পেনিসিলিন হলো বিশ্বের প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট নানা সংক্রমণ একসময় মানুষের জীবনের জন্য হুমকি ছিল। কিন্তু পেনিসিলিন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানবসভ্যতা পেল এক শক্তিশালী অস্ত্র, যা অগণিত প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়। এই ওষুধটি আবিষ্কার করেন Alexander Fleming, যিনি ছিলেন একজন স্কটিশ ব্যাকটেরিওলজিস্ট।
• Alexander Fleming ১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনের সেন্ট মেরি’স হাসপাতালে তাঁর গবেষণাগারে কাজ করছিলেন। সেসময় তিনি স্ট্যাফাইলোকক্কাস নামের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন। হঠাৎ একদিন তিনি লক্ষ্য করেন, তাঁর এক পরীক্ষার পাত্রে নীল-সবুজ রঙের এক ধরনের ছত্রাক জন্মেছে, যার চারপাশের ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যাচ্ছে।
• এই ছত্রাকটির নাম ছিল Penicillium notatum, যা থেকেই উৎপন্ন পদার্থটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করছিল। এখান থেকেই Fleming বুঝতে পারেন, ছত্রাকটি এমন একটি পদার্থ উৎপন্ন করে যা ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম।
• Fleming সেই পদার্থটির নাম দেন Penicillin, যা “Penicillium” ছত্রাকের নাম থেকে নেওয়া হয়।
• ১৯২৯ সালে Fleming তাঁর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন। যদিও প্রথমদিকে এর ব্যবহার সীমিত ছিল, কারণ সে সময় প্রযুক্তিগতভাবে বিশুদ্ধ পেনিসিলিন তৈরি করা কঠিন ছিল।
• পরবর্তীতে Howard Florey এবং Ernst Boris Chain ১৯৪০-এর দশকে Fleming-এর আবিষ্কারকে আরও উন্নত করেন এবং পেনিসিলিনকে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনযোগ্য করেন।
• দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পেনিসিলিন হাজারো সৈনিকের জীবন রক্ষা করে, বিশেষ করে ক্ষত বা সংক্রমণজনিত রোগে।
• এই অবদানের জন্য Fleming, Florey, ও Chain ১৯৪৫ সালে যৌথভাবে Nobel Prize in Physiology or Medicine লাভ করেন।
• পেনিসিলিন ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর ধ্বংস করে কাজ করে, ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায়। এটি মানুষের কোষকে ক্ষতি করে না, যা একে নিরাপদ ও কার্যকর করে তোলে।
• আজও পেনিসিলিন ও এর বিভিন্ন রূপ চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন অ্যামোক্সিসিলিন ও অ্যাম্পিসিলিন, যা নানা ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
• Fleming-এর এই আবিষ্কার আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বিশাল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর অবদানের ফলে মানবজাতি প্রথমবারের মতো সংক্রমণকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
সুতরাং, পেনিসিলিনের আবিষ্কারক হলেন Alexander Fleming, যিনি ২০শ শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদানকারী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।