শক্তি হলো কাজ করার বা তাপ উৎপন্ন করার ক্ষমতা। এই শক্তি বিভিন্নভাবে মাপা যায় এবং এর পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয় নির্দিষ্ট একক। শক্তির একক নির্ভর করে আমরা কোন ধরনের শক্তি মাপছি—যেমন তাপ শক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি বা যান্ত্রিক শক্তি। বিজ্ঞানে শক্তি মাপার বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও সবচেয়ে পরিচিত এবং প্রাচীন একক হলো ক্যালরি।
মূল তথ্যগুলো নিচে দেওয়া হলো:
-
ক্যালরি (Calorie) হলো তাপ শক্তির একটি একক। এটি এমন পরিমাণ শক্তি যা ১ গ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৫°C থেকে ১৬°C পর্যন্ত) বাড়াতে প্রয়োজন হয়।
-
১ ক্যালরি = 4.184 জুল, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে (SI system) শক্তির মান সাধারণত জুল (Joule) এ প্রকাশ করা হয়। তবে তাপ শক্তি বা খাদ্যের শক্তি মাপতে ক্যালরি ব্যবহৃত হয়।
-
বড় একক কিলোক্যালরি (kcal) = ১০০০ ক্যালরি। খাদ্য শক্তি সাধারণত কিলোক্যালরিতে প্রকাশ করা হয়। যেমন, এক টুকরো রুটি প্রায় ৮০ কিলোক্যালরি শক্তি দেয়।
-
শক্তির অন্যান্য একক:
-
জুল (Joule): SI একক। ১ জুল শক্তি হলো এমন শক্তি যা ১ নিউটন বল দিয়ে কোনো বস্তু ১ মিটার সরালে উৎপন্ন হয়।
-
ওয়াট-সেকেন্ড: এটি বৈদ্যুতিক শক্তি পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। ১ ওয়াট-সেকেন্ড = ১ জুল।
-
ইলেকট্রন-ভোল্ট (eV): ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শক্তি, যেমন পরমাণু বা ইলেকট্রনের শক্তি মাপতে ব্যবহৃত হয়।
-
খাদ্য শক্তি ও ক্যালরি:
খাবার থেকে আমরা যে শক্তি পাই, তা দেহের বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে ব্যবহৃত হয়। এই শক্তির পরিমাণ ক্যালরিতে নির্ণয় করা হয়।
-
১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট = ৪ ক্যালরি
-
১ গ্রাম প্রোটিন = ৪ ক্যালরি
-
১ গ্রাম ফ্যাট = ৯ ক্যালরি
তাই খাদ্যের শক্তিমান নির্ণয়ে “ক্যালরি” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একক।
-
বিজ্ঞানে ব্যবহারের পার্থক্য:
তাপ শক্তির ক্ষেত্রে “ক্যালরি” বেশি ব্যবহৃত হলেও, পদার্থবিজ্ঞানে “জুল” হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানক একক।
উদাহরণস্বরূপ—একটি বাতি জ্বালাতে যে শক্তি লাগে তা জুলে পরিমাপ করা হয়, কিন্তু শরীরের শক্তি বা খাদ্যের শক্তি ক্যালরিতে মাপা হয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, ক্যালরি হলো তাপ শক্তি পরিমাপের একক। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যের শক্তিমান নির্ণয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, যদিও আন্তর্জাতিকভাবে শক্তির মান প্রকাশে জুল ব্যবহৃত হয়। তবুও “ক্যালরি” শব্দটি মানুষের শক্তি ও খাদ্য সম্পর্কিত বিষয়ে সবচেয়ে প্রচলিত ও পরিচিত একক।