অর্থগত দিক থেকে শব্দগুলোর সাদৃশ্য নির্ধারণ করতে হলে প্রথমে তাদের প্রকৃত অর্থ বোঝা জরুরি। প্রতিটি শব্দের অর্থের ভিন্নতা বা মিল থেকেই বোঝা যায় কোনটি বাকিদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। প্রদত্ত প্রশ্নে চারটি শব্দের মধ্যে তিনটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়, আর একটি শব্দ অর্থের দিক থেকে ভিন্ন। তাই সঠিক উত্তর হলো লোচন, কারণ এটি বাকিদের সঙ্গে অর্থগতভাবে মিল নয়।
• অলক শব্দটি চুল বা কেশকে বোঝায়। এটি সাধারণত সুন্দর ও কোমল চুল বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। সাহিত্য ও কবিতায় অলক শব্দটি প্রায়ই রূপের বর্ণনায় দেখা যায়।
• চিকুর শব্দের অর্থও চুল। এটি অলক, কুন্তল, কেশ প্রভৃতির সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলার কবিতায় “চিকুরখেলা”, “চিকুরনিবিড়” ইত্যাদি রূপে এর ব্যবহার পাওয়া যায়, যা নারীর চুলের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে।
• কবরী শব্দের অর্থও চুল বা কেশ। বিশেষ করে এটি নারীর চুল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। “কবরী বাঁধা”, “কবরী খোলা”— এ ধরনের বাক্যাংশে দেখা যায় শব্দটি অলঙ্কারিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
• অন্যদিকে লোচন শব্দের অর্থ একেবারেই ভিন্ন। এটি চোখ বোঝায়। সাহিত্যে যেমন “সুন্দর লোচন” বা “লোচনে জল” ইত্যাদি বাক্যে ব্যবহৃত হয়, সেখানে চোখ বা দৃষ্টির ভাব প্রকাশ পায়। তাই লোচন শব্দটি বাকিদের সঙ্গে অর্থগত দিক থেকে মেলে না।
• ভাষাগতভাবে দেখা যায়, অলক, চিকুর, কবরী শব্দগুলো শারীরিক সৌন্দর্যের একটি বিশেষ অঙ্গ—চুল—এর সমার্থক। কিন্তু লোচন সেই অঙ্গের নয়; এটি মুখের অন্য অংশ চোখ নির্দেশ করে। অর্থাৎ এখানে তিনটি শব্দ এক অর্থবোধক, আর একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
• অর্থের এই পার্থক্য থেকেই বোঝা যায়, প্রশ্নের উত্তর ঘ) লোচন সঠিক। কারণ, বাকিরা চুলের সমার্থক হলেও লোচন চোখের প্রতিশব্দ।
• বাংলা ভাষায় এমন সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দের পার্থক্য জানা ভাষার সৌন্দর্য ও অর্থবোধ বোঝার জন্য জরুরি। এর মাধ্যমে শব্দচয়নের নিখুঁততা ও সাহিত্যিক রচনাশৈলী উন্নত হয়।
অতএব, “অলক”, “চিকুর” ও “কবরী” একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও “লোচন” অর্থগতভাবে একেবারেই ভিন্ন, এবং এ কারণেই সেটিই সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।