তাম্রলিপি শব্দটি "তাম্র" এবং "লিপি" শব্দের সংমিশ্রণ থেকে এসেছে। "তাম্র" মানে হলো তামা, আর "লিপি" মানে হলো লেখা বা লিপিবদ্ধ করা। অর্থাৎ, তাম্রলিপি হলো তামার পাত্র বা তামার পাতায় খোদিত শাসনাদেশ বা কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা, যা সাধারণত রাজা বা সম্রাটরা তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা বা কোনো নীতি প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে রচনা করতেন। তাম্রলিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপকরণ হিসেবে গণ্য হয়, যা সম্রাট বা শাসকের আদেশ, আইন, বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে চিরকাল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো।
তাম্রলিপি সাধারণত তামার পাত্রে খোদাই করা থাকতো, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং অত্যন্ত টেকসই ছিল। প্রাচীন ভারতের বহু গুরুত্বপূর্ণ শাসনব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা এবং ঐতিহাসিক ঘটনার প্রমাণ হিসেবে তাম্রলিপির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
এখানে কিছু মূল তথ্য:
-
তাম্রলিপির ব্যবহার: প্রাচীন ভারতীয় রাজ্যগুলির শাসকরা তাম্রলিপি ব্যবহার করতেন তাঁদের শাসন, আইন বা আদেশ লিপিবদ্ধ করার জন্য। এর মধ্যে অনেক শাসনাদেশ ও অঙ্গীকারের তথ্য ছিল, যা পরবর্তীতে গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য সরবরাহ করেছে।
-
তাম্রলিপির উপাদান: তাম্রলিপিগুলি সাধারণত তামার পাতায় খোদিত বা খোঁচানো থাকতো। এটি দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকত এবং দস্তাবেজ হিসেবে খুবই শক্তিশালী ও টেকসই ছিল।
-
প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা: তাম্রলিপির মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতি সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তাম্রলিপিগুলির সাহায্যে ঐতিহাসিক ঘটনাবলী, রাজাদের শাসননীতি, সমাজের অবস্থা ও অন্যান্য তথ্য জানা যায়।
এটির উদাহরণ:
বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে পাওয়া তাম্রলিপিগুলি শাসক ও সমাজের একত্রিত ইতিহাসের সাক্ষী। এর মধ্যে কিছু প্রাচীন শাসনবিদ্যায় সৃষ্ট তাম্রলিপি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন মৌর্য, গুপ্ত ও কুষাণ সাম্রাজ্যের শাসনকালীন তাম্রলিপি।
তাম্রলিপিগুলি একদিকে যেমন প্রাচীন আইন ও শাসনব্যবস্থা জানায়, তেমনি অন্যদিকে এটি আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।