কোনটি উচ্চ রক্তচাপের জন্য জন্য দায়ী?
A
থাইরয়েড গ্রন্থি
B
পিটুইটারী গ্রন্থি
C
অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি
D
অগ্ন্যাশয়
উত্তরের বিবরণ
মানবদেহে উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি বিশেষভাবে দায়ী। এই গ্রন্থি কিডনির ওপরে অবস্থিত এবং এটি দেহে অ্যাড্রিনালিন ও নরঅ্যাড্রিনালিন নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ করে। এসব হরমোন দেহকে উত্তেজিত, সতর্ক ও কর্মক্ষম রাখে, কিন্তু এদের মাত্রা বেড়ে গেলে তা রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে তোলে।
অ্যাড্রিনালিনকে সাধারণত “ফাইট অর ফ্লাইট হরমোন” বলা হয়। কোনো ব্যক্তি ভয়, উত্তেজনা, রাগ বা মানসিক চাপের মধ্যে পড়লে এই হরমোন দ্রুত নিঃসৃত হয়। এর ফলে হার্ট দ্রুত স্পন্দিত হয়, রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয় এবং শরীরের পেশিতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। এই অবস্থায় রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। যদি অ্যাড্রিনালিনের নিঃসরণ দীর্ঘ সময় ধরে বেশি পরিমাণে ঘটে, তবে তা স্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) সৃষ্টি করতে পারে।
অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অন্তঃস্রাবীয় কার্যপ্রণালীর সঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এটি অ্যাড্রিনাল কর্টেক্স ও অ্যাড্রিনাল মেডুলা—এই দুই অংশে বিভক্ত। কর্টেক্স অংশ থেকে অ্যালডোস্টেরন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা দেহে সোডিয়াম ও পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। যদি অ্যালডোস্টেরনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তবে শরীরে সোডিয়াম ও পানি জমে থাকে, যার ফলে রক্তের আয়তন বাড়ে এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। মেডুলা অংশ থেকে নিঃসৃত অ্যাড্রিনালিন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে এবং রক্তনালীর সংকোচন ঘটায়, যা সরাসরি রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ।
অন্য বিকল্পগুলো রক্তচাপের ক্ষেত্রে সরাসরি দায়ী নয়। থাইরয়েড গ্রন্থি বিপাকীয় ক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে; এর হরমোন বেশি হলে হৃদস্পন্দন কিছুটা বাড়তে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে না। পিটুইটারী গ্রন্থি শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, তবে এটি সরাসরি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জড়িত নয়। অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন নিঃসরণ করে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তচাপ নয়।
সুতরাং, দেহে অতিরিক্ত অ্যাড্রিনালিন নিঃসরণ হলে রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, হৃদপিণ্ডে চাপ পড়ে এবং ধমনীপ্রাচীরের ওপর অতিরিক্ত টান সৃষ্টি হয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি বিকলতার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মানসিক চাপ কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।
অতএব, উচ্চ রক্তচাপের জন্য মূলত দায়ী হলো অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি, কারণ এর হরমোন দেহে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং হৃদস্পন্দন ও রক্তনালীর কার্যক্রমে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
0
Updated: 1 day ago
একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ কতদিন পর পর রক্ত দান করতে পারেন?
Created: 1 day ago
A
১২ মাস
B
৭ মাস
C
৩ মাস
D
৬ মাস
রক্তদান একটি মানবিক ও স্বাস্থ্যকর কাজ যা জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। একজন সুস্থ ও পূর্ণবয়স্ক মানুষ নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন, তবে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বিবেচনায় রেখে এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট বিরতি প্রয়োজন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি ৩ মাস পর পর রক্ত দান করতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে শরীর হারানো রক্তের পরিমাণ পুনরায় পূরণ করে এবং রক্তের উপাদানগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
• রক্ত পুনর্গঠনের সময়: রক্তদানের পর শরীর সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তরল অংশ (প্লাজমা) পুনরায় তৈরি করে ফেলে। তবে লোহিত কণিকা (RBC) সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত হতে প্রায় ৯০ দিন বা ৩ মাস সময় লাগে। তাই চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, অন্তত ৩ মাস বিরতি দিয়ে পরবর্তী রক্তদান করা উচিত।
• পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে পার্থক্য: পুরুষরা সাধারণত প্রতি ৩ মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ৪ মাস বা তার বেশি সময়ের ব্যবধান রাখতে বলা হয়, কারণ নারীদের শারীরবৃত্তীয় কারণে রক্তের পরিমাণ কিছুটা কম থাকে।
• রক্তদানের উপকারিতা: নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তে লোহিত কণিকার ভারসাম্য বজায় থাকে, দেহে অতিরিক্ত আয়রন জমে না এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি রক্তদান মানবিকতার এক মহান দৃষ্টান্ত, যা অন্যের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।
• যোগ্যতার শর্ত: রক্তদাতা হতে হলে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ওজন ৫০ কেজির বেশি হতে হবে। শরীরে কোনো সংক্রামক রোগ যেমন হেপাটাইটিস, এইডস বা ম্যালেরিয়া থাকা যাবে না। রক্তচাপ ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকতে হবে।
• রক্তদানের পর করণীয়: রক্তদানের পর পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার গ্রহণ, এবং কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। তাছাড়া, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ভারী কাজ বা ব্যায়াম করা উচিত নয়।
• রক্তের সঞ্চয় ও ব্যবহার: দান করা রক্ত সাধারণত ৩৫ থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় যেমন অপারেশন, দুর্ঘটনা বা রক্তস্বল্পতা নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং, একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতি ৩ মাস পর রক্ত দান করতে পারেন, যা শরীরের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সমাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি কাজ। এই ব্যবধান রক্তের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং দাতার স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখে।
0
Updated: 1 day ago
পূর্ণবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ কোনটি?
Created: 1 week ago
A
১৬০/৯০
B
১২০/৮০
C
১৮০/১০০
D
৯০/৬০
পূর্ণবয়স্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ mmHg। এখানে ১২০ হলো সিস্টোলিক চাপ (Systolic Pressure) এবং ৮০ হলো ডায়াস্টোলিক চাপ (Diastolic Pressure)। রক্তচাপ বা Blood Pressure বলতে বোঝায়, হৃদযন্ত্র যখন শরীরে রক্ত পাম্প করে তখন রক্তের দ্বারা রক্তনালীর প্রাচীরে সৃষ্ট চাপ।
স্বাভাবিক রক্তচাপের মান বজায় রাখা মানুষের হৃদযন্ত্র, কিডনি এবং মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
– সিস্টোলিক চাপ (Systolic Pressure) হলো রক্তচাপের উপরের মান, যা হৃদপিণ্ড সংকোচন (contraction) করে রক্ত ধমনিতে পাঠানোর সময় সৃষ্টি হয়।
– ডায়াস্টোলিক চাপ (Diastolic Pressure) হলো নিচের মান, যা হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকাকালীন রক্তনালীর ভিতরের চাপ নির্দেশ করে।
– একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তচাপ গড়ে ১২০/৮০ mmHg, যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য আদর্শ ধরা হয়।
– যদি রক্তচাপ ১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি হয়, তাহলে তা উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) হিসেবে বিবেচিত হয়, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
– অপরদিকে, রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ mmHg-এর নিচে নেমে যায়, তখন তাকে নিম্ন রক্তচাপ (Hypotension) বলা হয়, যা মাথা ঘোরা বা দুর্বলতার কারণ হতে পারে।
– বয়স, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম, ওজন, ধূমপান ও ঘুমের অভাব—এসব উপাদান রক্তচাপের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
– পর্যাপ্ত পানি পান, লবণ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
– দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি, কিডনি বিকল, চোখের ক্ষতি এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সুতরাং, পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ mmHg, যা শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
0
Updated: 1 week ago
শরীরের কোষে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য কোন রক্তকণিকা দায়ী?
Created: 1 month ago
A
নিউট্রোফিল
B
প্লাজমা
C
এরিথ্রোসাইট
D
থ্রম্বোসাইট
এরিথ্রোসাইট (লোহিত রক্তকণিকা) হলো মানবদেহের প্রধান রক্তকণিকাগুলোর মধ্যে একটি, যার প্রধান কাজ হলো ফুসফুস থেকে সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করা।
প্রধান বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলী:
-
এরিথ্রোসাইট বা লোহিত রক্তকণিকা রক্তের মোট আয়তনের প্রায় ৪৫% দখল করে।
-
এতে থাকা হিমোগ্লোবিন নামক লৌহযুক্ত প্রোটিন ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেয়।
-
লোহিত রক্তকণিকার আয়ু ১২০ দিন।
-
লাল অস্থিমজ্জা (Red Bone Marrow) লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে।
-
তৈরি হওয়ার পর, লোহিত রক্তকণিকা প্লীহায় (Spleen) সঞ্চিত থাকে এবং প্রয়োজনে রক্তপ্রবাহে সরবরাহ করা হয়।
-
রক্তকণিকার মধ্যে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
-
লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস নেই এবং এর আকৃতি হলো দ্বি-অবতল বৃত্তাকার।
উল্লেখযোগ্য অন্যান্য রক্তকণিকা ও উপাদান:
-
নিউট্রোফিল (Neutrophil): শ্বেত রক্তকণিকা, যা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
-
প্লাজমা (Plasma): রক্তের তরল অংশ, যা হরমোন, প্রোটিন ও পুষ্টি উপাদান পরিবহন করে।
-
থ্রম্বোসাইট (Platelets): রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
0
Updated: 1 month ago