বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ কোন দেশের সহায়তায় নির্মিত হয়েছে?
A
যুক্তরাষ্ট্র
B
যুক্তরাজ্য
C
ফ্রান্স
D
জার্মানি
উত্তরের বিবরণ
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত ইতিহাসে এক অনন্য অর্জন, যা দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ, যা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু নিজস্ব সম্প্রচার ব্যবস্থা অর্জন করেনি, বরং বৈশ্বিক স্যাটেলাইট ক্লাবের একজন সদস্য দেশ হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ২০১৮ সালের ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে এবং বাংলাদেশের সময় ১২ মে ভোররাত ২টা ১৪ মিনিটে সফলভাবে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালের কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড LC-39A থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় SpaceX প্রতিষ্ঠানের Falcon 9 (Block 5) লঞ্চ ভেহিকেলের মাধ্যমে। এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট মালিকানা অর্জনকারী দেশের তালিকায় স্থান পায়, যা জাতির জন্য এক গৌরবময় মুহূর্ত হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেয়।
বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই প্রকল্পের দায়িত্বে ছিল। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC)। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ১ জুলাই ২০১৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল।
প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ২৯৬৭.৯৫ কোটি টাকা, তবে বাস্তবায়নের সময় তা সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ২৭৬৫.৬৬ কোটি টাকা। উপগ্রহটি নির্মাণ করে ফ্রান্সের বিখ্যাত স্যাটেলাইট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Thales Alenia Space, যাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে যোগাযোগ উপগ্রহ নির্মাণে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণে Thales Alenia Space-এর চুক্তিমূল্য ছিল ১৯০৮.৭৫ কোটি টাকা।
এই স্যাটেলাইটটি মূলত যোগাযোগ, টেলিভিশন সম্প্রচার, ইন্টারনেট সংযোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, এবং সরকারি যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের কভারেজ এরিয়া হিসেবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশ, এমনকি কিছু ইউরোপীয় অঞ্চলেরও অংশে সম্প্রসারিত। ফলে বাংলাদেশ এখন নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেল ও অন্যান্য সম্প্রচার সেবা দিতে সক্ষম, যা বিদেশি স্যাটেলাইটের উপর নির্ভরতা হ্রাস করেছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান SpaceX বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মহাকাশ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর একটি। তাদের ব্যবহৃত Falcon 9 Block 5 লঞ্চ ভেহিকেলটি পুনঃব্যবহারযোগ্য, যা মহাকাশ প্রযুক্তিতে ব্যয় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল এক বিশাল সাফল্য, কারণ এটি দেশের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক অসাধারণ উদাহরণ।
এই প্রকল্প বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের ভিত্তি মজবুত করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আজ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি, গণমাধ্যম, শিক্ষা, এবং টেলিকম খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত অর্জন নয়, বরং জাতির আত্মনির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
0
Updated: 10 hours ago
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ কী ধরণের স্যাটেলাইট হবে?
Created: 1 month ago
A
কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট
B
ওয়েদার স্যাটেলাইট
C
আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট
D
ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট
বাংলাদেশ সরকার রাশিয়া সরকারের সহযোগিতায় ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এটি মূলত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমি ও সমুদ্র এলাকার ছবি তোলা সম্ভব হবে।
• বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ হবে আর্থ অবজারভেটরি ক্যাটাগরির।
• এতে অপটিক্যাল ভিএইচআর-সার (Synthetic Aperture Radar-SAR) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
• Glavkosmos, রাশিয়া এই স্যাটেলাইটটি প্রস্তুত ও উৎক্ষেপণ করবে।
• Glavkosmos হল রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত মহাকাশ সংস্থা Roscosmos-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
• চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি (BSCL)।
• চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
0
Updated: 1 month ago