বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারে অসামান্য অবদান রাখা বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক ও নারী জাগরণের অগ্রদূত। তাঁর জন্ম হয়েছিল বরিশাল জেলায়, যা তাঁর সাহিত্যিক জীবন ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
সঠিক উত্তর: খ) বরিশাল
-
বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত কিন্তু রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আবদুল বারী ছিলেন একজন জমিদার, এবং মাতা সৈয়দা সাবেরা বেগম ছিলেন শিক্ষানুরাগী নারী। এই পরিবারের সংস্কারমুক্ত পরিবেশে সুফিয়া কামালের চিন্তা ও সাহিত্যচেতনা বিকাশ লাভ করে।
-
সেই সময় নারীদের শিক্ষার সুযোগ খুব সীমিত ছিল। তবুও মায়ের উৎসাহে তিনি ঘরোয়া শিক্ষার মাধ্যমে বাংলা, আরবি ও ফারসি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন।
-
বরিশালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী, গ্রামীণ জীবন ও মানুষের প্রতি সহানুভূতি তাঁর কবিতায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। পরবর্তীতে এই আবহেই তিনি মানবতাবাদ, নারী অধিকার ও সমাজ সংস্কারের ভাবধারাকে সাহিত্যিক রূপ দেন।
-
তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা হয় ১৯২৬ সালে, যখন তাঁর প্রথম গল্প “সৈনিকের মা” প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি নিয়মিতভাবে কবিতা ও গদ্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।
-
১৯৩৮ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “সাঁঝের মায়া” তাঁকে বাংলা কাব্যজগতে স্বতন্ত্র পরিচিতি এনে দেয়। পরবর্তীতে “মনের মানুষ”, “মরাল”, “একাত্তরের ডায়েরি” প্রভৃতি রচনায় সমাজ, স্বাধীনতা ও নারীজীবনের বাস্তবচিত্র উঠে এসেছে।
-
সুফিয়া কামাল শুধু কবি নন, তিনি ছিলেন এক দৃঢ়চেতা সমাজকর্মী। ১৯৪৭ সালে মোহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী সমাজের মুক্তি ও উন্নয়নের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
-
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে তিনি যুক্ত ছিলেন। নারীদের সংগঠিত করে দেশের সামাজিক অগ্রগতিতে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা।
-
তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা।
বেগম সুফিয়া কামালের জন্মস্থান বরিশাল শুধু একটি ভৌগোলিক পরিচয় নয়, বরং তাঁর সাহিত্য, চিন্তা ও সংগ্রামের উৎসভূমি। এখান থেকেই তিনি পেয়েছিলেন মানবিকতা, সহমর্মিতা ও স্বাধীনচেতা দৃষ্টিভঙ্গির অনুপ্রেরণা, যা তাঁকে পরিণত করেছিল বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় প্রতীকে।