'আঁধার যুগে'র রচনা বলা হয় কোনটিকে?
A
চর্যাপদ
B
মনসামঙ্গল
C
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
D
প্রাকৃতপৈঙ্গলা
উত্তরের বিবরণ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘আঁধার যুগ’ বা অন্ধকার যুগ বলতে সেই সময়কে বোঝায়, যখন সাহিত্যিক নিদর্শন খুবই অপ্রতুল ছিল। এই সময়টি মূলত ১৩শ থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় হিসেবে ধরা হয়। এই যুগে রচিত সাহিত্যকর্মের মধ্যে ‘প্রাকৃতপৈঙ্গলা’ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এটি রামাই পণ্ডিতের রচনা, যা আদি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে গণ্য হয়।
-
‘প্রাকৃতপৈঙ্গলা’ একটি গাথা বা গীতিকবিতা সংকলন, যেখানে তৎকালীন সমাজ, ধর্ম ও দর্শনের নানা বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। এর ভাষা ছিল অপভ্রংশমূলক প্রাকৃত, যা পরবর্তীতে বাংলার প্রাথমিক রূপে পরিণত হয়।
-
এই রচনাটি বৌদ্ধ সাহিত্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল। এতে বজ্রযান ও শূন্যবাদী দর্শনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, যা চর্যাপদের আদর্শের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে।
-
রামাই পণ্ডিত ছিলেন বৌদ্ধ দার্শনিক ও কবি। তাঁর রচনাগুলিতে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও ধর্মীয় কৃত্রিমতার বিরোধিতা পাওয়া যায়।
-
‘প্রাকৃতপৈঙ্গলা’-এর ছন্দ, ভাষা ও গঠনরীতি বাংলার পরবর্তী যুগের সাহিত্যে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। এর শব্দভাণ্ডার, রূপ ও ভাবধারা থেকেই মধ্যযুগীয় বাংলা কাব্য সাহিত্যের ভিত্তি তৈরি হয়।
-
এই রচনাটির মাধ্যমে বোঝা যায়, অন্ধকার যুগ সম্পূর্ণ সাহিত্যশূন্য ছিল না। যদিও এ যুগের অন্য সাহিত্যকর্ম নষ্ট হয়ে গেছে বা পাওয়া যায়নি, ‘প্রাকৃতপৈঙ্গলা’ তার মধ্যে একমাত্র সংরক্ষিত নিদর্শন হিসেবে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
-
অনেক সাহিত্য ইতিহাসবিদ এই রচনাটিকে চর্যাপদের উত্তরাধিকারী মনে করেন। ভাষার দিক থেকে এটি চর্যাপদের চেয়ে কিছুটা উন্নত হলেও এখনও প্রাকৃতিক ও প্রাথমিক ধাঁচ বজায় রেখেছে।
-
‘প্রাকৃতপৈঙ্গলা’-র নামকরণে ‘প্রাকৃত’ শব্দটি ভাষার ধরণ নির্দেশ করে এবং ‘পৈঙ্গলা’ শব্দটি গীতিকবিতার আঙ্গিক বোঝায়।
-
এর মধ্যে আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও নৈতিক ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে, যা বৌদ্ধ দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
-
এই রচনার মাধ্যমে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের সূচনার এক সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছিল, যা পরবর্তীকালে মনসামঙ্গল ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন প্রভৃতি কাব্যের জন্মে ভূমিকা রাখে।
অতএব, অন্ধকার যুগে রচিত সাহিত্যের মধ্যে ‘প্রাকৃতপৈঙ্গলা’-ই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত, এবং তাই একে ‘আঁধার যুগে’র রচনা বলা হয়।
0
Updated: 1 day ago
বাংলা 'মহাভারতের' শ্রেষ্ঠ অনুবাদক হলেন-
Created: 1 week ago
A
সন্ধ্যাকর নন্দী
B
কাশীরাম দাস
C
মালাধর বসু
D
শ্রীকর নন্দী
বাংলা সাহিত্যে মহাকাব্য অনুবাদের ক্ষেত্রে কাশীরাম দাসকে বিশেষভাবে উচ্চ মূল্যায়ন করা হয়। তিনি মহাভারতকে সর্বোত্তমভাবে বাংলায় অনুবাদ করেছেন, যা কেবল ভাষাগত দিক থেকে নয়, সাহিত্যিক ও শিক্ষামূলক দিক থেকেও সমৃদ্ধ। তার অনুবাদে মূল কাব্যের ভাব, নৈতিকতা এবং চরিত্রের গভীরতা বাংলা পাঠকের জন্য সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
এর মূল দিকগুলো হলো:
-
ভাষার সরলতা ও প্রাঞ্জলতা: কাশীরাম দাসের অনুবাদে ভাষা সহজ, প্রাঞ্জল এবং ছন্দময়, যা পাঠকের জন্য কাব্যের ভাব বোঝা সহজ করে।
-
মূল ভাবের রক্ষা: তিনি মহাভারতের মূল কাহিনী, নৈতিক শিক্ষা ও চরিত্রের বৈশিষ্ট্য যথাযথভাবে রক্ষা করেছেন, ফলে পাঠক মূল কাব্যের গভীরতা অনুভব করতে পারেন।
-
সাহিত্যিক দক্ষতা: অনুবাদ শুধু ভাষান্তর নয়, বরং এতে সাহিত্যিক সৌন্দর্য ও আবেগের প্রভাব বজায় রাখা হয়েছে। এটি বাংলা সাহিত্যের কাব্যশৈলীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
-
শিক্ষামূলক ও নৈতিক দিক: মহাভারতের গল্পে নিহিত নৈতিকতা, ধর্ম এবং মানবিক মূল্যবোধ অনুবাদের মাধ্যমে পাঠকের কাছে স্পষ্টভাবে পৌঁছেছে।
-
বাংলা সাহিত্যে প্রভাব: কাশীরাম দাসের অনুবাদ বাংলা সাহিত্যের মহাকাব্যিক অনুবাদপ্রচেষ্টার মাপকাঠি স্থাপন করেছে এবং পরবর্তী অনুবাদক ও লেখকদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সারসংক্ষেপে, কাশীরাম দাস বাংলা ‘মহাভারত’ অনুবাদের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ অনুবাদক, কারণ তিনি মূল কাব্যের ভাব ও নৈতিক শিক্ষাকে সহজ, প্রাঞ্জল ও সাহিত্যিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলায় অনুবাদ করেছেন। তার অনুবাদ বাংলা সাহিত্যের কাব্যিক, শিক্ষামূলক ও নৈতিক প্রভাবকে যুগান্তকারীভাবে প্রভাবিত করেছে।
0
Updated: 1 week ago
মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি কে?
Created: 6 days ago
A
করিম উদ্দিন
B
হাবিব মিয়া
C
মতলব মিয়া
D
ছফা মিয়া
বাংলা সাহিত্যজগতে মেঘনা নদীকে কেন্দ্র করে বহু গল্প ও উপন্যাস রচিত হয়েছে, যার মধ্যে “মেঘনা নদীর মাঝি” প্রসিদ্ধ একটি গল্প। এই গল্পে নদীর মাঝি চরিত্রের মাধ্যমে লেখক গ্রামীণ জীবনের বাস্তব চিত্র, নদী নির্ভর মানুষের সংগ্রাম এবং নৌচালনার দক্ষতা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই কাহিনিতে মতলব মিয়া হচ্ছেন মেঘনা নদীর সবচেয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মাঝি।
নিচে বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হলো—
-
মতলব মিয়ার পরিচয়: তিনি পেশায় একজন মাঝি, যিনি মেঘনা নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর নৌকা চালানোর দক্ষতা, নদীর গতিপথ বোঝার ক্ষমতা এবং ঝড়-জল মোকাবিলার সাহস তাকে অন্য মাঝিদের মধ্যে আলাদা করে তুলেছে।
-
দক্ষতার পরিচয়: মতলব মিয়া মেঘনা নদীর প্রতিটি বাঁক, স্রোত, ভাটির ঢেউ, এমনকি কুয়াশার মধ্যে নৌকা চালানোর পথ পর্যন্ত জানেন। তিনি জানেন কখন পাল তোলা নিরাপদ, কখন নৌকা থামানো উচিত, আর কোথায় নদীর স্রোত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
-
নদী ও জীবনের সম্পর্ক: তাঁর জীবনে নদী কেবল জীবিকার উৎস নয়, এটি তাঁর জীবনের সঙ্গীও বটে। নদীর প্রতিটি ঢেউ যেন তাঁর সঙ্গে কথা বলে, যা তাঁর আত্মার সঙ্গে মিশে আছে।
-
সংগ্রামী চরিত্র: মতলব মিয়া সমাজের সাধারণ এক মানুষ, কিন্তু নিজের পেশায় তিনি নিবেদিতপ্রাণ। নদীতে ঝড় উঠলেও তিনি ভয় পান না। জীবনের প্রতিকূলতাকে জয় করাই তার দৈনন্দিন বাস্তবতা।
-
নৈতিক গুণাবলি: দক্ষতার পাশাপাশি তিনি সৎ, সাহসী ও পরিশ্রমী। অন্য মাঝিরা যখন নদীর ভয়াবহ স্রোত দেখে পিছিয়ে যায়, তখন মতলব মিয়া দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে নৌকার হাল ধরে রাখেন।
-
প্রতীকী অর্থে: সাহিত্যিকভাবে মতলব মিয়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রতীক, যারা পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং সাহসের মাধ্যমে জীবনের অনিশ্চয়তাকে জয় করে।
-
গল্পের শিক্ষা: এই চরিত্র আমাদের শেখায় যে দক্ষতা ও সাহস একসাথে থাকলে মানুষ যেকোনো বাধা অতিক্রম করতে পারে। মতলব মিয়া তার জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতেও ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস হারাননি।
সবশেষে বলা যায়, মতলব মিয়া কেবল মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি নন, তিনি নদীজীবনের প্রতীকও বটে। তাঁর মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা মানুষের আসল শক্তি নিহিত থাকে পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা ও সাহসের মধ্যে।
0
Updated: 6 days ago
“আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে?” রাঘবে শব্দটি কোন কারকে কোন বিভক্তি-
Created: 1 week ago
A
কর্মে ২য়া
B
করণে ৭মী
C
অপাদানে ৫মী
D
অপাদানে ৭মী
বাক্যটি হলো — “আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে?”। এখানে আমাদের কাজ হলো ‘রাঘবে’ শব্দটি কোন কারকে (case) এবং কোন বিভক্তিতে (vibhakti) ব্যবহার হয়েছে তা নির্ণয় করা। সঠিক উত্তর হলো (ঘ) অপাদানে ৭মী।
বিস্তারিত ব্যাখ্যা:
১. অপাদান কার ও ৭মী বিভক্তি:
-
অপাদান কার (Ablative case) হলো এমন কার যা কোনো ব্যক্তি বা বস্তু থেকে বিচ্যুতি বা উৎস নির্দেশ করে।
-
বাংলা ব্যাকরণে অপাদানকে সাধারণত ‘থেকে’, ‘দ্বারা’, ‘এর দ্বারা’ ইত্যাদি দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
-
৭মী বিভক্তি হলো ঐ শব্দের বিকৃত রূপ যা অপাদান কার নির্দেশ করে।
২. ‘রাঘবে’ বিশ্লেষণ:
-
শব্দটি হলো রাঘব + এ
-
এখানে ‘এ’ যোগ হয়েছে কোনো বস্তু বা ব্যক্তির মাধ্যমে বা দ্বারা নির্দেশ করার জন্য।
-
অর্থাৎ, ‘ভিখারী’ (ভিক্ষুক) রাঘবের মাধ্যমে বা রাঘব থেকে কিছু প্রাপ্ত হচ্ছে বোঝাচ্ছে।
-
তাই এটি অপাদানে ৭মী বিভক্তি।
৩. অন্যান্য বিকল্পের ভুল ব্যাখ্যা:
-
(ক) কর্মে ২য়া: কোনো ক্রিয়ার সরাসরি পদ বোঝায়, যেমন: রাম খেলো → ‘খেলো’ কর্মে।
-
(খ) করণে ৭মী: কোনো কাজের উপকরণ নির্দেশ করে, যেমন: লাঠি দিয়ে মারল → ‘লাঠি’ করণে।
-
(গ) অপাদানে ৫মী: ৫মী অপাদান ব্যবহৃত হয় কিছু নির্দিষ্ট অবস্থা বা মাধ্যমের ক্ষেত্রে, কিন্তু এখানে ৭মী প্রযোজ্য।
সারসংক্ষেপ:
-
বাক্যে ‘রাঘবে’ হলো কোন মাধ্যমে বা কার দ্বারা কিছু কার্য সম্পাদন হচ্ছে তা নির্দেশ করছে।
-
অতএব, এটি অপাদানে ৭মী বিভক্তি।
উপসংহার:
‘রাঘবে’ শব্দটি অপাদানে ৭মী বিভক্তিতে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই সঠিক উত্তর হলো (ঘ) অপাদানে ৭মী।
0
Updated: 1 week ago