কোনটি মধ্যযুগের রচনা?
A
সারদামঙ্গল
B
মনসামঙ্গল
C
কেরামতমঙ্গল
D
বৃক্ষমঙ্গল
উত্তরের বিবরণ
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে রচিত সাহিত্যগুলোর মধ্যে মনসামঙ্গল কাব্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় রচনা। এটি বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার অন্তর্গত, যেখানে দেবদেবীর মাহাত্ম্য, ভক্তি ও মানবজীবনের নানা দিক চিত্রিত হয়েছে। মধ্যযুগে ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব বাংলা সাহিত্যে গভীরভাবে পড়েছিল, আর সেই প্রভাবই মনসামঙ্গলে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
-
মনসামঙ্গল কাব্য মূলত মনসা দেবীর মাহাত্ম্য ও তার পূজার কাহিনি অবলম্বনে রচিত। এই কাব্যে দেবী মনসাকে সাপের দেবী বা বিষহরিণী রূপে দেখানো হয়েছে। তিনি মানবজীবনের দুঃখ, দুর্ভাগ্য ও বিপদের সময় রক্ষা করেন।
-
এই কাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেন চাঁদ সৌদাগর—যিনি মনসা দেবীর পূজা করতে অস্বীকার করায় নানা বিপদের সম্মুখীন হন। পরিশেষে দেবীর ইচ্ছায় তাঁর পুত্র লক্ষ্মীন্দর সাপের কামড়ে মারা যায় এবং সেই ঘটনার মধ্য দিয়েই কাব্যের ধর্মীয় শিক্ষাটি প্রকাশ পায়।
-
মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিপ্রদাস পিপিলাই, বিহারীলাল চক্রবর্তী, নারায়ণ দেব, ও কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ। তাঁদের রচনাগুলোর মাধ্যমে এই কাব্যধারা সাধারণ মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
-
এই কাব্যে ভক্তি, পুরাণ, সামাজিক জীবন ও মানবিক সম্পর্ক সুন্দরভাবে মিশে গেছে। দেবতা ও মানুষের মধ্যে সম্পর্ক, বিশ্বাসের সংঘাত এবং ধর্মীয় প্রভাবের বাস্তব চিত্র এতে ফুটে উঠেছে।
-
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মনসামঙ্গল কাব্যের পাশাপাশি আরও কিছু বিখ্যাত মঙ্গলকাব্য দেখা যায়, যেমন—ধর্মমঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, শিবমঙ্গল, কালীমঙ্গল ইত্যাদি। তবে মনসামঙ্গল জনপ্রিয়তার দিক থেকে সবচেয়ে শীর্ষে অবস্থান করে।
-
এই কাব্যের ভাষা সহজ, ছন্দোময় ও আবেগপূর্ণ। মধ্যযুগে সাধারণ মানুষের কাছে ধর্মীয় শিক্ষা ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে মনসামঙ্গল পাঠ প্রচলিত ছিল।
-
কাব্যটিতে ভক্তি ও লোকজ সংস্কৃতির সংমিশ্রণ বাংলা সাহিত্যের একটি ঐতিহাসিক ধারা গঠন করে, যা পরবর্তী সাহিত্যিকদের ওপরও প্রভাব ফেলেছিল।
-
এই রচনার মধ্য দিয়ে কবিরা কেবল ধর্মীয় প্রচারই করেননি, বরং সমাজজীবনের নানা বাস্তব চিত্রও তুলে ধরেছেন—যেমন নারীর অবস্থান, ব্যবসায়ী শ্রেণির জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক ইত্যাদি।
সব মিলিয়ে মনসামঙ্গল কাব্য মধ্যযুগের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের এক অমূল্য সাহিত্য-নথি, যা বাংলা সাহিত্যে মঙ্গলকাব্যের সোনালি অধ্যায় হিসেবে স্থায়ী স্থান দখল করে আছে।
0
Updated: 1 day ago