'টপ্পা' কী?
A
বিশেষ ধরনের নৃত্য
B
বিশেষ ধরনের গান
C
বিশেষ ধরনের বাদ্যাযন্ত্র
D
বিশেষ ধরনের পোশাক
উত্তরের বিবরণ
‘টপ্পা’ হলো বাংলা সংগীতের এক বিশেষ ধারা, যা মূলত হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে উৎসারিত হলেও বাংলায় এসে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। এটি গানের এমন এক রূপ, যেখানে তালের গতি ও ছন্দের খেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সঠিক উত্তর হলো বিশেষ ধরনের গান।
‘টপ্পা’ শব্দটির উৎপত্তি পাঞ্জাবি শব্দ ‘টপ্পা’ থেকে, যার অর্থ ঝাঁপ দেওয়া বা লাফানো। সংগীতে এই শব্দের প্রয়োগের কারণ হলো—এই ধারার সুরে গলার দ্রুত ওঠানামা বা ‘ঝাঁপ’ দেওয়ার মতো সুরের ভঙ্গি থাকে। মূলত এটি দ্রুত লয়ের গীতধারা, যেখানে গানের মধ্যে তীক্ষ্ণ তান, হঠাৎ ওঠা-নামা ও সূক্ষ্ম অলঙ্কার ব্যবহারের মাধ্যমে সুরের নান্দনিকতা প্রকাশ করা হয়।
বাংলায় টপ্পা সংগীতের বিকাশ ঘটেছিল মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীতে, বিশেষ করে রামনিধি গুপ্ত (নিদু গুপ্ত)-এর হাতে। তিনি টপ্পা ধারাকে বাংলার স্বাদে রূপান্তরিত করেন এবং তাতে বাংলা ভাষার কাব্যরস মিশিয়ে এটিকে একটি স্বতন্ত্র ধারায় পরিণত করেন। তাঁর রচিত টপ্পাগুলো আজও বাংলা সংগীত ইতিহাসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। নিদু গুপ্তের টপ্পা সংগীতের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল—মৃদু রোমান্টিক আবেগ, মনোহর সুর এবং শব্দের সুষম ব্যবহার।
টপ্পা গানের বিষয়বস্তু সাধারণত প্রেম, বিরহ, অনুরাগ ও মানবিক অনুভূতি। এখানে কথার চেয়ে সুরের গতি ও গলার কারুকার্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই টপ্পা গাওয়ার জন্য গায়ককে হতে হয় অত্যন্ত দক্ষ এবং কণ্ঠনিয়ন্ত্রণে পারদর্শী। গানের মধ্যে সুরের দ্রুত ওঠানামা, ছোট ছোট তান ও ‘মীন্ড’-এর প্রয়োগে এক ধরনের আবেগঘন সুর সৃষ্টি হয় যা শ্রোতার মনে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
এই ধারার সংগীত সাধারণত দ্রুত তিনতাল বা দাদরা তালে পরিবেশিত হয়। কখনো কখনো এর সঙ্গে তবলা, সারেঙ্গি বা হারমোনিয়াম ব্যবহার করা হয়, যা টপ্পার সুরের ঝাঁজ ও গতি বজায় রাখে। টপ্পা গাওয়ার ধরনে স্বরের ‘মাধুর্য’ ও ‘উচ্চারণের তেজ’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে গায়ককে একই সঙ্গে আবেগ প্রকাশ ও সুরের সূক্ষ্ম গতি বজায় রাখতে হয়।
বাংলা সংগীতের বিকাশে টপ্পার প্রভাব সুস্পষ্ট। টপ্পার সুরের ধাঁচ পরে ঠুমরি, নজরুলগীতি ও আধুনিক বাংলা গানের নানা শাখায় দেখা যায়। এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর কিছু গানে টপ্পার সুরধারা ব্যবহার করেছেন, যেমন—“আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে” গানে টপ্পা ছন্দের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, টপ্পা হলো এক বিশেষ ধরনের গান, যেখানে সুরের দ্রুত পরিবর্তন, ছন্দের জটিলতা ও কণ্ঠের নিপুণ কারুকার্য একসঙ্গে মিশে এক অনন্য সংগীতরূপ সৃষ্টি করে। এটি শুধু গানের একটি ধারা নয়, বরং বাংলা সংগীত ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা শ্রুতিমধুর সুর ও আবেগের সূক্ষ্ম প্রকাশে আজও শ্রোতার হৃদয় স্পর্শ করে।
0
Updated: 22 hours ago
বাংলা টপ্পাগানের জনক কে?
Created: 2 months ago
A
সৈয়দ সুলতান
B
রামনিধি গুপ্ত
C
শাহ মুহম্মদ সগীর
D
রমাপ্রসাদ সেন
রামনিধি গুপ্ত (নিধু গুপ্ত)
-
সঙ্গীতশিল্পী, বাংলা টপ্পাগানের জনক
-
ডাকনাম: নিধুবাবু
-
জন্ম: চাপ্তা, মাতুলালয়, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
-
টপ্পাগীতি রচনা, সুরারোপ ও নিজেই গাইতেন
-
কলকাতার নগরসমাজে অল্প সময়ে জনপ্রিয়
-
বর্ধমানের মহারাজা তেজেশচন্দ্র রায়বাহাদুর তাঁর ভক্ত
-
১৮৩২ সালে প্রকাশিত গানের সংকলন: গীতরত্ন
বিখ্যাত টপ্পা সঙ্গীত:
"নানান দেশের নানান ভাষা, বিনে স্বদেশী ভাষা, মিটে কি আশা?"
0
Updated: 2 months ago
বাংলা টপ্পাগানের জনক কে?
Created: 1 month ago
A
রামপ্রসাদ সেন
B
রামনিধি গুপ্ত
C
শাহ আব্দুল করিম
D
লালন শাহ
বাংলা টপ্পাগানের জনক হলেন নিধু বাবু বা রামনিধি গুপ্ত, যিনি তাঁর টপ্পাগানের সংকলন ‘গীতরত্ন’ ১৮৩২ সালে প্রকাশ করেন।
বিখ্যাত টপ্পাগান:
"নানান দেশের নানান ভাষা।
বিনে স্বদেশীয় ভাষা
পুরে কি আশা।।"
এই গানের রচয়িতা নিধু বাবু বা রামনিধি গুপ্ত (১৭৪১-১৮৩৯)।
0
Updated: 1 month ago