বাংলাদেশে কয়টি ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আছে?
A
৮ টি
B
১০ টি
C
০২ টি
D
০৪ টি
উত্তরের বিবরণ
বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ দেশগুলোর একটি। এ দেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমন এক অঞ্চলে পড়েছে যা সক্রিয় ভূমিকম্পীয় বেল্টের অংশ। তাই ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৪টি ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে— ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেটে। এই কেন্দ্রগুলো ভূমিকম্পের কম্পন শনাক্ত, বিশ্লেষণ ও আগাম সতর্কতা প্রদানের কাজে নিয়োজিত।
এই কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম ভূমিকম্প সম্পর্কিত গবেষণা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশের এই চারটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কাজ ও গুরুত্ব নিম্নরূপভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—
ঢাকা কেন্দ্র দেশের প্রধান ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এটি বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সব কেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের সমন্বয় করে। এই কেন্দ্র থেকেই আন্তর্জাতিক ভূকম্পন সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্র দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই অঞ্চলটি বঙ্গোপসাগরের টেকটনিক ফল্ট লাইনের কাছাকাছি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ কম্পনের তাৎক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যা ভূমিকম্পের উৎস নির্ণয়ে সাহায্য করে।
রংপুর কেন্দ্র দেশের উত্তরাঞ্চলের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপিত। এই অঞ্চল তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও নেপাল ও ভারতের হিমালয় অঞ্চল থেকে উৎপন্ন কম্পনের প্রভাব এখানে অনুভূত হয়। রংপুর কেন্দ্র এসব কম্পন পর্যবেক্ষণ করে দেশের উত্তর সীমান্ত অঞ্চলের ভূমিকম্প ঝুঁকি নিরূপণ করে।
সিলেট কেন্দ্র বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত, যা দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। আসাম ফল্ট ও দাউকি ফল্ট লাইনের নিকটে থাকায় সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন কম্পন ঘটে। এই কেন্দ্রটি ঐ অঞ্চলের কম্পন তীব্রতা, সময় ও কেন্দ্রবিন্দু নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মূল কাজ হলো ভূমিকম্পের কম্পন তরঙ্গ শনাক্ত করে রিখটার স্কেলে তার মাত্রা নির্ধারণ করা। এরপর সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারকে সতর্ক বার্তা প্রদান করা হয়। এতে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা আগেই নিরূপণ করা সম্ভব হয়।
এছাড়া এই কেন্দ্রগুলো ভূমিকম্পজনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় জরুরি পরিকল্পনা প্রণয়ন, ভবন নির্মাণের নিরাপত্তা মান উন্নয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বৈজ্ঞানিক সহায়তা প্রদান করে। প্রতিটি কেন্দ্র আধুনিক সিসমোগ্রাফ মেশিনে সজ্জিত এবং ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকে, যাতে সামান্যতম কম্পনও শনাক্ত করা যায়।
বাংলাদেশ সরকার ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য নতুন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশেষত, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ও বরিশালে নতুন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে সারাদেশে সমন্বিত ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।
সবশেষে বলা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেটের এই চারটি কেন্দ্র দেশের ভূমিকম্প নিরাপত্তা ব্যবস্থার মেরুদণ্ডস্বরূপ। এদের তথ্য ও সতর্কবার্তার ওপর নির্ভর করেই দেশ সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।
0
Updated: 10 hours ago