চর্যাপদের আবিষ্কারক কে?
A
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
B
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
C
ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
D
ডক্টর সুকুমার সেন
উত্তরের বিবরণ
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ বাংলা ভাষার ইতিহাসে এক অমূল্য সম্পদ। এই অসাধারণ কাব্যসংগ্রহের সন্ধান পেয়েছিলেন বিশিষ্ট পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তাই সঠিক উত্তর হলো হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
চর্যাপদ আবিষ্কারের ঘটনাটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজগ্রন্থাগারে গবেষণা করতে গিয়ে প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত কিছু পদ আবিষ্কার করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই পুঁথিটি প্রকাশ করেন “হাজার বছরের পুরানো বৌদ্ধ গান ও দোহা” নামে। এই বই প্রকাশের মাধ্যমেই চর্যাপদের সঙ্গে আধুনিক বিশ্ব পরিচিত হয় এবং বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপ সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ছিলেন একাধারে ইতিহাসবিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক। তাঁর জন্ম ১৮৫৩ সালে এবং মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩১ সালে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন এবং পণ্ডিত হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গভীর অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি ১৮৯০-এর দশকে নেপাল গমন করেন। সেখানে নেপালের রাজদরবারের রাজগ্রন্থাগারে সংরক্ষিত এক প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেন, যা পরবর্তীতে চর্যাপদ নামেই পরিচিত হয়।
চর্যাপদে মোট ৪৭টি পদ পাওয়া গেছে, যা সিদ্ধাচার্য নামে পরিচিত বৌদ্ধ সাধকদের রচনা। এই পদগুলো মূলত ধর্মীয়, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক ভাবসম্পন্ন, তবে ভাষা ও ছন্দে এতে ফুটে উঠেছে বাংলা কবিতার প্রাথমিক রূপ। ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, চর্যাপদের ভাষা হলো প্রাচীন আধ্যবাহিকা বা প্রাক-বাংলা, যা পরবর্তীকালে আধুনিক বাংলা ভাষায় রূপ নেয়।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আবিষ্কারের আগে বাংলা ভাষার ইতিহাসের সূচনা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে নানা মতভেদ ছিল। কেউ কেউ মনে করতেন বাংলা ভাষা মধ্যযুগে উদ্ভূত, আবার কেউ ভাবতেন এর শিকড় পালি বা সংস্কৃত ভাষায়। কিন্তু চর্যাপদের সন্ধান পাওয়ার পর প্রমাণিত হয় যে, বাংলা ভাষার অস্তিত্ব অন্তত এক হাজার বছর পুরোনো।
এই আবিষ্কারের ফলে বাংলা ভাষার বিবর্তন-ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত হয়। চর্যাপদ শুধু প্রাচীন কাব্যের নিদর্শনই নয়, বরং এটি বাংলা সাহিত্যের সূতিকাগার। এখানে ধর্মীয় উপমার আড়ালে মানবজীবনের বাস্তবতা, প্রেম, সাধনা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে প্রতীকী ভাষায়।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই পুঁথির ভাষা, রচয়িতা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেন এবং বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভিত্তি আরও মজবুত করেন। তাঁর গবেষণা আজও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ইতিহাসে পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হয়।
সবশেষে বলা যায়, চর্যাপদের আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাংলা ভাষার ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন, কারণ তাঁরই প্রচেষ্টায় আমরা জানতে পেরেছি বাংলা সাহিত্যের শেকড় কত গভীর এবং কত প্রাচীন। তাঁর এই আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যকে কেবল সমৃদ্ধ করেনি, বরং এর গৌরবময় অতীতকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছে।
0
Updated: 22 hours ago
চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদ প্রকাশ করেন কে?
Created: 1 month ago
A
প্রবোধচন্দ্র বাগচী
B
যতীন্দ্র মোহন বাগচী
C
প্রফুল্ল মোহন বাগচী
D
প্রণয়ভূষণ বাগচী
চর্যাপদকে ঘিরে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইতিহাসে পাওয়া যায়। ১৯৩৮ সালে ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী চর্যাপদের তিব্বতী ভাষার অনুবাদ আবিষ্কার করেন এবং তা প্রকাশ করে দীর্ঘদিনের রহস্য বা চর্যার জট উন্মোচন করেন। উল্লেখযোগ্য যে, চর্যাপদকে তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন কীর্তিচন্দ্র।
-
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রথম কাব্যগ্রন্থ/কবিতা সংকলন/গানের সংকলন হিসেবে স্বীকৃত।
-
এটি বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন।
-
ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ দরবার গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।
-
চর্যাগুলো রচনা করেছিলেন বৌদ্ধ সহজিয়াগণ, যেখানে বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক দিক উঠে এসেছে।
-
সুকুমার সেন তাঁর বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রথম খন্ড) গ্রন্থে চর্যাপদের ২৪ জন পদকর্তার নাম উল্লেখ করেছেন।
-
অপরদিকে, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত Buddhist Mystic Songs গ্রন্থে চর্যাপদের ২৩ জন কবির নাম পাওয়া যায়।
-
পদসংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। সুকুমার সেন মনে করেন চর্যাপদের পদ সংখ্যা ৫১টি; তবে তাঁর চর্যাগীতি পদাবলী গ্রন্থে তিনি ৫০টি পদের উল্লেখ করেছেন। মুনিদত্তও ৫০টি পদ ব্যাখ্যা করেছিলেন।
-
ড. শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের পদ সংখ্যা ৫০টি।
0
Updated: 1 month ago
চর্যাপদের আদি কবি কে?
Created: 1 month ago
A
ভুসুকুপা
B
কাহ্নপা
C
লুইপা
D
কুক্কুরীপা
চর্যাপদ ও আদি কবি
আদি কবি:
-
লুইপা
চর্যাপদ:
-
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন গ্রন্থ।
-
বাংলা ভাষার প্রথম কাব্যগ্রন্থ/কবিতা সংকলন/গানের সংকলন।
-
বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন।
-
আবিষ্কার: ১৯০৭, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার থেকে।
-
সম্পাদনা: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, Buddhist Mystic Songs → ২৩ জন কবির নাম উল্লেখ।
-
প্রথম পদ: লুইপার
-
প্রথম দুই চরণ:
"কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীএ পৈঠা কাল।।"
-
উৎস:
-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা
0
Updated: 1 month ago
আধুনিক ছন্দের বিচারে চর্যাপদ কোন ছন্দের অন্তর্গত?
Created: 2 months ago
A
মাত্রাবৃত্ত
B
স্বরবৃত্ত
C
ছন্দহীন
D
অক্ষরবৃত্ত
চর্যাপদ
-
ভাষা: চর্যাপদের ভাষাকে বলা হয় ‘সন্ধ্যা’ বা ‘সান্ধ্য ভাষা’, যা কোথাও স্পষ্ট, কোথাও অস্পষ্ট। একে ‘আলো-আঁধারি’ ভাষাও বলা হয়।
-
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মন্তব্য:
"আলো আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না। যাঁহারা সাধন-ভজন করেন, তাঁহারাই সে কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই।"
-
ছন্দ: চর্যাপদের পদগুলো প্রাচীন ছন্দে রচিত কি না তা বলা সম্ভব নয়; আধুনিক ছন্দ অনুযায়ী এগুলো মাত্রাবৃত্ত ছন্দে বিবেচিত হয়।
0
Updated: 2 months ago