‘গায়ে হলুদ’ কোন সমাসের উদাহরণ?
A
দ্বন্দ্ব সমাস
B
বহুব্রীহি সমাস
C
তৎপুরুষ সমাস
D
দ্বিগু সমাস
উত্তরের বিবরণ
‘গায়ে হলুদ’ শব্দটি বাংলা ভাষার একটি পরিচিত বহুব্রীহি সমাস। এই সমাসে দুই বা ততোধিক পদ মিলে এমন একটি নতুন অর্থের সৃষ্টি করে, যার অর্থ সরাসরি ওই দুটি পদ থেকে বোঝা যায় না। বরং নতুন শব্দটি এমন একটি বস্তুর, ঘটনার বা ব্যক্তির পরিচয় দেয়, যার সঙ্গে ওই দুটি পদের যৌথ অর্থ যুক্ত থাকে কিন্তু সরাসরি তা প্রকাশ করে না। নিচে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো—
১. সমাস কী:
সমাস হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দুটি বা ততোধিক শব্দ একত্র হয়ে একটি নতুন যৌগিক শব্দ গঠন করে। সমাসে শব্দসংক্ষেপ ঘটে এবং বাক্যের অর্থকে সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করা হয়। যেমন— ‘রাজপুত্র’ (রাজ + পুত্র), ‘গঙ্গাজল’ (গঙ্গা + জল)।
২. বহুব্রীহি সমাসের সংজ্ঞা:
যে সমাসে গঠিত পদটি সমাস-পূর্ব দুই বা ততোধিক পদের অর্থ প্রকাশ না করে অন্য কোনো তৃতীয় অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। সহজভাবে বললে, বহুব্রীহি সমাসে সমাস-পূর্ব পদের অর্থ সরাসরি মূল শব্দে থাকে না; বরং তা কোনো গুণ বা বিশেষ বৈশিষ্ট্য বোঝায়।
৩. ‘গায়ে হলুদ’ শব্দের গঠন বিশ্লেষণ:
-
গায়ে = দেহে, শরীরে
-
হলুদ = এক ধরনের রঙ বা মসলা যা ত্বকে লাগানো হয়
দুইটি শব্দ মিলে বোঝানো হয়েছে এমন একটি অনুষ্ঠানকে, যেখানে বর বা কনের গায়ে হলুদ লাগানোর প্রথা পালিত হয়। অর্থাৎ, এখানে শব্দ দুটি মিলে একটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান বোঝাচ্ছে, কেবল ‘গায়ের ওপর হলুদ লাগানো’ ক্রিয়াটি নয়।
তাই ‘গায়ে হলুদ’ শব্দের অর্থ সরাসরি ‘গায়ের হলুদ’ নয়, বরং “গায়ে হলুদ লাগানোর অনুষ্ঠান”। এই অর্থটি সম্পূর্ণ নতুন ও ভিন্ন, যা বহুব্রীহি সমাসের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে যায়।
৪. বহুব্রীহি সমাসের বৈশিষ্ট্য:
-
সমাসের দ্বারা গঠিত পদটি কোনো গুণ বা অবস্থা বোঝায়।
-
গঠিত পদটি সাধারণত বিশেষণ বা বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-
সমাসপূর্ব শব্দগুলির প্রত্যক্ষ অর্থ হারিয়ে নতুন রূপে প্রকাশ পায়।
-
উদাহরণ:
-
পীতাম্বর (যার অম্বর বা পোশাক পীত, অর্থাৎ কৃষ্ণ)
-
চক্রপাণি (যার হাতে চক্র আছে, অর্থাৎ বিষ্ণু)
-
গৃহস্থ (যার গৃহ আছে)
-
পদ্মনয়না (যার নয়ন পদ্মের মতো, অর্থাৎ সুন্দর নয়নবিশিষ্টা নারী)
-
৫. ‘গায়ে হলুদ’ কেন বহুব্রীহি:
-
এখানে গায়ে ও হলুদ দুটি পদ মিলে এমন একটি নতুন অর্থ দিয়েছে যা সরাসরি কোনো একটির অর্থ নয়।
-
‘গায়ে হলুদ’ মানে এমন ব্যক্তি নয় যার গায়ে হলুদ আছে, বরং এমন অনুষ্ঠান বোঝানো হয়েছে যেখানে বর-কনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হলুদ লাগানো হয়।
-
অর্থাৎ, শব্দটি একধরনের অপ্রত্যক্ষ বা গৌণ অর্থ প্রকাশ করছে—যা বহুব্রীহি সমাসের বৈশিষ্ট্য।
৬. ভুল ধরন এড়ানো:
অনেকে ভাবতে পারেন এটি তৎপুরুষ সমাস, কারণ প্রথম পদ ‘গায়ে’ (অব্যয়-কারক পদ) এবং দ্বিতীয় পদ ‘হলুদ’। কিন্তু যদি এর অর্থ হতো “গায়ের উপর থাকা হলুদ”, তাহলে সেটি তৎপুরুষ হতো। যেহেতু এখানে নতুন অর্থে একটি অনুষ্ঠান বোঝানো হচ্ছে, তাই এটি তৎপুরুষ নয়, বরং বহুব্রীহি সমাস।
৭. সারসংক্ষেপে:
-
সমাসের প্রকার: বহুব্রীহি
-
কারণ: পদ দুটি মিলে নতুন অর্থ প্রকাশ করছে
-
অর্থ: বর-কনের শরীরে হলুদ লাগানোর অনুষ্ঠান
-
গঠনরীতি: “গায়ে + হলুদ → গায়ে হলুদ (অনুষ্ঠান)”
চূড়ান্তভাবে বলা যায়, ‘গায়ে হলুদ’ এমন একটি বহুব্রীহি সমাস, যা সরাসরি পদের অর্থ না বোঝিয়ে একটি নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক প্রথা বা অনুষ্ঠানকে বোঝায়। এই কারণে এটি বাংলা ভাষায় বহুব্রীহি সমাসের একটি সুন্দর উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
0
Updated: 1 day ago