উত্তর: খ) মুহম্মদ আব্দুল হাই
‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’ গ্রন্থটির রচয়িতা মুহম্মদ আব্দুল হাই। এটি একটি ভ্রমণকাহিনি, যেখানে লেখক তাঁর বিদেশযাত্রার অভিজ্ঞতা সাহিত্যিকভাবে তুলে ধরেছেন। বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণবিষয়ক লেখার ধারায় এটি এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন, যা কেবল একটি ভ্রমণের বিবরণ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মানসিক অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।
গ্রন্থটির মূল বিষয় হলো লেখকের ইংল্যান্ডে অবস্থানকালীন জীবন, শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ। তিনি সেখানে কাটিয়েছেন প্রায় সাড়ে সাতশ দিন, সেই সময়ের প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করেছেন।
লেখাটির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
-
এতে বিদেশি সংস্কৃতি ও বাঙালি মানসিকতার পার্থক্য সূক্ষ্মভাবে চিত্রিত হয়েছে। লেখক তুলনামূলক দৃষ্টিতে পশ্চিমা জীবনধারা ও বাঙালি সমাজের সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করেছেন।
-
ভাষা ও শৈলীতে রয়েছে হাস্যরস, রসিকতা ও সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ। এতে লেখকের ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিদীপ্ততা ও সাহিত্যিক পরিপক্বতা প্রকাশ পেয়েছে।
-
বইটিতে বিদেশি সমাজের প্রতি অবজারভেশনধর্মী বিশ্লেষণ পাওয়া যায়; তিনি কোনো কিছু অন্ধভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করেননি, বরং যুক্তিনির্ভরভাবে বিচার করেছেন।
-
এটি শুধু একটি ভ্রমণকাহিনি নয়; এতে আত্মপ্রতিকৃতি, শিক্ষা ও মানবসম্পর্কের বিশ্লেষণও বিদ্যমান।
-
লেখক বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিদেশি প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্নও উত্থাপন করেছেন।
-
‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’-এর ভাষা পরিশীলিত, কিন্তু সহজবোধ্য। লেখক তাঁর অভিজ্ঞতাকে এমনভাবে প্রকাশ করেছেন যে পাঠক মনে করে, সে নিজেও যেন সেই অভিজ্ঞতার অংশ।
মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিশারদ ও সাহিত্যসমালোচক। তিনি বাংলা সাহিত্যে যুক্তিবাদ, সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক মূল্যবোধের প্রচারক হিসেবে পরিচিত। তাঁর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে রয়েছে ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’ (সহলেখক), ‘ভাষা ও সাহিত্য’, ‘প্রবন্ধসংগ্রহ’ প্রভৃতি।
সব মিলিয়ে, ‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’ কেবল একটি ভ্রমণকাহিনি নয়, এটি এক বুদ্ধিদীপ্ত সাহিত্য-ভ্রমণ, যেখানে একজন বাঙালি বুদ্ধিজীবীর চোখে বিদেশি সমাজ, সংস্কৃতি ও মানবজীবনের বহুমাত্রিক রূপ ধরা পড়েছে। এ কারণেই গ্রন্থটি বাংলা ভ্রমণসাহিত্যের এক ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত।