চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে?

A

হিপোক্রেটিস

B

এরিস্টটল

C

ইবনে সিনা

D

গ্যালেন

উত্তরের বিবরণ

img

ইবনে সিনা চিকিৎসা ও দর্শনশাস্ত্রের ইতিহাসে এমন এক অমর ব্যক্তিত্ব যিনি বিজ্ঞান, দর্শন, ও চিকিৎসাকে একত্রে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মধ্যযুগে যখন ইউরোপ অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, তখন ইবনে সিনা তাঁর গবেষণা ও লেখনীর মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন। এজন্যই তাঁকে “চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক” বলা হয়।

  • ইবনে সিনার পূর্ণ নাম ছিল আবু আলী আল-হুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা। তিনি ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উজবেকিস্তানের বুখারা অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১০৩৭ সালে ইরানের হামাদানে মৃত্যুবরণ করেন।

  • তিনি একজন পারস্যের চিকিৎসক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও লেখক ছিলেন। জীবনের শুরুতেই অসাধারণ মেধার পরিচয় দেন; মাত্র ১৬ বছর বয়সে চিকিৎসা শাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করেন।

  • তাঁর রচিত “আল-কানুন ফি আত-তিব্ব” (The Canon of Medicine) বইটি চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে যুগান্তকারী অবদান। এটি বহু শতাব্দী ধরে ইউরোপ ও এশিয়ার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

  • “আল-কানুন ফি আত-তিব্ব”-এ তিনি মানবদেহ, রক্তসঞ্চালন, সংক্রামক রোগ, ও ঔষধবিজ্ঞানের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। এ বইটি ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়ে ইউরোপে চিকিৎসা শিক্ষার ভিত্তি গঠন করে।

  • ইবনে সিনা প্রথম দিকের বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন যিনি রোগ নির্ণয়ে পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, চিকিৎসার সাফল্য নির্ভর করে রোগীর লক্ষণ পর্যবেক্ষণ ও সঠিক বিশ্লেষণের ওপর।

  • তিনি মনস্তত্ত্ব ও চিকিৎসার সম্পর্ক নিয়েও গবেষণা করেন। তাঁর মতে, মানসিক অবস্থা শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, যা আধুনিক মনোরোগবিদ্যার ভিত্তি তৈরি করে।

  • তাঁর আরেকটি বিখ্যাত গ্রন্থ “কিতাব আল-শিফা” (Book of Healing), যেখানে তিনি দর্শন, যুক্তি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নানা দিক বিশ্লেষণ করেন।

  • ইউরোপীয় দার্শনিক ও চিকিৎসকেরা যেমন টমাস একুইনাস ও রজার বেকন, ইবনে সিনার কাজ থেকে গভীরভাবে প্রভাবিত হন।

  • ইবনে সিনার চিকিৎসা-তত্ত্বে চার ধরনের তরল বা Humoural Theory ব্যাখ্যা করা হয়েছে — রক্ত, পিত্ত, কালো পিত্ত ও শ্লেষ্মা। এই ধারণা পরবর্তীতে পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে গৃহীত হয়েছিল।

  • আধুনিক যুগেও তাঁর তত্ত্ব ও গবেষণা ইতিহাসের অংশ হিসেবে চিকিৎসা ও দর্শনশাস্ত্রে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়।

  • ইবনে সিনার অবদান কেবল ইসলামি সভ্যতায় নয়, গোটা বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিকাশে অপরিসীম। এজন্যই তাঁকে যথাযথভাবে “চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক” বা “Father of Medicine” বলা হয়।

তাঁর জীবন ও কাজ প্রমাণ করে যে, চিকিৎসা শুধু রোগ নিরাময় নয়, বরং মানবজীবনের গভীরতর উপলব্ধির এক মহান শাস্ত্র। তাই ইবনে সিনা আজও মানব সভ্যতার ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী হিসেবে অমর।

Unfavorite

0

Updated: 1 day ago

Related MCQ

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD