রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে কি হয়?
A
Anemia
B
Cyanosis
C
Jaundice
D
Clubbing
উত্তরের বিবরণ
রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে একটি বিশেষ লক্ষণ দেখা দেয়, যা হলো জন্ডিস (Jaundice)। এটি মূলত যকৃৎ (Liver) বা রক্তে থাকা বিলিরুবিনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে হয়। বিলিরুবিন হলো হিমোগ্লোবিন ভাঙনের একটি উপজাত, যা সাধারণত লিভার প্রক্রিয়াজাত করে পিত্তের (Bile) মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু লিভার বা পিত্তনালীর সমস্যায় এটি জমে গেলে ত্বক, চোখ ও প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তিত হয়।
• বিলিরুবিনের উৎপত্তি: রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে গেলে হিমোগ্লোবিন থেকে বিলিরুবিন তৈরি হয়। এটি প্রথমে অপরিপক্ব (Unconjugated) অবস্থায় থাকে এবং পরে লিভারে গিয়ে পানিতে দ্রবণীয় (Conjugated) রূপে রূপান্তরিত হয়।
• লিভারের ভূমিকা: লিভার বিলিরুবিনকে প্রক্রিয়াজাত করে পিত্তে রূপান্তরিত করে, যা অন্ত্রে নিঃসৃত হয়। যদি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন হেপাটাইটিস, সিরোসিস বা ফ্যাটি লিভারের কারণে, তখন বিলিরুবিন শরীরে জমে যায়।
• জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ: ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা বাদামি হয়, মল ফ্যাকাশে হয়, ক্ষুধামান্দ্য ও দুর্বলতা দেখা দেয়। এটি রক্তে বিলিরুবিনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সরাসরি ফল।
• জন্ডিসের প্রকারভেদ: সাধারণত তিন ধরনের জন্ডিস দেখা যায়—
Pre-hepatic jaundice: রক্তে অতিরিক্ত হিমোলাইসিসের কারণে হয়, যেমন ম্যালেরিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া।
Hepatic jaundice: লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গেলে হয়, যেমন হেপাটাইটিসে।
Post-hepatic jaundice: পিত্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে হয়, যেমন গলস্টোন বা টিউমারের কারণে।
• বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা: সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৩–১.২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক। এর বেশি হলে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়।
• চিকিৎসা ও প্রতিকার: জন্ডিস হলে মূল কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল খাবার, হালকা ও সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ জরুরি। ভাইরাসজনিত জন্ডিসে বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পানি সহায়ক ভূমিকা রাখে।
• ভুল বিকল্পগুলোর বিশ্লেষণ:
Anemia (অ্যানিমিয়া): এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে হয়, বিলিরুবিন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
Cyanosis (সায়ানোসিস): রক্তে অক্সিজেনের অভাবে ত্বক ও ঠোঁট নীলচে হয়, বিলিরুবিনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই।
Clubbing: আঙুলের ডগা ফোলা ও নরম হওয়া, যা দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস বা হৃদরোগে দেখা যায়, বিলিরুবিনের প্রভাব নয়।
সুতরাং রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে জন্ডিস (Jaundice) হয়, যা লিভারের সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার একটি দৃশ্যমান লক্ষণ।
0
Updated: 1 day ago
একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ কতদিন পর পর রক্ত দান করতে পারেন?
Created: 1 day ago
A
১২ মাস
B
৭ মাস
C
৩ মাস
D
৬ মাস
রক্তদান একটি মানবিক ও স্বাস্থ্যকর কাজ যা জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। একজন সুস্থ ও পূর্ণবয়স্ক মানুষ নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন, তবে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বিবেচনায় রেখে এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট বিরতি প্রয়োজন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি ৩ মাস পর পর রক্ত দান করতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে শরীর হারানো রক্তের পরিমাণ পুনরায় পূরণ করে এবং রক্তের উপাদানগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
• রক্ত পুনর্গঠনের সময়: রক্তদানের পর শরীর সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তরল অংশ (প্লাজমা) পুনরায় তৈরি করে ফেলে। তবে লোহিত কণিকা (RBC) সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত হতে প্রায় ৯০ দিন বা ৩ মাস সময় লাগে। তাই চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, অন্তত ৩ মাস বিরতি দিয়ে পরবর্তী রক্তদান করা উচিত।
• পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে পার্থক্য: পুরুষরা সাধারণত প্রতি ৩ মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ৪ মাস বা তার বেশি সময়ের ব্যবধান রাখতে বলা হয়, কারণ নারীদের শারীরবৃত্তীয় কারণে রক্তের পরিমাণ কিছুটা কম থাকে।
• রক্তদানের উপকারিতা: নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তে লোহিত কণিকার ভারসাম্য বজায় থাকে, দেহে অতিরিক্ত আয়রন জমে না এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি রক্তদান মানবিকতার এক মহান দৃষ্টান্ত, যা অন্যের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।
• যোগ্যতার শর্ত: রক্তদাতা হতে হলে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ওজন ৫০ কেজির বেশি হতে হবে। শরীরে কোনো সংক্রামক রোগ যেমন হেপাটাইটিস, এইডস বা ম্যালেরিয়া থাকা যাবে না। রক্তচাপ ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকতে হবে।
• রক্তদানের পর করণীয়: রক্তদানের পর পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার গ্রহণ, এবং কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। তাছাড়া, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ভারী কাজ বা ব্যায়াম করা উচিত নয়।
• রক্তের সঞ্চয় ও ব্যবহার: দান করা রক্ত সাধারণত ৩৫ থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় যেমন অপারেশন, দুর্ঘটনা বা রক্তস্বল্পতা নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং, একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতি ৩ মাস পর রক্ত দান করতে পারেন, যা শরীরের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সমাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি কাজ। এই ব্যবধান রক্তের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং দাতার স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখে।
0
Updated: 1 day ago
মানবদেহে শতকরা কত ভাগ রক্তরস রয়েছে?
Created: 1 month ago
A
৩৮ ভাগ
B
৪৫ ভাগ
C
৫৫ ভাগ
D
৬৫ ভাগ
রক্ত
রক্ত এক ধরনের লাল বর্ণের তরল যোজক কলা।
রক্তবাহিকার মাধ্যমে রক্ত মানব দেহের সর্বত্র সঞ্চালিত হয়।
রক্ত সামান্য ক্ষারীয় প্রকৃতির।
রক্তের pH মাত্রা: ৭.৩ – ৭.৪।
সজীব রক্তের তাপমাত্রা: ৩৬° – ৩৮° সেলসিয়াস।
অজৈব লবণের কারণে রক্ত লবণাক্ত।
একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের দেহে রক্তের পরিমাণ: ৫ – ৬ লিটার (শরীরের মোট ওজনের প্রায় ৮%)।
রক্তের উপাদান
মানব দেহের রক্ত প্রধানত রক্তরস (Plasma) ও রক্তকণিকা (Blood corpuscles) নিয়ে গঠিত।
রক্ত কিছুক্ষণ স্থির রাখলে এটি দুই স্তরে বিভক্ত হয়।
উপরের স্তর (৫৫%): হালকা হলুদ বর্ণের রক্তরস বা প্লাজমা।
নিচের স্তর (৪৫%): গাঢ় বর্ণের রক্তকণিকা।
রক্তকণিকাগুলো রক্তরসে ভাসমান অবস্থায় থাকে।
লোহিত রক্তকণিকার উপস্থিতির কারণেই রক্ত লাল দেখায়।
0
Updated: 1 month ago
রক্তে তরল অংশের নাম-
Created: 1 week ago
A
কোলেস্টেরল
B
প্রোটিন
C
লোহিত কনিকা
D
প্লাজমা
রক্তের তরল অংশকে বলা হয় প্লাজমা (Plasma)। এটি হালকা হলুদ বর্ণের একপ্রকার তরল পদার্থ যা রক্তের মোট আয়তনের প্রায় ৫৫% অংশ দখল করে। প্লাজমা রক্তের বিভিন্ন উপাদান—যেমন লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা ও প্লেটলেট—কে ভাসমান অবস্থায় রাখে এবং সেগুলোকে শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে পৌঁছে দেয়।
প্লাজমা-এর গঠন ও কার্যাবলি মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
– প্লাজমার প্রায় ৯০-৯২% পানি, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও কোষে পুষ্টি পরিবহনে সহায়তা করে।
– এতে প্রোটিন থাকে প্রায় ৭-৮%, যার মধ্যে প্রধান হলো অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন এবং ফাইব্রিনোজেন।
– অ্যালবুমিন রক্তচাপ ও তরল ভারসাম্য বজায় রাখে, গ্লোবিউলিন প্রতিরক্ষা কাজ করে এবং ফাইব্রিনোজেন রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
– বাকি অংশে থাকে গ্লুকোজ, হরমোন, ইউরিয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড, লবণ ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান।
– প্লাজমা শরীরের কোষে প্রয়োজনীয় খাদ্য, অক্সিজেন ও হরমোন পৌঁছে দেয় এবং বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ কিডনি ও ফুসফুসে বহন করে বের করে দেয়।
– এটি রক্তের pH নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ, এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
– প্লাজমা রক্তে বিভিন্ন রাসায়নিক ও প্রতিরোধক উপাদান দ্রবীভূত করে রাখে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
– চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্লাজমা আলাদা করে প্লাজমা থেরাপি বা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়, বিশেষত গুরুতর অসুস্থ বা রক্তহীন রোগীদের ক্ষেত্রে।
অন্যদিকে, লোহিত কণিকা (RBC) অক্সিজেন বহন করে, শ্বেত কণিকা (WBC) রোগ প্রতিরোধে কাজ করে এবং প্লেটলেট রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে—কিন্তু এরা কেউই রক্তের তরল অংশ নয়।
সুতরাং, রক্তের তরল অংশের নাম হলো প্লাজমা (Plasma), যা রক্তের প্রধান পরিবহন মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং মানবদেহের জীবনধারার জন্য অপরিহার্য।
0
Updated: 1 week ago