‘ছাড়পত্র’ বাংলা সাহিত্যের এক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ, যার রচয়িতা সুকান্ত ভট্টাচার্য। এই কাব্যগ্রন্থটি তাঁর জীবনের শেষদিকে রচিত হয় এবং এতে কবির বিপ্লবী চিন্তা, মানবপ্রেম ও সমাজ পরিবর্তনের তীব্র আহ্বান ফুটে উঠেছে। সুকান্ত ছিলেন স্বল্পজীবী কিন্তু অসাধারণ প্রতিভাধর কবি, যিনি বাংলা কবিতায় নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।
‘ছাড়পত্র’ গ্রন্থের মূল বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তু:
এই গ্রন্থে কবির সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনার প্রকাশ ঘটে। তিনি শোষিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন এবং সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
‘ছাড়পত্র’ কবিতাগুলোয় দারিদ্র্য, ক্ষুধা, শ্রমিকের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
সুকান্ত তাঁর কবিতায় কল্পনার চেয়ে বাস্তবতাকে স্থান দিয়েছেন। তিনি জীবনকে দেখেছেন সাধারণ মানুষের চোখে এবং তাদের সুখ-দুঃখকেই কবিতার প্রাণ করেছেন।
এই কাব্যগ্রন্থে ব্যবহৃত ভাষা সরল, কিন্তু শক্তিশালী ও প্রভাববিস্তারী। এতে কবির বিপ্লবী সত্তা যেমন স্পষ্ট, তেমনি মানবিক বোধও প্রবলভাবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
‘ছাড়পত্র’-এর কবিতাগুলো স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ভারতবর্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লেখা, যেখানে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ছায়া স্পষ্ট। কবি আশা করেছিলেন, একদিন এই অন্ধকার কেটে নতুন আলোর সূচনা হবে।
এই গ্রন্থে ‘ছাড়পত্র’ শিরোনামটি প্রতীকী অর্থ বহন করে— এটি একদিকে পুরনো সমাজব্যবস্থার প্রতি বিদায়পত্র, অন্যদিকে নতুন জীবনের প্রতি আহ্বান।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা কেবল আবেগ নয়, এতে বাস্তব জীবনের সংগ্রাম ও বিপ্লবের আহ্বান জাগ্রত করে। তিনি বিশ্বাস করতেন, কবিতার কাজ শুধুমাত্র সৌন্দর্যচর্চা নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হওয়া।
‘ছাড়পত্র’ গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে এমন এক অবস্থান তৈরি করেছে, যেখানে কবিতা কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের। এটি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রেরণাদায়ী।
উ. গ) সুকান্ত ভট্টাচার্য