্তাবিদ রণেশ দাশগুপ্তের অনুরোধে, ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন উপলক্ষে এই নাটকটি লেখা হয়।
-
নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় ১৯৫৩ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, যেখানে বন্দিরাই অভিনেতা ছিলেন।
-
১৯৬৬ সালে নাটকটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
-
এটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম প্রতিবাদী রাজনৈতিক নাটক, যা ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগ, শোক ও পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
নাটকের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য:
-
পটভূমি: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, যা বাঙালির ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে।
-
নাটকটির মূল প্রতীক হলো “কবর”—যা মৃত্যুর মধ্য দিয়েই নতুন জীবনের, নতুন চেতনার জন্মের ইঙ্গিত দেয়।
-
এতে বাঙালি জাতির সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং স্বাধীনতা চেতনার নবজাগরণ ফুটে উঠেছে।
-
নাটকটি একদিকে রাজনৈতিক প্রতিবাদের ভাষা, অন্যদিকে আত্মত্যাগের মহিমার কাব্যময় উপস্থাপন।
মুনীর চৌধুরী (১৯২৫–১৯৭১):
-
জন্ম: ২৭ নভেম্বর ১৯২৫, মানিকগঞ্জ শহরে।
-
ছিলেন শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক ও বাগ্মী।
-
ছাত্রজীবন থেকেই বামপন্থী রাজনীতি ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ, কমিউনিস্ট পার্টি এবং ভাষা আন্দোলন-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।
-
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঠিক আগে, তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসরদের হাতে অপহৃত ও নিহত হন, এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।
উল্লেখযোগ্য নাটকসমূহ:
-
কবর
-
রক্তাক্ত প্রান্তর
-
চিঠি
-
দণ্ডকারণ্য
-
পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য
-
কেউ কিছু বলতে পারে না
-
রূপার কৌটা
-
মুখরা রমণী বশীকরণ
প্রবন্ধগ্রন্থ:
-
মীর মানস
-
তুলনামূলক সমালোচনা
-
বাংলা গদ্যরীতি
‘কবর’ শুধু একটি নাটক নয়—এটি ভাষা আন্দোলনের চেতনা, প্রতিবাদ ও আত্মত্যাগের কাব্যিক প্রতীক, যা দেখায় কীভাবে মৃত্যু থেকেও নতুন জীবন ও জাতিসত্তার পুনর্জন্ম সম্ভব।
0
Updated: 1 month ago