জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্য কোনটি?
A
রূপসী বাংলা
B
ঝরা পালক
C
ধূসর পান্ডুলিপি
D
বনলতা সেন
উত্তরের বিবরণ
জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলো ‘ঝরা পালক’। এটি প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে এবং বাংলা আধুনিক কবিতার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটায়। এই কাব্যের মাধ্যমে জীবনানন্দ তাঁর স্বতন্ত্র কাব্যভাষা, প্রকৃতিপ্রেম ও একান্ত মানবচেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন, যা পরবর্তীকালে তাঁকে বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
‘ঝরা পালক’ কাব্যে জীবনানন্দের কবিসত্তা মূলত নিঃসঙ্গ, ভাবপ্রবণ ও গভীর পর্যবেক্ষণশীল। এখানে প্রকৃতি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং কবির অন্তর্লোকের প্রতিফলন। তিনি নিস্তব্ধতা, নির্জনতা ও সময়ের ক্ষয়কে এমনভাবে কাব্যে রূপ দিয়েছেন, যা পূর্ববর্তী বাংলা কবিতায় বিরল। তাঁর কবিতায় দেখা যায় জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা, অস্তিত্বের অনিশ্চয়তা এবং সৌন্দর্যের ক্ষয়—এই তিনটি বিষয়ের মিলিত রূপ।
এই গ্রন্থের কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা যেমন ‘অন্ধকার’, ‘বনলতা সেন’ (যার পরবর্তীকালে আলাদা কাব্যগ্রন্থ হয়), ‘রাত্রি’, ‘চাঁদের হাসি’ ইত্যাদি তাঁর কাব্যচিন্তার গভীরতা তুলে ধরে। এখানে ব্যবহৃত ভাষা সহজ হলেও তার ভেতরে নিহিত ভাবগাম্ভীর্য ও কাব্যরস পাঠককে এক অনন্য অভিজ্ঞতায় পৌঁছে দেয়।
‘ঝরা পালক’-এর কবিতাগুলিতে রোমান্টিকতা ও বাস্তবতার এক সূক্ষ্ম সংমিশ্রণ রয়েছে। কবি কখনো প্রকৃতির নির্জনতা দিয়ে আত্মার বেদনা প্রকাশ করেছেন, আবার কখনো জীবনের অনিত্যতা নিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়েছেন। তাঁর কবিতায় ব্যবহৃত নিষ্প্রাণ বস্তু, গ্রামীণ প্রকৃতি ও নীরব সময়ের চিত্র এক বিশেষ প্রতীকী অর্থ ধারণ করে, যা বাংলা কবিতাকে দিয়েছে নতুন দিকনির্দেশ।
পরবর্তীকালে ‘ধূসর পান্ডুলিপি’, ‘রূপসী বাংলা’, ‘বনলতা সেন’ প্রভৃতি গ্রন্থে তাঁর কবিসত্তা আরও পরিণত ও গভীর হয়েছে, কিন্তু সেই সূচনালগ্নের শিল্পরূপটি প্রথম প্রকাশ পায় ‘ঝরা পালক’-এ। তাই সাহিত্য ইতিহাসে এটি শুধু তাঁর প্রথম কাব্য নয়, বরং বাংলা আধুনিক কাব্যের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবেও স্বীকৃত।
0
Updated: 22 hours ago
জীবনানন্দ দাশকে 'নির্জনতার কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন-
Created: 3 weeks ago
A
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
C
বিষ্ণু দে
D
বুদ্ধদেব বসু
জীবনানন্দ দাশ বাংলা আধুনিক কবিতার এক অনন্য স্রষ্টা, যিনি নিজের নিঃসঙ্গ জীবনযাপন, গভীর মনন ও প্রকৃতিপ্রেমের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর কবিতায় নিস্তব্ধতা, সময়, মৃত্যু ও সৌন্দর্যের এক মায়াময় মেলবন্ধন পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন এমন এক কবি, যিনি আলোচনার কেন্দ্র থেকে দূরে থেকেও বাংলা কাব্যভুবনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছেন।
-
বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশকে ‘নির্জনতার কবি’ বলে অভিহিত করেন।
-
জীবনানন্দ ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধা, নীরব ও আত্মমগ্ন মানুষ, যিনি জনজীবনের কোলাহল থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন।
-
তিনি স্বেচ্ছায় নিজের ব্যক্তিজীবন আড়াল করে রেখেছিলেন এবং নিজের সম্পর্কে প্রচলিত বিভ্রান্তিগুলোকেও গুরুত্ব দেননি।
-
এই স্বভাবগত একান্ততা ও নিঃসঙ্গতার কারণেই তাঁকে বুদ্ধদেব বসু ‘নির্জনতার কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতা সম্পর্কে বলেছিলেন যে, তাঁর কবিতায় রয়েছে চিত্ররূপময়তা ও দৃশ্যমান কাব্যিকতা, যা বাংলা কবিতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
-
তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, সময়, মৃত্যু, নারী, একাকিত্ব ও স্মৃতির বোধ গভীর প্রতীকী অর্থে উপস্থিত।
-
জীবনানন্দ নিজের ভেতরের জগৎকে প্রকাশ করেছেন অন্তর্মুখী কাব্যভাষায়, যা তাঁকে তিরিশের কবিদের মধ্যে অনন্য করেছে।
জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
-
জন্ম: ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, বরিশাল।
-
আদি নিবাস: বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রাম।
-
পিতা: সত্যানন্দ দাশ – শিক্ষক, সমাজসেবক এবং ব্রহ্মবাদী পত্রিকার সম্পাদক।
-
মাতা: কুসুমকুমারী দাশ – প্রখ্যাত কবি (“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে…” কবিতার রচয়িতা)।
-
তিনি রবীন্দ্রবিরোধী তিরিশের কবিতা আন্দোলনের অন্যতম কবি, যেখানে আধুনিক বোধ ও বাস্তবতা প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।
-
‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ কাব্যের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতায় আইরিশ কবি ডব্লিউ. বি. ইয়েটস-এর ‘The Falling of the Leaves’ কবিতার সঙ্গে ভাবগত মিল পাওয়া যায়।
-
‘মহাপৃথিবী’ কাব্যের ‘হায় চিল’ কবিতা ইয়েটসের ‘He Reproves the Curlew’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
-
‘বনলতা সেন’ কবিতায় অ্যাডগার অ্যালান পো-এর ‘To Helen’ কবিতার প্রভাব বিদ্যমান।
-
তাঁর ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ ১৯৫৩ সালে নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত হয়।
-
‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি ষাটের দশকের বাঙালির জাতিসত্তার আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-এ বাঙালির সংগ্রামী চেতনাকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করে।
-
‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থের জন্য তিনি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৪) লাভ করেন।
-
মৃত্যু: ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর, কলকাতায়।
জীবনানন্দ দাশের উপাধি / অভিধা:
-
ধূসরতার কবি – তাঁর কবিতায় বিষণ্ণতা, সময়ের ধূসরতা ও অনিশ্চয়তার প্রকাশ আছে বলে।
-
তিমির হননের কবি – তাঁর কাব্যে অন্ধকার ভেদ করে আলো ও জ্ঞানের অনুসন্ধান প্রতিফলিত হয়েছে।
-
রূপসী বাংলার কবি – বাংলার প্রকৃতি, নদী, ক্ষেত, পাখি ও মাটির গন্ধে ভরপুর তাঁর কাব্যজগৎ।
-
নির্জনতার কবি – একান্ত আত্মমগ্ন, নীরব ও চিন্তাশীল জীবনযাপনের প্রতিফলন তাঁর কবিতায় স্পষ্ট।
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন এমন এক কবি, যিনি নিজের নিঃসঙ্গতার ভেতর থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এক নতুন কাব্যভাষা—যা আজও বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে নান্দনিক ও গভীর কণ্ঠগুলোর একটি।
0
Updated: 3 weeks ago
জীবননান্দ দাশকে 'নির্জনতার কবি' হিসেবে আখ্যায়িত করেন কে?
Created: 2 months ago
A
বুদ্ধদেব বসু
B
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
C
বিহারীলাল চক্রবর্তী
D
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
জীবনানন্দ দাশ
-
উপাধি / অভিধা:
-
ধূসরতার কবি
-
তিমির হননের কবি
-
রূপসী বাংলার কবি
-
নির্জনতার কবি (বুদ্ধদেব বসু তাঁকে এভাবে আখ্যায়িত করেছেন)
-
-
ব্যক্তিত্ব:
-
সাদাসিধা মানুষ, জনতার কোলাহল থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করতেন।
-
আজীবন নিজেকে আড়াল করে রাখতে চেয়েছেন এবং সচেতনভাবে নিজের প্রসঙ্গে বিভ্রান্তিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।
-
-
জীবন ও পরিবার:
-
জন্ম: ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, বরিশাল
-
আদি নিবাস: বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রাম
-
পিতা: সত্যানন্দ দাশ (স্কুলশিক্ষক ও সমাজসেবক, ব্রহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক)
-
মাতা: কুসুমকুমারী দাশ (বিখ্যাত কবি)
-
-
সাহিত্যিক পরিচিতি:
-
রবীন্দ্রবিরোধী তিরিশের কাব্যধারার কবি
-
প্রধান কাব্যগ্রন্থ:
-
ধূসর পাণ্ডুলিপি (‘মৃত্যুর আগে’ – W. B. Yeats-এর The Falling of the Leaves এর সঙ্গে মিল)
-
মহাপৃথিবী (‘হায় চিল’ – Yeats-এর He reproves the Curlew এর সঙ্গে মিল)
-
বনলতা সেন (Edgar Allan Poe-এর To Helen এর প্রভাব) – ১৯৫৩ সালে নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত
-
রূপসী বাংলা – ১৯৬০-এর দশকে জাতিসত্তা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাঙালি জনতাকে অনুপ্রাণিত করেছে
-
-
-
মৃত্যু: ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর, কলকাতা
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 2 months ago
'তিমির হননের কবি' উপাধিটি কার?
Created: 11 hours ago
A
জীবনানন্দ দাশ
B
কাজী নজরুল ইসলাম
C
শামসুর রাহমান
D
আবদুল কাদির
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবিতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় গ্রামবাংলার নিসর্গ, রূপকথা ও পুরাণের জগৎকে এক অনন্য কাব্যিক সৌন্দর্যে রূপ দিয়েছেন। তাঁর কবিতায় বাংলার প্রকৃতি, নদী, মাঠ, গাছপালা, পাখি ও মানুষের নীরব জীবন এমনভাবে ফুটে উঠেছে যে তিনি পরিচিত হয়েছেন ‘রূপসী বাংলার কবি’ নামে।
-
বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দকে বলেছেন “নির্জনতম কবি”, কারণ তাঁর কবিতায় একান্ত নিঃসঙ্গতা ও আত্মমগ্নতার ছায়া স্পষ্ট।
-
জীবনানন্দের কাব্যে প্রকৃতি, সময়, স্মৃতি, নিঃসঙ্গতা ও মৃত্যুচেতনা মিশে আছে গভীরভাবে।
-
তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে —
-
রূপসী বাংলা (১৯৫৭)
-
বনলতা সেন (১৯৪২)
-
মহাপৃথিবী (১৯৪৪)
-
বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)
-
শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪)
-
-
তাঁর কাব্যে ব্যবহৃত ভাষা, চিত্রকল্প ও নিসর্গচেতনা বাংলা কবিতাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।
অতএব, জীবনানন্দ দাশ শুধু প্রকৃতির কবি নন, তিনি বাংলা কবিতার অন্তর্মুখী অনুভূতি ও নান্দনিকতার এক গভীর প্রতীক হিসেবে চিরস্মরণীয়।
0
Updated: 11 hours ago