‘নূরলদীনের সারাজীবন’ নাটকটি বাংলাদেশের সমাজ এবং গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। নাটকের মূল বিষয় হলো গ্রামীণ জনজীবনের বাস্তবতা, যেখানে কৃষকরা অত্যাচার, দারিদ্র্য এবং শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। নাটকের পটভূমি বা ভিত্তি হলো সেই সময়কাল এবং সামাজিক পরিস্থিতি যেখানে কৃষকরা তাদের জমি, অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছে। এই প্রেক্ষাপটকে আমরা সংক্ষেপে কৃষক বিদ্রোহ বলি।
নাটকটির কেন্দ্রবিন্দু চরিত্র হলো নূরলদীন, যিনি একজন সাধারণ গ্রামীণ কৃষক। তার জীবন এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে নাটকটি দেখায় কীভাবে একজন সাধারণ মানুষ অসাম্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। নাটকটি শুধু একজন ব্যক্তির গল্প নয়, বরং গ্রামের সমস্ত কৃষক সম্প্রদায়ের সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। এখানে কৃষকের দারিদ্র্য, শ্রমিক অধিকারহীনতা, জমিদার বা শোষক শ্রেণীর অত্যাচার ইত্যাদি বিষয়কে উঠে ধরা হয়েছে।
নাটকের পটভূমির মূল লক্ষ্য হলো সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রদর্শন করা। নাটকে দেখা যায়, গ্রামের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে শোষণের শিকার হচ্ছে, কিন্তু তারা নীরবে বা নিষ্প্রাণভাবে ভোগান্তি সহ্য করছে না। তারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে, যা হলো কৃষক বিদ্রোহের প্রতীক। নাটকটি তাই শুধুমাত্র বিনোদন দেয় না, বরং শিক্ষামূলক বার্তাও দেয় যে সমাজের অবিচার ও শোষণকে অবহেলা করা যায় না, বরং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও প্রতিরোধ জরুরি।
নাটকের পটভূমি আরও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এটি গ্রামীণ জীবনের সামাজিক কাঠামো, ঐতিহ্য, এবং কৃষকদের জীবনধারার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। গ্রামের মানুষদের জীবনযাত্রা, তাদের কৃষি কর্ম, জমিদার এবং করদাতাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নাটকের কেন্দ্রবিন্দু। এই প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে নাটকটি দেখায় কীভাবে একটি ছোট গ্রামীণ সম্প্রদায়ও সামাজিক এবং অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: নাটকের সময়কাল এমন এক সময়কে নির্দেশ করে, যখন গ্রামীণ সমাজে কৃষকরা অত্যাচার এবং জমিদারী শোষণের শিকার হয়েছিল। এই সময়ে কৃষকরা নিজেরা নিজেদের অধিকার রক্ষা করার জন্য বিদ্রোহ বা আন্দোলন করত। নাটকের পটভূমি এই সামাজিক বাস্তবতা এবং কৃষকদের সংগ্রামকে কেন্দ্রীয় করে। নাটকটি তাই একটি সাংবাদিকিক বা সামাজিক প্রতিবেদনমুখী ধাঁচের সাহিত্যকর্ম হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
নাটকটি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি গ্রামীণ সমাজের সংগ্রাম এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। পাঠক বা দর্শক নাটকটি দেখে বুঝতে পারে, সমাজের ন্যায়বিচারের জন্য সাধারণ মানুষও লড়াই করতে পারে এবং তাদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব।
সংক্ষেপে, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ নাটকের পটভূমি হলো কৃষক বিদ্রোহ, যা গ্রামের মানুষের জীবন, সংগ্রাম এবং সামাজিক বৈষম্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি শুধুমাত্র নাটক নয়, বরং সমাজ সচেতনতা এবং শিক্ষামূলক বার্তা বহন করে। নাটকের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে, সাধারণ কৃষকও সম্মান, অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে পারে।
এভাবেই নাটকটি পাঠক এবং দর্শককে গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা, কৃষক সমাজের সংগ্রাম এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের গুরুত্ব বোঝায়। তাই নাটকের পটভূমি সরাসরি সংক্ষেপে বলা যায় কৃষক বিদ্রোহ, এবং পুরো নাটকটি এই বিষয়কে কেন্দ্র করে নির্মিত।