বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের শেষ কবি হিসেবে পরিচিত ভারতচন্দ্র রায়। তাই সঠিক উত্তর হলো ভারতচন্দ্র রায়।
ভারতচন্দ্র রায় (প্রায় ১৭২০–১৭৯৩) বাংলা ভাষার ইতিহাসে মধ্যযুগীয় কাব্যধারার শেষ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেন। তিনি বাংলা কাব্যে নাট্যরস, প্রেম ও রোমান্টিকতার সমৃদ্ধ চিত্রায়ণ করেছেন। তাঁর কাব্যধারায় মধ্যযুগীয় ভক্তি, নৈতিকতা ও রূপকথামূলক কাহিনীর প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা পরবর্তী সময়ে বাংলা নবজাগরণের কবিদের সাহিত্যচিন্তায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
ভারতচন্দ্র রায়ের সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা হলো ‘সীতারামকাব্য’। এই কাব্যগ্রন্থে তিনি রামায়ণ কাহিনীর প্রভাব নিয়ে বাংলা ভাষায় একটি সুন্দর, নাট্যরূপী কাব্য সৃষ্টি করেছেন। তাঁর রচনায় মধুরতা, অলঙ্কার ও ভাষার সুষম ব্যবহার লক্ষণীয়। এছাড়া কাব্যে চরিত্রের আবেগ, প্রেম ও ভক্তি প্রকাশের সূক্ষ্মতা মধ্যযুগীয় বাংলা কবিতার ধারা ধরে রাখে।
মধ্যযুগের বাংলা কবিতায় ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ভাবের পাশাপাশি সামাজিক জীবন ও মানবীয় অনুভূতির প্রতিফলনও দেখা যায়। ভারতচন্দ্র রায়ের রচনায় এই সব উপাদান সুন্দরভাবে মিশে গেছে। তিনি কাব্যধারায় মধ্যযুগীয় রূপক ও অলঙ্কার ব্যবহারের শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছেছেন, ফলে বাংলা সাহিত্যজগতে মধ্যযুগীয় কাব্যের সমাপ্তি চিহ্নিত হয়।
ভারতচন্দ্র রায়ের রচনার বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
ভাষার সহজতা ও সৌন্দর্য: কাব্যের ভাষা সহজ ও মনোরম, যা সাধারণ পাঠককেও সহজে প্রভাবিত করে।
আলঙ্কার ও ছন্দের ব্যবহার: অলঙ্কার, অনুপ্রাস ও ছন্দরীতির মাধ্যমে কবিতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি।
প্রেম ও ভক্তি: কাব্যে মানবিক ও আধ্যাত্মিক প্রেমের সংমিশ্রণ।
সংক্ষেপে, ভারতচন্দ্র রায় বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় কবিতার শেষ প্রতীক। তাঁর রচনার মাধ্যমে মধ্যযুগীয় কাব্যধারা শেষ হয় এবং বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণের নতুন ধারা শুরু হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।