হাইপার পাইরেক্সিয়া এমন এক অবস্থা যেখানে দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং তা সাধারণ জ্বরের সীমা অতিক্রম করে। এই অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৬° ফারেনহাইট (৪১.১° সেলসিয়াস) বা তারও বেশি হয়ে যায়, যা জীবনঘাতী হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। এটি সাধারণত তীব্র সংক্রমণ, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের সমস্যায় অথবা তাপঘাতের (heat stroke) কারণে হয়ে থাকে।
• হাইপার পাইরেক্সিয়ার সংজ্ঞা: যখন দেহের তাপমাত্রা ১০৬° ফারেনহাইটের বেশি হয়, তখন তাকে হাইপার পাইরেক্সিয়া বলা হয়। এটি এক ধরনের অতি-তীব্র জ্বর যা সাধারণ জ্বরের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক।
• স্বাভাবিক শরীরের তাপমাত্রা: স্বাভাবিক দেহের তাপমাত্রা প্রায় ৯৮.৬° ফারেনহাইট (৩৭° সেলসিয়াস)। এই সীমা থেকে ১০০°–১০২° ফারেনহাইট পর্যন্তকে সাধারণ জ্বর হিসেবে ধরা হয়, ১০৩°–১০৫° ফারেনহাইট পর্যন্ত উচ্চ জ্বর, আর ১০৬° ফারেনহাইটের বেশি হলে তা হাইপার পাইরেক্সিয়া।
• কারণ: এই তীব্র জ্বর সাধারণত সংক্রমণজনিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, বা সেপসিসের কারণে হতে পারে। এছাড়াও হিট স্ট্রোক, ব্রেন হেমোরেজ, বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া থেকেও এমন তাপমাত্রা দেখা দিতে পারে।
• লক্ষণ: রোগীর শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, অচেতনতা, মাথা ঘোরা, ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে অঙ্গ বিকল বা মৃত্যু ঘটতে পারে।
• চিকিৎসা: প্রথমে শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে হয়। এজন্য ঠান্ডা পানি দিয়ে গা মুছে দেওয়া, ফ্যানের নিচে রাখা বা বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিপাইরেটিক ওষুধ দেওয়া হয় এবং সংক্রমণজনিত হলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। গুরুতর অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
• ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ: ছোট শিশু, বয়স্ক মানুষ, এবং যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাপদাহ বা হিটওয়েভ চলাকালে এই রোগের প্রবণতা বাড়ে।
• প্রতিরোধ: পর্যাপ্ত পানি পান, গরম পরিবেশে দীর্ঘ সময় না থাকা, এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে দ্রুত ঠান্ডা পরিবেশে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং বলা যায়, হাইপার পাইরেক্সিয়া হলো এমন এক জ্বর যেখানে শরীরের তাপমাত্রা ১০৬° ফারেনহাইটের বেশি হয়, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।