পদাবলী (বিশেষ্য পদ)
অর্থাৎ, বৈষ্ণব ও শাক্ত ধর্মভিত্তিক গীতিকাব্যের এক বিশেষ শাখা।
পদাবলী:
পদাবলী হলো এক ধরণের সামগ্রিক গীতিকাব্য যা লোকজ সাহিত্য, ধর্মীয় কাব্য এবং মানবীয় অনুভূতির মেলবন্ধন। ছন্দবদ্ধ, গীতিময় রচনাকে ‘পদ’ বলা হয়। রাধা-শ্রীকৃষ্ণের প্রেমলীলা এবং চৈতন্যদেবের ভক্তির সাধনাকে কেন্দ্র করেই মধ্যযুগে পদাবলী বা গীতিকাব্যের একটি বিশাল প্রবাহ সৃষ্টি হয়।
বৈষ্ণব পদাবলী:
বৈষ্ণব পদাবলী প্রধানত বৈষ্ণব ধর্ম ও কৃষ্ণ ভক্তির প্রতি নিবেদিত। এতে শ্রীকৃষ্ণ, গোপী প্রেম, কৃষ্ণের মহিমা ও ভক্তির গুণাবলী গভীরভাবে ফুটে ওঠে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, পদাবলী একটি বিস্তৃত শব্দ, যা বিভিন্ন ধরনের গান ও গীতিকাব্যকে নির্দেশ করে, তবে বৈষ্ণব পদাবলী বলতে বোঝায় সেই পদাবলী
যা বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবিত কাব্যধারা।অর্থাৎ, পদ বা পদাবলী মূলত পদ্যরূপে রচিত ভক্তিমূলক রচনা।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা:
চৈতন্যদেবের আগের সময়ের সাহিত্যধারার মধ্যে পদাবলীর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। এই ধারার সূচনা হয় চৈতন্যপূর্ব যুগেই। রাধা-শ্রীকৃষ্ণের লীলাবিষয়ক সাহিত্যিক ভাবনা, ভাষা ও ছন্দের দিক থেকে এক অনন্য অবস্থানে রয়েছে। এতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আত্মার আত্মীয় হিসেবে কল্পিত, যেখানে ভক্ত ও ঈশ্বরের মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই।
মধ্যযুগে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা এবং চৈতন্যদেবের ভক্তি সাধনাকে অবলম্বন করে পদাবলী বা গীতিকাব্যের ধারা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। চৈতন্যদেবের পরবর্তী বৈষ্ণব কবিরা এই সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রাখেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মহান জাগরণ ঘটে এই পদাবলী রচনার মধ্য দিয়ে।
অনেকে মুসলমান কবিরাও রাধাকৃষ্ণের লীলার পদ রচনা করে বাংলা সাহিত্যের পরিধি প্রসারিত করেছেন, যেমন চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, লোচনদাস, গোবিন্দদাস, কবিবল্লভ রায়শেখর, বলরাম দাস, নরোত্তম দাস, নরহরি দাস, রাধামোহন ঠাকুর ইত্যাদি। মৈথিল ভাষার বিখ্যাত কবি বিদ্যাপতিও চৈতন্যপূর্ব যুগের প্রভাবশালী পদ রচয়িতা।
মৈথিল ভাষায় রচিত বিদ্যাপতির পদাবলী বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি এই ধারার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচিত।
উৎস:
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর এবং বাংলাপিডিয়া।