বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৪ নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার দায়িত্ব ও পদমর্যাদা নির্ধারণ করা হয়েছে, যিনি হলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের পক্ষে সকল আদালতে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং আইনগত বিষয়ে রাষ্ট্রকে পরামর্শ প্রদান করেন। এই পদটি শুধু একটি প্রশাসনিক বা আইনি দায়িত্ব নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত।
অ্যাটর্নি জেনারেল মূলত রাষ্ট্রের আইনগত স্বার্থ রক্ষা, সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা এবং আদালতে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। সংবিধানের ৬৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োজিত হন এবং তিনি রাষ্ট্রপতির ইচ্ছানুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন। এই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে, অর্থাৎ তাঁকে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী হতে হয়, যিনি বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনায় দক্ষ।
অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রধান দায়িত্ব হলো সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আইনি পরামর্শ ও মামলা পরিচালনা করা। কোনো আইন বা নীতিমালা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা, সে বিষয়ে আদালতে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করা তাঁর অন্যতম কাজ। পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুতেও পরামর্শ দেন, যেমন রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদান, নির্বাচনী প্রশ্ন, বা কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বৈধতা সংক্রান্ত বিষয়।
অ্যাটর্নি জেনারেলের অধীনে সাধারণত অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল কাজ করেন, যারা বিভিন্ন আদালতে সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। তাঁদের কার্যক্রম সমন্বয় ও নির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্বও অ্যাটর্নি জেনারেলের ওপর বর্তায়।
এই পদটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের কাছে সরকারের নীতি বা সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে পারেন, কিন্তু তিনি আদালতের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করতে পারেন না। অর্থাৎ, তিনি সরকারের প্রতিনিধি হলেও বিচার বিভাগের ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখেন না। তিনি শুধুমাত্র আইনি যুক্তির মাধ্যমে আদালতে সরকারের অবস্থানকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রায়ই বলা হয় সরকারের মুখপাত্র হিসেবে আদালতে রাষ্ট্রের আইনগত কণ্ঠস্বর, কারণ তাঁর উপস্থাপনা ও ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে অনেক রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের আইনি বৈধতা নির্ধারিত হয়। তিনি বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রশ্নে সরকারকে দিকনির্দেশনা দেন এবং আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের ক্ষেত্রেও সরকারের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৪ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য ও আইনের শাসন রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর দায়িত্ব শুধু সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা নয়, বরং আইন ও সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা। এই কারণে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বাংলাদেশের আইনি কাঠামোর অন্যতম মূল স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়।