অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?
A
শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক
B
হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
C
খাজা নাজিমুদ্দিন
D
শামসুল হুদা
উত্তরের বিবরণ
অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক। ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের পর তিনি এই পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলায় কৃষক ও সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নতুন গতি পায়। তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও শিক্ষাবিদ, যিনি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
নিচে এ. কে. ফজলুল হক ও তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হলো—
-
পুরো নাম: আবুল কাশেম ফজলুল হক।
-
জন্ম: ২৬ অক্টোবর ১৮৭৩ সালে বরিশালের সাতরশি গ্রামে।
-
শিক্ষা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্স ও আইন বিভাগে ডিগ্রি অর্জন করেন।
-
রাজনৈতিক জীবন: শুরুতে মুসলিম লীগে যোগ দেন। পরে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষায় কৃষক প্রজা পার্টি গঠন করেন।
-
বাংলা প্রাদেশিক নির্বাচন ১৯৩৭: ভারতের ব্রিটিশ শাসনের সময় প্রাদেশিক নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে এ. কে. ফজলুল হক ১ এপ্রিল ১৯৩৭ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
-
সময়কাল: তিনি ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
-
রাজনৈতিক অবদান:
-
বাংলার কৃষকদের ঋণের বোঝা কমানোর জন্য ‘দেওয়ানি মামলা (Debt Settlement) আইন’ প্রণয়ন করেন।
-
জমিদারি প্রথা সীমিতকরণ ও কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেন।
-
মুসলমানদের শিক্ষায় অগ্রগতির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করেন।
-
-
লাহোর প্রস্তাব (১৯৪০): সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের অধিবেশনে তিনি ২৩ মার্চ ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে পরিচিত হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি তৈরি করে।
-
‘শেরে বাংলা’ উপাধি: সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থানের কারণে তাঁকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
-
পরবর্তী জীবন: পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
-
মৃত্যু: ২৭ এপ্রিল ১৯৬২ সালে ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
-
স্মরণীয় অবদান:
-
তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা নগর, এবং শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ।
-
তিনি বাঙালি রাজনীতির ইতিহাসে কৃষক-জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে চিরস্মরণীয়।
-
সবশেষে বলা যায়, এ. কে. ফজলুল হক ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি অবিভক্ত বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ই বাংলার কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বাদ পায়।
0
Updated: 1 day ago