বিশ্ব ইতিহাসে মিশরীয় সভ্যতা মানবজাতির সবচেয়ে প্রাচীন ও সংগঠিত সভ্যতা হিসেবে পরিচিত। এটি নীলনদের তীরে গড়ে উঠেছিল, যা শুধু আফ্রিকার নয়, সমগ্র বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এই সভ্যতার সূচনা হয়েছিল প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে এবং টিকে ছিল প্রায় তিন হাজার বছর। তাদের সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্ম, শিল্পকলা ও বিজ্ঞান মানব সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
মিশরীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্বের কিছু মূল দিক হলো
-
অবস্থান: মিশরীয় সভ্যতা আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব অংশে নীলনদের উর্বর তীরে বিকাশ লাভ করে। নীলনদের নিয়মিত বন্যা কৃষিকাজে সহায়ক ভূমিকা রাখত, যার ফলে কৃষি উৎপাদন ছিল এই সভ্যতার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি।
-
রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থা: মিশরীয়রা রাজাকে ‘ফারাও’ বলে সম্বোধন করত। ফারাওরা দেবতা ও রাজা উভয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতেন। তাদের শাসনব্যবস্থা ছিল একাধিপত্যমূলক, যেখানে রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি ধরা হতো।
-
ধর্ম ও বিশ্বাস: মিশরীয়রা বহু দেব-দেবীর উপাসনা করত। তারা বিশ্বাস করত মৃত্যুর পরও জীবন আছে। এজন্য তারা মৃতদের সংরক্ষণে ‘মমি’ প্রথা চালু করেছিল। মৃত্যুর পর আত্মা যেন পুনর্জীবিত হতে পারে—এই ধারণা থেকেই পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল।
-
পিরামিড ও স্থাপত্য: মিশরীয়দের সর্বাধিক চমকপ্রদ অবদান হলো পিরামিড, বিশেষত গিজার বৃহৎ পিরামিড যা আজও বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। এটি তাদের উন্নত স্থাপত্য জ্ঞান ও শ্রমনিষ্ঠতার প্রমাণ বহন করে।
-
লিপি ও জ্ঞান: মিশরীয়রা ‘হায়ারোগ্লিফিক’ নামের চিত্রলিপি ব্যবহার করত। তারা চিকিৎসা, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে উন্নত জ্ঞান অর্জন করেছিল। রোজেটা পাথরের মাধ্যমে তাদের ভাষা পরবর্তীকালে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।
-
সংস্কৃতি ও সমাজ: মিশরীয় সমাজ ছিল স্তরভিত্তিক—ফারাও, পুরোহিত, সামরিক কর্মকর্তা, কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য ছিল। তবে তারা শিল্প, সংগীত ও ধর্মীয় উৎসবে একসাথে অংশগ্রহণ করত।
অন্যদিকে গ্রিক সভ্যতা (খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০–১৪৬), চৈনিক সভ্যতা (খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে), এবং পারস্য সভ্যতা (খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০ থেকে) মিশরের পরবর্তী সময়ের সভ্যতা। এদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ হলেও সময়ের হিসেবে মিশরীয় সভ্যতাই সবচেয়ে প্রাচীন।
সুতরাং, ইতিহাস, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে বলা যায়—সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা হলো মিশরীয় সভ্যতা।