সমুদ্র স্রোত (Ocean Current) হলো সমুদ্রের পানির একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়মিত ও ধারাবাহিক প্রবাহ। এর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে বায়ু প্রবাহ (wind movement), কারণ বাতাসের দিক ও গতি সরাসরি সমুদ্রের পৃষ্ঠের পানিকে নড়াচড়া করতে সহায়তা করে। তবে বায়ু ছাড়াও আরও কিছু প্রাকৃতিক কারণ সমুদ্র স্রোত সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
বায়ু প্রবাহ: এটি সমুদ্র স্রোতের প্রধান নিয়ামক। বায়ুর দিক ও গতির কারণে পানির উপরিভাগে স্রোত তৈরি হয়, যেমন—Trade Wind ও Westerlies দ্বারা নির্ধারিত স্রোত।
-
উষ্ণতার তারতম্য: সমুদ্রের এক স্থানে পানি গরম ও অন্য স্থানে ঠান্ডা থাকায় ঘনত্বে পার্থক্য ঘটে, যা উষ্ণ ও শীতল স্রোতের সৃষ্টি করে।
-
গভীরতার তারতম্য: সমুদ্রের বিভিন্ন গভীরতায় পানির ঘনত্ব ভিন্ন হওয়ায় নিচের স্তরের পানি উপরের দিকে উঠে আসে বা নিচে নেমে যায়, ফলে উল্লম্ব স্রোত (vertical current) তৈরি হয়।
-
বাষ্পীভবনের তারতম্য: কিছু অঞ্চলে বাষ্পীভবন বেশি হওয়ায় পানির লবণাক্ততা ও ঘনত্ব বাড়ে, যা পানিকে নিচে টেনে নেয় এবং স্রোত সৃষ্টি করে।
-
পৃথিবীর আবর্তন: পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট Coriolis Force স্রোতের দিক পরিবর্তন করে; ফলে উত্তর গোলার্ধে স্রোত ঘড়ির কাঁটার দিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়।
-
ভূখণ্ডের অবস্থান: মহাদেশ ও দ্বীপের উপস্থিতি স্রোতের দিক ও গতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
অতএব, সমুদ্র স্রোতের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে বায়ু প্রবাহ, তবে উষ্ণতা, গভীরতা, বাষ্পীভবন, পৃথিবীর আবর্তন এবং ভূখণ্ডের বিন্যাসও এর গঠন ও প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।