রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যায় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদ কোনটি?
A
পিতৃতান্ত্রিক মতবাদ
B
দেবতান্ত্রিক মতবাদ
C
সামাজিক চুক্তি মতবাদ
D
ঐতিহাসিক মতবাদ
উত্তরের বিবরণ
সংক্ষেপে বলা যায়, রাষ্ট্রের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত থাকলেও সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে ঐতিহাসিক মতবাদ। কারণ এই মতবাদ রাষ্ট্রকে কোনো একক উৎস বা শক্তির সৃষ্টি হিসেবে দেখে না; বরং মানবসমাজের ধীর বিকাশ, প্রয়োজন ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দেয়।
তালিকা আকারে প্রয়োজনীয় তথ্য:
-
ঐতিহাসিক মতবাদ অনুযায়ী রাষ্ট্র কোনো একদিনে তৈরি হয়নি; সময়, অভিজ্ঞতা ও সামাজিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে।
-
প্রাচীন যুগে পরিবার ছিল সামাজিক সংগঠনের মূল ভিত্তি, যা পরে কুল, গোষ্ঠী, গোত্র হয়ে বৃহত্তর সমাজে রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়।
-
এ মতবাদ রাষ্ট্রকে একটি প্রাকৃতিক ও বিবর্তনশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখে, যেখানে মানুষের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও প্রয়োজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক কাঠামোও বিকশিত হয়েছে।
-
যুদ্ধ, অর্থনীতি, ভূগোল, সংস্কৃতি ও নেতৃত্ব—এই উপাদানগুলো রাষ্ট্র গঠনের ধাপে ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
-
পিতৃতান্ত্রিক, দেবতান্ত্রিক বা চুক্তি মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তিকে একক কারণে ব্যাখ্যা করলেও ঐতিহাসিক মতবাদ বহু কারণ ও দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে।
-
এ কারণে আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তায় এই মতবাদকে সবচেয়ে যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
0
Updated: 6 hours ago
আমলাতন্ত্রকে দুষ্টচক্র বলেছেন কে?
Created: 1 month ago
A
ম্যাক্সওয়েবার
B
মাইকেল ক্রোজিয়ার
C
ফাইনার
D
ফিফনার
ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) আমলাতন্ত্রকে একটি সংগঠিত, নিয়ম-নির্ভর ও যৌক্তিক প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে বিশ্লেষণ করেছিলেন। তাঁর মতে, আমলাতন্ত্র আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অপরিহার্য কারণ এটি দক্ষতা, পূর্বানুমানযোগ্যতা ও দায়িত্ববোধ নিশ্চিত করে। তবে ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে দুষ্টচক্র (vicious circle) হিসেবে দেখেননি।
মাইকেল ক্রোজিয়ার (Michel Crozier)-ই প্রথম আমলাতন্ত্রকে দুষ্টচক্র (Vicious Circle) হিসেবে বিশ্লেষণ করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ, নিয়ম-নির্ভরতা ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা প্রশাসনের মধ্যে স্থিতাবস্থার (status quo) সংস্কৃতি সৃষ্টি করে। ফলে পরিবর্তনের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং একটি দুষ্টচক্র গড়ে ওঠে, যা প্রশাসন ও নাগরিকদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে।
-
আমলাতান্ত্রিক দুষ্টচক্রে কর্মকর্তারা তথ্য সীমিত রাখেন যাতে তাঁদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে।
-
পরিবর্তন বা সংস্কারের চেষ্টা করলে অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ তৈরি হয়, ফলে প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়ে।
-
নাগরিকরা অসন্তুষ্ট ও হতাশ হয়ে প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারায়।
-
এই অবিশ্বাস ও অদক্ষতার পরিবেশেই vicious circle বা দুষ্টচক্র গড়ে ওঠে— যেখানে প্রশাসন নিজের দুর্বলতার কারণে সমস্যার সমাধান করতে পারে না এবং জনগণও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখে না।
ফাইনার (Finer) ও ফিফনার (Pfiffner) প্রশাসন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন, কিন্তু তাঁরা দুষ্টচক্র বিশ্লেষণের মূল তত্ত্ববিদ নন।
-
উদাহরণস্বরূপ, সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের ক্ষমতা রক্ষার জন্য তথ্য গোপন বা সীমিত করে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত করেন।
-
জনগণ ধীরে ধীরে এই প্রক্রিয়ায় আস্থা হারায় এবং প্রশাসনের পরিবর্তনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
-
ফলে প্রশাসন অচল ও অকার্যকর ব্যবস্থায় পরিণত হয়, যা ক্রমাগত একটি দুষ্টচক্রে (vicious circle) ঘুরপাক খায়।
এই বিশ্লেষণ দেখায় যে মাইকেল ক্রোজিয়ারের মতে, আমলাতন্ত্র কেবল একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নয়— এটি এমন এক মানসিক ও কাঠামোগত ফাঁদ, যা ক্ষমতা, তথ্য ও পরিবর্তনের অভাবের কারণে নিজেই নিজের সীমাবদ্ধতায় আটকে পড়ে।
0
Updated: 1 month ago
'সার্বভৌমত্ব অবিভাজ্য' কার মতবাদ?
Created: 1 month ago
A
বোদ্যা
B
হবস
C
মার্কস
D
অস্টিন
জঁ বোদ্যা ছিলেন ১৬ শতকের একজন প্রখ্যাত ফরাসি রাজনৈতিক চিন্তাবিদ, যিনি সার্বভৌমত্বের তত্ত্ব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি বলেন, সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা, যা সম্পূর্ণ, অবিভাজ্য এবং চিরস্থায়ী। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো ক্ষমতার দ্বারা এটি বিভক্ত করা যায় না। তাঁর মতে, রাষ্ট্রের ঐক্য ও কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সার্বভৌমত্ব একক ও অখণ্ড থাকতে হবে।
• থমাস হবস সার্বভৌমত্বকে মূলত শক্তি বা ক্ষমতার ধারণা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “লেভিয়াথান”-এ তিনি বলেছেন যে রাষ্ট্রের ক্ষমতা একক কর্তৃপক্ষের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া উচিত। তবে তিনি বোদ্যার মতো স্পষ্টভাবে “অবিভাজ্য” শব্দটি ব্যবহার করেননি।
• কার্ল মার্কস রাষ্ট্রকে শ্রেণীসংগ্রামের একটি মাধ্যম হিসেবে দেখেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে রাষ্ট্র হলো শাসক শ্রেণির হাতিয়ার, তাই সার্বভৌমত্বের অবিভাজ্যতার ধারণা তাঁর চিন্তায় প্রযোজ্য নয়।
• জন অস্টিন সার্বভৌমত্বকে আইনের দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি আইন প্রণেতার কর্তৃত্ব ও আদেশের বাধ্যতামূলক ক্ষমতা-র উপর জোর দিয়েছেন।
• বোদ্যা সার্বভৌমত্বকে শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও আইনি শৃঙ্খলার মূলভিত্তি হিসেবে দেখেছিলেন, যা পরবর্তী অনেক রাজনৈতিক চিন্তাবিদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
0
Updated: 1 month ago
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদাহরণ হলো i) প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি; ii) সুশীল সমাজ; iii) শ্রমিক সংঘ:- কোনটি সঠিক?
Created: 1 month ago
A
i
B
i ও ii
C
ii ও iii
D
i, ii ও iii
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী (Pressure Groups) হলো এমন গোষ্ঠী যারা সরকারের নীতি, আইন বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, কিন্তু নিজেরা সরাসরি রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করে না। এরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ তারা জনগণের বিভিন্ন শ্রেণি ও স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে সরকারের নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
• কার্যপদ্ধতি: এ গোষ্ঠীগুলি সাধারণত আন্দোলন, গণস্বাক্ষর, লবিং, গণমাধ্যম প্রচারণা, মিছিল বা আলোচনার মাধ্যমে সরকার ও প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
• রাজনৈতিক ভূমিকা: তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করেও রাজনৈতিক দল বা সরকারের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে নীতি প্রণয়নের পর্যায়ে।
• গণতান্ত্রিক গুরুত্ব: গণতন্ত্রে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী নাগরিকদের মতামত প্রকাশের একটি কার্যকর মাধ্যম। তারা জনমতকে সংগঠিত করে এবং সরকারের নীতি জনগণের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে ভূমিকা রাখে।
• উদাহরণ:
-
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি: শিক্ষা নীতি ও শিক্ষক কল্যাণ সংক্রান্ত দাবিতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
-
সুশীল সমাজ: মানবাধিকার, দুর্নীতি দমন ও নীতি সংস্কারে সামাজিক সচেতনতা ও জনমত সৃষ্টি করে সরকারের ওপর প্রভাব ফেলে।
-
শ্রমিক সংঘ: শ্রম নীতি, বেতন, কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকারের প্রশ্নে সরকার ও নিয়োগকর্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
• প্রভাব ও তাৎপর্য: চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখে, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে এবং নীতি নির্ধারণে জনগণের স্বার্থকে প্রতিফলিত করতে সাহায্য করে।
0
Updated: 1 month ago