খাবার সোডার সংকেত কোনটি?
A
Na2CO3
B
NaHCO3
C
CaCO3
D
NaOH
উত্তরের বিবরণ
খাবার সোডা বা বেকিং সোডা একটি বহুল ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ যা রান্না, পরিস্কার এবং চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর রাসায়নিক সংকেত NaHCO3 বা সোডিয়াম বাইকার্বনেট। এটি এক ধরনের ক্ষারীয় যৌগ যা অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি বেকিং বা রান্নার কাজে ফোলাভাব আনতে ব্যবহৃত হয়। নিচে এর গঠন, ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
-
রাসায়নিক নাম ও সংকেত: খাবার সোডার রাসায়নিক নাম হলো সোডিয়াম বাইকার্বনেট এবং এর সংকেত NaHCO3। এটি সোডিয়াম (Na+), হাইড্রোজেন (H+), কার্বন (C) এবং অক্সিজেন (O) দ্বারা গঠিত একটি যৌগ।
-
রাসায়নিক প্রকৃতি: এটি একটি হালকা ক্ষারীয় লবণ যা পানিতে দ্রবণীয়। পানিতে দ্রবীভূত হলে এটি দুর্বল ক্ষারীয় দ্রবণ তৈরি করে, যার ফলে এটি অম্লকে নিরপেক্ষ করতে পারে।
-
উৎপাদন প্রক্রিয়া: সোডিয়াম বাইকার্বনেট সাধারণত সোডিয়াম কার্বনেট (Na2CO3) ও কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াটি “Solvay Process” নামে পরিচিত।
রাসায়নিক সমীকরণ:
Na2CO3 + CO2 + H2O → 2NaHCO3 -
ব্যবহার:
-
রান্নায় ব্যবহার: বেকিং সোডা কেক, পাউরুটি, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে CO2 গ্যাস উৎপন্ন করে, ফলে খাবার ফেঁপে ওঠে।
-
ওষুধ হিসেবে: এটি হালকা অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিক কমাতে অ্যান্টাসিড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-
পরিষ্কারে: এটি দাগ দূর করতে এবং দুর্গন্ধ প্রতিরোধে কার্যকর ক্লিনার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
-
অগ্নি নির্বাপক হিসেবে: বেকিং সোডা উত্তপ্ত হলে CO2 গ্যাস উৎপন্ন করে, যা আগুন নিভাতে সহায়তা করে।
-
ব্যক্তিগত পরিচর্যায়: টুথপেস্ট, ডিওডোরেন্ট, এবং স্কিন কেয়ার পণ্যেও এটি ব্যবহৃত হয়।
-
-
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভূমিকা: NaHCO3 একটি দুর্বল ক্ষার যা অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় কার্বন ডাই–অক্সাইড, পানি ও লবণ উৎপন্ন করে।
উদাহরণস্বরূপ:
NaHCO3 + HCl → NaCl + H2O + CO2↑ -
উত্তপ্ত করলে বিক্রিয়া: বেকিং সোডা উত্তপ্ত করলে এটি সোডিয়াম কার্বনেট, পানি ও কার্বন ডাই–অক্সাইডে ভেঙে যায়।
2NaHCO3 → Na2CO3 + H2O + CO2↑ -
স্বাস্থ্যগত দিক: সামান্য পরিমাণে এটি নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরে ক্ষারীয় ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তাই এটি ওষুধ বা খাদ্য উপাদান হিসেবে সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।
-
বিশেষ তথ্য:
-
এটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮শ শতকের শেষ দিকে।
-
এটি গন্ধহীন, সাদা, স্ফটিকাকার গুঁড়া।
-
এর দ্রাব্যতা পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়।
-
সবশেষে বলা যায়, NaHCO3 বা সোডিয়াম বাইকার্বনেট একটি অত্যন্ত কার্যকর ও বহুমুখী যৌগ যা রান্না, ওষুধ, এবং শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর রাসায়নিক গঠন ও ক্রিয়াগুণই একে “খাবার সোডা” হিসেবে পরিচিত করেছে।
0
Updated: 1 day ago
মরিচার সংকেত কোনটি?
Created: 5 days ago
A
Fe₂O₃
B
FeO
C
Fe₂O₃·nH₂O
D
Fe₃O₄
মরিচা বা Rust হলো লোহা ও তার সংকর ধাতুর পৃষ্ঠে গঠিত একটি বাদামি-লালচে পদার্থ। এটি একধরনের রাসায়নিক যৌগ যা লোহা, অক্সিজেন ও পানির বিক্রিয়ায় তৈরি হয়। মূলত এটি আয়রন অক্সাইডের একটি জলযুক্ত যৌগ, যার সাধারণ সংকেত Fe₂O₃·nH₂O। এখানে “n” দ্বারা বোঝানো হয় পরিবর্তনশীল পরিমাণের পানি অণু।
প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ:
-
মরিচা কীভাবে তৈরি হয়:
-
মরিচা গঠনের জন্য লোহা (Fe), অক্সিজেন (O₂) এবং পানি (H₂O) একসাথে থাকতে হয়।
-
আর্দ্র বাতাস বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে লোহা ধীরে ধীরে অক্সিডাইজড হয়।
-
এর ফলে লোহার পরমাণু অক্সিজেন ও পানির সাথে বিক্রিয়া করে লৌহ অক্সাইড তৈরি করে, যা শেষে জলযুক্ত লৌহ(III) অক্সাইড বা মরিচা রূপে দেখা দেয়।
-
-
রাসায়নিক বিক্রিয়া:
Fe + O₂ + H₂O → Fe₂O₃·nH₂O
এই বিক্রিয়ায় লোহা ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যাকে Corrosion বলা হয়। -
মরিচার রঙ:
মরিচার রঙ সাধারণত লালচে-বাদামি হয়, যা লৌহ অক্সাইডের উপস্থিতির কারণে। -
মরিচা গঠনের প্রক্রিয়া:
১. লোহা প্রথমে পানির সংস্পর্শে এসে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে।
২. ইলেকট্রনের স্থানান্তরের ফলে Fe²⁺ আয়ন তৈরি হয়।
৩. পরে এই Fe²⁺ আয়ন পুনরায় অক্সিজেনের উপস্থিতিতে Fe³⁺ আয়নে রূপান্তরিত হয়।
৪. এই Fe³⁺ আয়ন পানি অণুর সাথে যুক্ত হয়ে Fe₂O₃·nH₂O যৌগ তৈরি করে, যা মরিচা নামে পরিচিত। -
মরিচার ক্ষতি:
-
লোহার স্থায়িত্ব ও শক্তি কমিয়ে দেয়।
-
লোহা বা ইস্পাত নির্মিত বস্তু যেমন গাড়ি, সেতু, পাইপ ইত্যাদি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
-
শিল্পক্ষেত্রে বছরে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয় মরিচার কারণে।
-
-
মরিচা প্রতিরোধের উপায়:
-
Painting বা রঙ করা: লোহার পৃষ্ঠে রঙের প্রলেপ দিলে বাতাস ও পানির সংস্পর্শ বন্ধ হয়।
-
Galvanization: লোহার উপর দস্তার (Zn) প্রলেপ দেওয়া হয়, যা জং ধরা রোধ করে।
-
Oiling বা Greasing: লোহার যন্ত্রাংশে তেল বা গ্রীস ব্যবহার করলে আর্দ্রতা প্রবেশ করতে পারে না।
-
Alloy Formation: লোহাকে অন্য ধাতুর সঙ্গে সংকর ধাতু তৈরি করে যেমন স্টেইনলেস স্টিল, যা মরিচা প্রতিরোধী।
-
-
অন্য বিকল্পগুলোর বিশ্লেষণ:
-
ক) Fe₂O₃: এটি নিঃজল লৌহ(III) অক্সাইড, কিন্তু এতে পানি অণু থাকে না, তাই এটি মরিচা নয়।
-
খ) FeO: এটি লৌহ(II) অক্সাইড, কালচে রঙের, মরিচা নয়।
-
ঘ) Fe₃O₄: এটি চৌম্বক লৌহ অক্সাইড (Magnetite), প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, মরিচা নয়।
-
সুতরাং, মরিচা হলো জলযুক্ত লৌহ(III) অক্সাইড, যার সংকেত Fe₂O₃·nH₂O, এবং এটি লোহা, পানি ও অক্সিজেনের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়।
0
Updated: 5 days ago