ভাষা-আন্দোলন ভিত্তিক ‘কবর’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
A
জসীম উদ্দীন
B
আহমদ ছফা
C
শওকত ওসমান
D
মুনীর চৌধুরী
উত্তরের বিবরণ
ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত ‘কবর’ বাংলাদেশের নাট্যসাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি। এটি লিখেছিলেন মুনীর চৌধুরী, যিনি একাধারে ছিলেন সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে এই নাটকটি বাঙালির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। নিচে এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো।
• ‘কবর’ নাটকটি রচিত হয় ১৯৫৩ সালে, অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের ঠিক এক বছর পর। এতে মুনীর চৌধুরী সেই আন্দোলনের বেদনাকে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করেছেন। নাটকটি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি না হলেও এর প্রতিটি চরিত্র ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি বহন করে।
• এই নাটকটি একটি প্রতীকধর্মী একাঙ্ক নাটক, যেখানে জীবিত ও মৃতের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে ভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের চেতনা ফুটে উঠেছে। নাটকের মূল প্রতীক ‘কবর’—যা শুধু মৃতদের আশ্রয় নয়, বরং জাতির পুনর্জাগরণের চিহ্ন।
• মুনীর চৌধুরী (জন্ম: ১৯২৫, মৃত্যু: ১৯৭১) ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাট্যকার। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দি হয়ে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হন। তাই তিনি শুধু লেখক নন, এক মহান শহীদও।
• ‘কবর’ ছাড়াও তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাটক হলো ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’, ‘দণ্ডকারণ্য’, ‘চিঠি’ ও ‘মির্জা গালিব’। এই নাটকগুলোতেও তিনি সমাজের বাস্তবতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্নকে গভীরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
• নাটকের প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মা, ছেলে ও কবরবাসী, যারা মৃত্যুর মধ্য দিয়েও জীবনের বার্তা দেন। এটি প্রতীকীভাবে বোঝায়, ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে, তারা মৃত নয়—তাদের চেতনা বাঙালির অন্তরে চিরজাগরূক।
• নাটকটির ভাষা সহজ, সংলাপগুলো গভীর ও আবেগময়। এতে মুনীর চৌধুরী সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর হিসেবে বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষ ঘটিয়েছেন।
• ভাষা আন্দোলনভিত্তিক নাটক হিসেবে ‘কবর’ বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাসে প্রথম সফল প্রতীকী নাটক। এটি পরবর্তী নাট্যচর্চায় গভীর প্রভাব ফেলে এবং স্বাধীনতাবাদী চেতনার সাহিত্যধারাকে অনুপ্রাণিত করে।
• এই নাটকটি আজও বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্য এবং ভাষা শহীদদের স্মরণে নিয়মিতভাবে মঞ্চস্থ হয়।
সুতরাং, ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক আবহে রচিত ‘কবর’ নাটকের রচয়িতা মুনীর চৌধুরী—যিনি নিজের জীবন দিয়েও প্রমাণ করেছিলেন বাঙালির ভাষা ও স্বাধীনতার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।
0
Updated: 1 day ago
আলাওল কোন শতকের কবি ছিলেন?
Created: 2 months ago
A
অষ্টাদশ
B
সপ্তদশ
C
ষোড়শ
D
পঞ্চদশ
আলাওল
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আলাওল আনুমানিক ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলার ফতেয়াবাদ পরগনার জালালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরাকান রাজসভা তথা সপ্তদশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে পরিচিত।
তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য হলো ‘পদ্মাবতী’, যা তিনি মাগন ঠাকুরের উৎসাহে রচনা করেন।
সৈয়দ আলাওল রচিত বিখ্যাত সাহিত্যকর্মসমূহ—
-
পদ্মাবতী
-
হপ্তপয়কর
-
সিকান্দারনামা
-
তোহফা
-
সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামান ইত্যাদি
0
Updated: 2 months ago
নিচের কোনটি নিম্নবিবৃত স্বরধ্বনি?
Created: 1 month ago
A
ই
B
আ
C
উ
D
অ্যা
• নিম্নবিবৃত স্বরধ্বনি — আ
স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ:
উচ্চারণের সময় জিভের উচ্চতা, জিভের সামনের-পেছনের অবস্থান, এবং ঠোঁটের উন্মুক্তির উপর ভিত্তি করে স্বরধ্বনি ভাগ করা হয়।
১. উচ্চ স্বরধ্বনি – ই, উ
২. উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি – এ, ও
৩. নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি – অ্যা, অ
৪. নিম্ন স্বরধ্বনি – আ
ঠোঁটের উন্মুক্তি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ:
-
সংবৃত – ই, উ (ঠোঁট কম খোলা)
-
অর্ধ-সংবৃত – এ, ও
-
বিবৃত – আ (ঠোঁট বেশি খোলা)
-
অর্ধ-বিবৃত – অ্যা, অ
0
Updated: 1 month ago
'ষোল নয়, আমার মাতৃভাষার ষোলশত রূপ'- কে বলেছেন?
Created: 1 week ago
A
ড. নীলিমা ইব্রাহিম
B
ড. আহম্মদ শরীফ
C
মুনীর চৌধুরী
D
ড. মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম
উ. মুনীর চৌধুরী
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে মুনীর চৌধুরী ছিলেন গভীর চিন্তাশীল এক মনীষী। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "ষোল নয়, আমার মাতৃভাষার ষোলশত রূপ" বাংলা ভাষার বহুমাত্রিকতা ও বৈচিত্র্যের প্রতীক। তিনি এই উক্তির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাংলা ভাষা কেবল একটি নির্দিষ্ট রূপে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর রয়েছে অসংখ্য ধ্বনি, উপভাষা ও প্রকাশভঙ্গি।
এই উক্তির মূল বক্তব্য হলো, মাতৃভাষা কোনো যান্ত্রিক বা একঘেয়ে মাধ্যম নয়। এটি মানুষের অনুভূতি, চিন্তা, সংস্কৃতি ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত ও প্রসারিত হয়। মুনীর চৌধুরীর মতে, বাংলা ভাষার সৌন্দর্য এর বৈচিত্র্যের মধ্যেই নিহিত।
ভাষার এই বৈচিত্র্য প্রকাশ পায় শব্দের উচ্চারণ, শব্দভাণ্ডার, বাক্যগঠন এবং আঞ্চলিক ব্যবহারে। গ্রামীণ ও শহুরে ভাষার পার্থক্য, সাহিত্যিক ও কথ্য ভাষার ভিন্নতা—সবই এই ভাষার প্রাণচাঞ্চল্যের প্রমাণ।
তিনি আরও মনে করতেন, ভাষার শক্তি তখনই প্রকৃত অর্থে প্রকাশ পায় যখন তা সব শ্রেণি ও অঞ্চলের মানুষের মুখে জীবন্ত থাকে। তাই তিনি বাংলা ভাষার উপভাষা, আঞ্চলিক রূপ এবং লোকজ উচ্চারণের মূল্যায়ন করেছেন। এই ধারণা বাংলা ভাষাকে কৃত্রিম সীমারেখা থেকে মুক্ত করে একটি বহুমাত্রিক মানবিক প্রকাশের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
মুনীর চৌধুরীর ভাষা-ভাবনায় দেখা যায় যে, তিনি বাংলা ভাষাকে কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মতে, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা মানে কেবল তার সাহিত্য পড়া নয়, বরং তার প্রতিটি রূপ ও প্রকাশকে শ্রদ্ধা করা।
এই দৃষ্টিভঙ্গি ভাষার একরূপতার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। তিনি দেখিয়েছেন যে, একটি ভাষার শক্তি তার শব্দভাণ্ডারের আকারে নয়, বরং তার পরিবর্তন ও অভিযোজনক্ষমতায়। এভাবেই বাংলা ভাষা বিভিন্ন যুগে, অঞ্চলে এবং মানুষের অভিজ্ঞতায় নতুন নতুন রূপ ধারণ করেছে—যা একে জীবন্ত ও চিরন্তন করে তুলেছে।
অতএব, মুনীর চৌধুরীর উক্তিটি বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য, গতিশীলতা ও সার্বজনীনতার এক অনন্য ঘোষণা, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি ভাষার সৌন্দর্য তার বহুরূপীতায়, একরূপতায় নয়।
0
Updated: 1 week ago