লোহিত সাগর ও সুয়েজখাল ভৌগোলিকভাবে এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এই দুই প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলপথের কারণে আফ্রিকা মহাদেশ এশিয়া থেকে আলাদা হয়েছে। প্রাচীনকালে এই স্থানটি দুই মহাদেশের সংযোগস্থল ছিল, কিন্তু সুয়েজখাল নির্মাণের পর এটি সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নিচে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
• লোহিত সাগর (Red Sea) আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব অংশ ও এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের মাঝখানে অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিকভাবে দুই মহাদেশকে পৃথক করেছে। পশ্চিমে আফ্রিকার মিশর, সুদান ও ইরিত্রিয়া এবং পূর্বে এশিয়ার সৌদি আরব ও ইয়েমেনের সীমানা ঘিরে এই সাগর বিস্তৃত।
• সুয়েজখাল (Suez Canal) একটি মানবনির্মিত খাল যা মিশরের মধ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ১৮৬৯ সালে এটি নির্মিত হয় এবং এর মাধ্যমে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সমুদ্রপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। এই খালটি আফ্রিকা মহাদেশকে সম্পূর্ণভাবে এশিয়া থেকে আলাদা করেছে, কারণ এটি আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থান করে।
• লোহিত সাগর ও সুয়েজখাল একত্রে আফ্রিকা ও এশিয়ার মধ্যে ভূগোলিক সীমারেখা (Geographical Boundary) তৈরি করেছে। এই সীমারেখার ফলে আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে থাকা মিশর এখন ভৌগোলিকভাবে আফ্রিকার অংশ হলেও, সুয়েজখালের পূর্বাংশের সিনাই উপদ্বীপ এশিয়ার অন্তর্গত।
• ঐতিহাসিকভাবে, এই বিচ্ছিন্নতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সুয়েজখাল নির্মাণের আগে ইউরোপ থেকে এশিয়া যেতে আফ্রিকার চারপাশ ঘুরে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা করতে হতো। খালটি চালু হওয়ার পর ইউরোপ-এশিয়া বাণিজ্য সময় ও খরচ উভয় দিকেই অনেক সাশ্রয়ী হয়।
• লোহিত সাগর ও সুয়েজখাল শুধু মহাদেশের বিভাজন নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সামুদ্রিক যোগাযোগ এবং বাণিজ্যিক অর্থনীতিতে এক বিশাল ভূমিকা রাখে। এই পথ দিয়েই বিশ্বের একটি বড় অংশের তেল ও পণ্য পরিবহন হয়।
• তাই ভূগোল ও ইতিহাস—উভয় দিক থেকেই প্রমাণিত হয় যে, লোহিত সাগর ও সুয়েজখাল এশিয়াকে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
অতএব সঠিক উত্তর ক) আফ্রিকা, কারণ লোহিত সাগর ও সুয়েজখালের অবস্থান এমন যে তারা স্বাভাবিক ও কৃত্রিম সীমারেখা তৈরি করে এশিয়া ও আফ্রিকাকে দুটি পৃথক মহাদেশে ভাগ করেছে।