একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ কতদিন পর পর রক্ত দান করতে পারেন?
A
১২ মাস
B
৭ মাস
C
৩ মাস
D
৬ মাস
উত্তরের বিবরণ
রক্তদান একটি মানবিক ও স্বাস্থ্যকর কাজ যা জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। একজন সুস্থ ও পূর্ণবয়স্ক মানুষ নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন, তবে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বিবেচনায় রেখে এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট বিরতি প্রয়োজন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি ৩ মাস পর পর রক্ত দান করতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে শরীর হারানো রক্তের পরিমাণ পুনরায় পূরণ করে এবং রক্তের উপাদানগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
• রক্ত পুনর্গঠনের সময়: রক্তদানের পর শরীর সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তরল অংশ (প্লাজমা) পুনরায় তৈরি করে ফেলে। তবে লোহিত কণিকা (RBC) সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত হতে প্রায় ৯০ দিন বা ৩ মাস সময় লাগে। তাই চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, অন্তত ৩ মাস বিরতি দিয়ে পরবর্তী রক্তদান করা উচিত।
• পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে পার্থক্য: পুরুষরা সাধারণত প্রতি ৩ মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ৪ মাস বা তার বেশি সময়ের ব্যবধান রাখতে বলা হয়, কারণ নারীদের শারীরবৃত্তীয় কারণে রক্তের পরিমাণ কিছুটা কম থাকে।
• রক্তদানের উপকারিতা: নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তে লোহিত কণিকার ভারসাম্য বজায় থাকে, দেহে অতিরিক্ত আয়রন জমে না এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি রক্তদান মানবিকতার এক মহান দৃষ্টান্ত, যা অন্যের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।
• যোগ্যতার শর্ত: রক্তদাতা হতে হলে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ওজন ৫০ কেজির বেশি হতে হবে। শরীরে কোনো সংক্রামক রোগ যেমন হেপাটাইটিস, এইডস বা ম্যালেরিয়া থাকা যাবে না। রক্তচাপ ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকতে হবে।
• রক্তদানের পর করণীয়: রক্তদানের পর পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার গ্রহণ, এবং কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। তাছাড়া, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ভারী কাজ বা ব্যায়াম করা উচিত নয়।
• রক্তের সঞ্চয় ও ব্যবহার: দান করা রক্ত সাধারণত ৩৫ থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় যেমন অপারেশন, দুর্ঘটনা বা রক্তস্বল্পতা নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং, একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতি ৩ মাস পর রক্ত দান করতে পারেন, যা শরীরের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সমাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি কাজ। এই ব্যবধান রক্তের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং দাতার স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখে।
0
Updated: 1 day ago
লোহিত কণিকা কোথায় উৎপন্ন হয়?
Created: 4 weeks ago
A
অস্থিমজ্জায়
B
লিভারে
C
প্লীহায়
D
হৃৎপিণ্ডে
রক্ত কণিকা তিন ধরনের হয়, যা রক্তের বিভিন্ন কার্যাবলীর সঙ্গে জড়িত।
ক. লোহিত কণিকা:
-
রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে।
-
এক ঘন মিলিলিটার রক্তে পুরুষদের জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ, এবং মহিলাদের জন্য প্রায় ৪৫ লক্ষ লোহিত কণিকা থাকে।
-
এটি অস্থিমজ্জায় উৎপন্ন হয় এবং ১২০ দিন পর প্লীহায় বিনষ্ট হয়।
-
ব্যায়াম করলে লোহিত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং এগুলো দীর্ঘদিন বাঁচে।
-
লোহিত কণিকা হিমোগ্লোবিনের সহায়তায় দেহের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
খ. শ্বেত কণিকা:
-
শরীরে রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
-
এক মিলিলিটার রক্তে প্রায় ৬–৮ হাজার শ্বেত কণিকা থাকে।
-
এরা বর্ণহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত।
-
সাধারণত এরা ১২–১৩ দিন বাঁচে।
-
ব্যায়াম করলে এদের বেঁচে থাকার সময় ও সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
-
শ্বেত কণিকা রক্তে প্রবেশকারী জীবাণুকে ঘিরে ধরে বিনষ্ট করে এবং দেহকে রক্ষা করে, ফলে শরীরের ক্ষমতা ও শক্তিশালীতা বৃদ্ধি পায়।
গ. অণুচক্রিকা:
-
অণুচক্রিকা দেখতে ডিম্বাকার বা ডিস্কের মতো।
-
দেহের বৃহদাকার কোষ ভেঙ্গে অণুচক্রিকা সৃষ্টি হয়।
-
দেহের কোনো স্থানে ক্ষত হলে সেখানে ৩ মিনিটের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
0
Updated: 4 weeks ago
শরীরের কোষে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য কোন রক্তকণিকা দায়ী?
Created: 1 month ago
A
নিউট্রোফিল
B
প্লাজমা
C
এরিথ্রোসাইট
D
থ্রম্বোসাইট
এরিথ্রোসাইট (লোহিত রক্তকণিকা) হলো মানবদেহের প্রধান রক্তকণিকাগুলোর মধ্যে একটি, যার প্রধান কাজ হলো ফুসফুস থেকে সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করা।
প্রধান বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলী:
-
এরিথ্রোসাইট বা লোহিত রক্তকণিকা রক্তের মোট আয়তনের প্রায় ৪৫% দখল করে।
-
এতে থাকা হিমোগ্লোবিন নামক লৌহযুক্ত প্রোটিন ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেয়।
-
লোহিত রক্তকণিকার আয়ু ১২০ দিন।
-
লাল অস্থিমজ্জা (Red Bone Marrow) লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে।
-
তৈরি হওয়ার পর, লোহিত রক্তকণিকা প্লীহায় (Spleen) সঞ্চিত থাকে এবং প্রয়োজনে রক্তপ্রবাহে সরবরাহ করা হয়।
-
রক্তকণিকার মধ্যে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
-
লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস নেই এবং এর আকৃতি হলো দ্বি-অবতল বৃত্তাকার।
উল্লেখযোগ্য অন্যান্য রক্তকণিকা ও উপাদান:
-
নিউট্রোফিল (Neutrophil): শ্বেত রক্তকণিকা, যা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
-
প্লাজমা (Plasma): রক্তের তরল অংশ, যা হরমোন, প্রোটিন ও পুষ্টি উপাদান পরিবহন করে।
-
থ্রম্বোসাইট (Platelets): রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
0
Updated: 1 month ago
ABG analysis করার জন্য Blood সংগ্রহ কোথা থেকে করা হয়?
Created: 1 day ago
A
Cephalic Vein
B
Femoral Vein
C
Artery
D
Capillary
ABG বা Arterial Blood Gas analysis হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যার মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন (O₂), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂), এবং পিএইচ (pH) এর মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এটি মূলত শ্বাসপ্রশ্বাস এবং বিপাকীয় অবস্থার কার্যকারিতা বোঝার জন্য করা হয়। এই পরীক্ষার জন্য রক্ত অবশ্যই ধমনী (Artery) থেকে সংগ্রহ করতে হয়, কারণ ধমনী রক্তে গ্যাসের ঘনত্ব সবচেয়ে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়।
-
Artery থেকে রক্ত সংগ্রহের কারণ: ধমনীর রক্ত অক্সিজেনে সমৃদ্ধ এবং এটি শরীরের টিস্যুগুলিতে সরাসরি অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে, অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ নির্ণয় করতে ধমনীর রক্তই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নমুনা। শিরার (Vein) রক্তে এই গ্যাসগুলোর মাত্রা পরিবর্তিত থাকে, তাই সেগুলো ব্যবহার করা যায় না।
-
রক্ত সংগ্রহের স্থান: সাধারণত তিনটি ধমনী ব্যবহৃত হয়—Radial artery (হাতে কব্জির কাছে), Brachial artery (বাহুর ভেতরের দিকে) এবং Femoral artery (উরুর গোড়ায়)। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় Radial artery, কারণ এটি সহজলভ্য, রক্তপ্রবাহ ভালো থাকে এবং এতে জটিলতার আশঙ্কা কম।
-
নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি: রোগীর হাত সামান্য প্রসারিত করে নির্দিষ্ট স্থানে জীবাণুমুক্ত সুচ প্রবেশ করিয়ে রক্ত নেওয়া হয়। এই সময় সাধারণত Heparinized syringe ব্যবহার করা হয় যাতে রক্ত জমাট না বাঁধে। নমুনা সংগ্রহের পর সঙ্গে সঙ্গে তা বরফে রাখা হয় এবং যত দ্রুত সম্ভব ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।
-
ABG পরীক্ষার উদ্দেশ্য: এই পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা জানতে পারেন—
-
রক্তে pH মান স্বাভাবিক আছে কিনা (৭.৩৫–৭.৪৫)।
-
PaO₂ (partial pressure of oxygen) এবং PaCO₂ (partial pressure of carbon dioxide) এর মাত্রা স্বাভাবিক আছে কিনা।
-
রোগী Respiratory acidosis, Respiratory alkalosis, Metabolic acidosis বা Metabolic alkalosis অবস্থায় আছে কিনা।
-
-
Cephalic vein, Femoral vein বা Capillary থেকে রক্ত সংগ্রহ সাধারণত ABG পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ সেসব রক্তে গ্যাসের মান পরিবর্তিত থাকে। তবে নবজাতক বা শিশুদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও Capillary blood ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু তা ধমনীর রক্তের বিকল্প নয়।
-
সতর্কতা ও ঝুঁকি: ধমনীর রক্ত নেওয়ার সময় ব্যথা, হালকা রক্তপাত বা স্থানীয় ফোলা দেখা দিতে পারে। তবে অভিজ্ঞ হাতে এটি খুবই নিরাপদ প্রক্রিয়া। বিশেষ ক্ষেত্রে Allen’s test করা হয় যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় ধমনীর পাশের অন্য রক্তনালী ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।
সব মিলিয়ে, ABG analysis করার জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে হয় Artery থেকে, কারণ এ রক্তই শরীরের গ্যাস বিনিময়ের সঠিক অবস্থা প্রতিফলিত করে এবং রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার সঠিক মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।
0
Updated: 1 day ago