"Man is born free and everywhere he is in chains." উক্তিটি একে অপরের কাছে অনেক পরিচিত, এবং এটি বিশ্বখ্যাত রাজনৈতিক দার্শনিক জাঁ জ্যাক রুশো'র। তিনি ১৮ শতকের একজন ফরাসি দার্শনিক ছিলেন এবং তার কাজ সমাজচিন্তা ও রাজনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। রুশো তার অমর গ্রন্থ "The Social Contract" (সামাজিক চুক্তি) তে এই উক্তিটি ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে তার নৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন।
রুশো এই উক্তি দ্বারা মূলত বলতে চেয়েছিলেন যে, মানুষের জন্মের সময় তার মৌলিক স্বাধীনতা ছিল, তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং তাদের শাসন ব্যবস্থায় সে স্বাধীনতা অনেকটাই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। তার মতে, মানবসভ্যতার অগ্রগতির ফলে মানুষ নানা প্রকার শৃঙ্খলায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, যার ফলে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
রুশো সামাজিক চুক্তির ধারণা তুলে ধরেছিলেন, যার মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে একধরনের চুক্তি হয়—এতে সরকারের দায়িত্ব থাকে জনগণের অধিকার সুরক্ষিত রাখা, এবং জনগণ সরকারকে তাদের সম্মতি প্রদান করে। তবে, রুশো এই চুক্তিতে বিশ্বাস করতেন না যে, একচেটিয়া ক্ষমতা বা শাসন ব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। তিনি পরামর্শ দেন, সরকারকে জনগণের সম্মতি এবং ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে গঠন করা উচিত, এবং শাসনব্যবস্থার মধ্যে সবার জন্য সমান অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত।
রুশো আরও বিশ্বাস করতেন যে, যখন একজন ব্যক্তি সরকার বা সমাজের নিষ্ঠুর শৃঙ্খলা এবং অসীম নিয়মের মধ্যে বন্দি হয়, তখন তার প্রকৃত স্বাধীনতা লুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু, তিনি "সামাজিক চুক্তি"র মাধ্যমে সমাজের প্রতি একধরনের পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যাতে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়।
রুশো'র এই দার্শনিক মতামত তার সমসাময়িক রাজনীতি এবং সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে গভীর চিন্তা এবং সমালোচনা প্রদর্শন করেছিল, যা পরবর্তী শতাব্দীতে প্রভাব ফেলেছে এবং তার চিন্তা আধুনিক সমাজের ভাবনা এবং রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।