মধ্যযুগের প্রথম কবি কে?
A
চন্ডীদাস
B
বিদ্যাপতি
C
দৌলত কাজী
D
বডু চন্ডীদাস
উত্তরের বিবরণ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মধ্যযুগ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে ধর্মীয় ভাব, ভক্তি ও মানবপ্রেম কবিতার মূল বিষয় হয়ে উঠেছিল। এই যুগের সূচনা হয় প্রায় চতুর্দশ শতাব্দীর দিকে। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলা মধ্যযুগের প্রথম কবি হলেন বডু চন্ডীদাস। তাই সঠিক উত্তর হলো বডু চন্ডীদাস।
বডু চন্ডীদাস ছিলেন মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের এক অগ্রগণ্য কবি, যিনি প্রেম ও ভক্তিকে একসঙ্গে মিলিয়ে কবিতার এক অনন্য ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর রচনার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’, যা বাংলা সাহিত্যের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাব্যগ্রন্থ হিসেবেও বিবেচিত। এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু মূলত কৃষ্ণ ও রাধার প্রেমকাহিনি, তবে এর ভেতরে নিহিত রয়েছে গভীর ধর্মীয় ও মানবিক দার্শনিক ভাবনা।
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ গ্রন্থটি ১৯০৯ সালে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়। এতে মোট ১৩টি খণ্ড ও প্রায় ৪১৮টি পদ রয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থের ভাষা প্রাচীন রূপের বাংলা, যেখানে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও দেশজ শব্দের মিশ্রণ দেখা যায়। এটি ভাষা ও সাহিত্য গবেষণার জন্য অমূল্য দলিল, কারণ এর মাধ্যমে মধ্যযুগের প্রথম দিককার বাংলা ভাষার ধ্বনিগত ও রূপগত বৈশিষ্ট্য জানা যায়।
বডু চন্ডীদাসের কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য হলো মানবপ্রেম ও ভক্তির সংমিশ্রণ। তিনি কৃষ্ণ-রাধার প্রেমের মাধ্যমে মানবজীবনের আনন্দ, দুঃখ, আকুলতা ও আত্মার মুক্তির তৃষ্ণাকে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করেছেন। তাঁর কবিতায় ধর্মীয় ভক্তি কেবল ঈশ্বরপ্রীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা মানুষের অন্তর্জগতের অনুভূতি ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেও ধরা দেয়।
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর সংলাপনির্ভর কাঠামো। এখানে চরিত্রগুলোর মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে কাহিনি এগোয়, যা নাট্যরীতির প্রভাব প্রকাশ করে। এই দিক থেকে একে বাংলা নাট্যসাহিত্যের প্রাথমিক রূপ হিসেবেও দেখা যায়।
বডু চন্ডীদাসের রচনার মাধ্যমে মধ্যযুগের সাহিত্যে যে ভক্তিমূলক ধারার সূচনা হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে আরও বিকশিত হয়। তাঁর প্রভাবেই পরে চন্ডীদাস, বিদ্যাপতি, বড়ু চন্ডীদাস, জ্ঞানদাস প্রমুখ কবিরা বৈষ্ণবপদের রচনায় অনুপ্রাণিত হন। বলা যায়, তিনি ছিলেন বাংলা বৈষ্ণব সাহিত্যের পথপ্রদর্শক।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন, বডু চন্ডীদাস ছিলেন বীরভূম জেলার নানুর অঞ্চলের বাসিন্দা, এবং তিনি সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীতে জীবিত ছিলেন। তাঁর রচনায় যে গভীর মানবিক অনুভূতি ও আধ্যাত্মিক প্রেম প্রকাশ পেয়েছে, তা তাঁকে শুধু মধ্যযুগের প্রথম কবিই নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবেও প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
সবশেষে বলা যায়, বডু চন্ডীদাসই বাংলা মধ্যযুগের প্রথম কবি, যিনি ভক্তি ও মানবপ্রেমকে কাব্যভাষায় রূপ দিয়ে বাংলা সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ শুধু সাহিত্যিক সৃষ্টি নয়, বরং বাংলা ভাষার বিবর্তনের এক জীবন্ত নিদর্শন, যা আজও সাহিত্য ও ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
0
Updated: 22 hours ago
ভবানী দাস রচিত 'ময়নামতির গান' কোন যুগের নিদর্শন?
Created: 4 weeks ago
A
প্রাচীন যুগের
B
মধ্য যুগের
C
আধুনিক যুগের
D
অন্ধকার যুগের
ময়নামতির গান হলো ভবানী দাস রচিত এবং এটি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের নাথ সাহিত্যের একটি নিদর্শন। এই সাহিত্য ধারায় সাধন-নির্দেশিকা এবং গাথাকাহিনি বা আখ্যায়িকা—দুই ধরনের রূপ বিদ্যমান।
-
ময়নামতির গান
-
রচয়িতা: ভবানী দাস
-
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের নাথ সাহিত্যের অন্তর্গত
-
সাহিত্যটি দুটি ধারায় বিকাশ লাভ করে: সাধন-নির্দেশিকা এবং গাথাকাহিনি/আখ্যায়িকা
-
-
উল্লেখযোগ্য নাথ সাহিত্য
-
গোরাক্ষ বিজয় — রচয়িতা: শেখ ফয়জুল্লাহ
-
গোপীচন্দ্রের সন্যাস — রচয়িতা: শুকুর মাহমুদ
-
মীনচেতন — রচয়িতা: শ্যামাদাস সেন
-
গোর্খবিজয় — রচয়িতা: ভীমসেন রায়
-
-
নাথ গীতিকা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
-
প্রাপ্ত পুথির ভিত্তিতে ময়নামতী-গোপীচন্দ্রের গান-এর তিনজন কবির সন্ধান পাওয়া যায়: দুর্লভ মল্লিক, ভবানী দাস, এবং শুকুর মাহমুদ
-
দুর্লভ মল্লিকের কাব্যের নাম: গোবিন্দচন্দ্র গীত, সম্পাদনা করেছেন শিবচন্দ্র শীল
-
নলিনীকান্ত ভট্টশালীর সম্পাদনায় ভবানী দাসের ময়নামতীর গান এবং শুকুর মাহমুদের গোপীচাঁদের সন্ন্যাস কাব্যদুটি ঢাকা সাহিত্য পরিষৎ থেকে প্রকাশিত হয়
-
0
Updated: 4 weeks ago
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন কী?
Created: 1 month ago
A
চর্যাপদ
B
বৈষ্ণব পদাবলী
C
নাথ সাহিত্য
D
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য। এটি রাধাকৃষ্ণের প্রনয়কথা বিষয়ক একটি আখ্যান কাব্য। এটি রচনা করেন বড়ু চন্ডীদাস।
১৯০৯ সালে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ পশ্চিম বঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের নিকটটবর্তী কাকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের বাড়ির গোয়ালঘর এর মাচার উপর থেকে এর পুঁথি আবিষ্কার করেন। অন্যদিকে, মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বৈষ্ণব পদাবলি।
0
Updated: 1 month ago
যুগ সন্ধিক্ষণের কবি হিসেবে পরিচিত কে?
Created: 5 months ago
A
বিহারীলাল চক্রবর্তী
B
ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত
C
ভারত চন্দ্র রায় গুণাকর
D
আলাওল
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯): কবি, সাংবাদিক। ‘ক্রমবর্ধমান যুগ’ ও ‘আধুনিক যুগের মিলনকারী’ কবি হিসেবে পরিচিত। কারণ তিনি সমকালের সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করলেও তাঁর ভাষা, ছন্দ ও অলঙ্কার ছিলো মধ্যযুগীয়। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপই ছিল তাঁর রচনার বিশেষত্ব।
- ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রথম বাংলা দৈনিক পত্রিকা ‘সংবাদ প্রভাকর’ সম্পাদনা করেন। তিনি ১৮৩১ সালে সংবাদ প্রভাকর (সাপ্তাহিক) পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। এবং ১৮৩৯ সাল থেকে এটি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
- তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো কবিয়ালদের লুপ্তপ্রায় জীবনী উদ্ধার করে প্রকাশ করা।
- ঈশ্বরচন্দ্র সংবাদ প্রভাকর ছাড়াও সংবাদ রত্নাবলী, পাষণ্ডপীড়ন ও সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকাও সম্পাদনা করেন।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর এবং বাংলাপিডিয়া; লাইব্রেরি এশিয়াটিক সোসাইটি। (Slight correction of the source, "লাইব্রেরি এশিয়াটিক সোসাইটি" seems more appropriate than "লাইভ এশিয়াটিক লেকচার")
0
Updated: 5 months ago