নবজাতকের ওজন তার স্বাস্থ্য ও জীবনধারণের অন্যতম প্রধান সূচক। জন্মের সময় শিশুর ওজন যদি স্বাভাবিক মানের নিচে থাকে, তাকে Low Birth Weight (LBW) বলা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, ২.৫ কেজি বা ২(১/২) কেজির নিচে ওজনবিশিষ্ট নবজাতককে Low Birth Weight বলা হয়। এটি শিশু মৃত্যুহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের মান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, ২.৫ কেজির নিচে জন্ম নেওয়া শিশুদের ‘Low Birth Weight’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এটি শুধুমাত্র ওজনের মাপকাঠি নয়, বরং শিশুর গর্ভকালীন পুষ্টি, মাতৃস্বাস্থ্য, এবং গর্ভধারণকালীন যত্নের মানকেও প্রতিফলিত করে।
• Low Birth Weight শিশুর কারণ বিভিন্ন হতে পারে—যেমন গর্ভকাল ৩৭ সপ্তাহের কম হওয়া (Preterm birth), মায়ের অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, ধূমপান বা মাদক গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ, এবং সংক্রমণ। এ ছাড়াও গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবারের অভাবও এর অন্যতম কারণ।
• প্রভাব ও ঝুঁকি: ওজন কম থাকলে শিশুর দেহে শক্তি সঞ্চয়, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, তাপমাত্রা বজায় রাখা ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যায়। এসব কারণে Low Birth Weight শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, রক্তে শর্করার তারতম্য, এবং বিকাশজনিত সমস্যার ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।
• বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, UNICEF-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি দশজন শিশুর মধ্যে প্রায় তিনজন Low Birth Weight নিয়ে জন্মায়। দরিদ্রতা, অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
• প্রতিরোধ ও যত্ন:
-
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ও সুষম খাবার গ্রহণ জরুরি।
-
মায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, ভিটামিন ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত।
-
ধূমপান, অ্যালকোহল বা মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
-
নবজাতক জন্মের পরপরই বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
• Low Birth Weight বনাম Very Low Birth Weight: ২.৫ কেজির নিচে শিশুকে Low Birth Weight বলা হলেও, ১.৫ কেজির নিচে জন্ম নেওয়া শিশুকে Very Low Birth Weight হিসেবে গণ্য করা হয়। এদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য।
সব মিলিয়ে, ২.৫ কেজির নিচে ওজনবিশিষ্ট নবজাতকই Low Birth Weight হিসেবে বিবেচিত হয়। এদের জন্য জন্মের পর বিশেষ যত্ন, মায়ের বুকের দুধ, এবং উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি শুধু শিশুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই বাড়ায় না, ভবিষ্যতে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠারও ভিত্তি গড়ে দেয়।