এন্টিবায়োটিকের কাজ-
A
জীবাণু ধ্বংস করা
B
জীবাণুর বংশ বৃদ্ধি করা
C
ভাইরাস ধ্বংস করা
D
জীবাণু বহন করা
উত্তরের বিবরণ
এন্টিবায়োটিক এমন এক ধরনের ঔষধ যা মূলত ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি আমাদের দেহে প্রবেশ করা ক্ষতিকর জীবাণুকে ধ্বংস করে বা তাদের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়। ফলে রোগের সংক্রমণ কমে যায় এবং শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে এন্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়, যেমন সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে এটি কাজ করে না।
-
এন্টিবায়োটিকের প্রধান কাজ হলো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা। এটি ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর নষ্ট করে, প্রোটিন তৈরি বাধাগ্রস্ত করে বা ডিএনএ উৎপাদন রোধ করে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া মারা যায় বা তাদের বংশবৃদ্ধি থেমে যায়।
-
প্রথম এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন ১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং আবিষ্কার করেন। এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত নানা রোগ যেমন নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, টনসিলাইটিস ইত্যাদিতে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়।
-
এন্টিবায়োটিকের প্রকারভেদ রয়েছে—কিছু জীবাণু সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে (bactericidal), আবার কিছু তাদের বৃদ্ধি বন্ধ করে (bacteriostatic)। উদাহরণ হিসেবে পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন, অ্যাম্পিসিলিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
-
ভাইরাসে এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। কারণ ভাইরাসের গঠন ব্যাকটেরিয়ার মতো নয় এবং তাদের নিজস্ব কোষপ্রাচীর বা বিপাক ক্রিয়া নেই। এজন্য ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
-
অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বিপজ্জনক। অপ্রয়োজনে বা অসম্পূর্ণ কোর্সে এন্টিবায়োটিক সেবন করলে জীবাণুগুলো প্রতিরোধক্ষম হয়ে ওঠে, যাকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। এটি ভবিষ্যতে চিকিৎসায় বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
-
সঠিকভাবে ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই এন্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়, কারণ ভুল ব্যবহার দেহের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও নষ্ট করতে পারে, যা হজম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
-
এন্টিবায়োটিকের প্রভাব মানবস্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় এক বিশাল বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, এন্টিবায়োটিকের মূল কাজ জীবাণু ধ্বংস করা, জীবাণুর বংশবৃদ্ধি বা ভাইরাস ধ্বংস করা নয়। তবে এটি ব্যবহার করতে হয় দায়িত্বশীলভাবে, চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে, যাতে মানবদেহ ও সমাজ দুটিই সুরক্ষিত থাকে।
0
Updated: 1 day ago
ডায়বেটিস (Diabetes) রোগ হয়-
Created: 1 day ago
A
ইনসুলিনের অভাবে
B
থাইরোপক্সিনের অভাবে
C
ইস্ট্রোজেনের অভাবে
D
গ্রোথ হরমনের অভাবে
ডায়বেটিস বা ডায়াবেটিস মেলিটাস একটি দীর্ঘমেয়াদি বিপাকজনিত রোগ, যা শরীরে ইনসুলিন হরমোনের অভাব বা কার্যকারিতা হ্রাসের কারণে ঘটে। ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি সাধন করে।
-
ইনসুলিন হলো অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াসের ল্যাঙ্গারহ্যান্স দ্বীপের বিটা কোষ থেকে নিঃসৃত একটি হরমোন। এটি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে কোষে শক্তি উৎপাদনের জন্য শর্করা প্রবেশে সাহায্য করে।
-
যখন শরীরে ইনসুলিন তৈরি কমে যায় বা একেবারেই হয় না, তখন তাকে টাইপ–১ ডায়াবেটিস বলে। এটি সাধারণত শিশু বা তরুণ বয়সে দেখা যায়।
-
অন্যদিকে, যখন ইনসুলিন তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু শরীরের কোষ ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল থাকে না, তখন সেটি টাইপ–২ ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। এটি সাধারণত বয়স্ক, অতিরিক্ত ওজন বা জীবনযাত্রায় অনিয়ম থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।
-
ডায়াবেটিসের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত প্রস্রাব, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা, ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া ইত্যাদি।
-
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, কিডনি বিকল, চোখের রেটিনায় ক্ষতি, স্নায়ুর সমস্যা, এমনকি পায়ের গ্যাংগ্রিন পর্যন্ত হতে পারে।
-
এই রোগ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণ।
-
রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত ৭০–১১০ mg/dl (খালি পেটে) এবং খাবারের দুই ঘণ্টা পরে ১৪০ mg/dl পর্যন্ত থাকে। এর চেয়ে বেশি হলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে।
-
ইনসুলিন আবিষ্কার করেন ফ্রেডেরিক ব্যান্টিং (Frederick Banting) এবং চার্লস বেস্ট (Charles Best) ১৯২১ সালে। তাঁদের এই আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটায় এবং অসংখ্য প্রাণ রক্ষা করে।
-
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর এ রোগে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
-
বাংলাদেশেও ডায়াবেটিসের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। শহরাঞ্চলে প্রায় প্রতি ১০ জনে ২ জন এই রোগে আক্রান্ত বলে পরিসংখ্যানে দেখা যায়।
সবশেষে বলা যায়, ডায়াবেটিস ইনসুলিনের অভাব বা অকার্যকারিতার ফলেই হয়, যা শুধু একটি হরমোনজনিত নয় বরং জীবনযাত্রা সম্পর্কিত গুরুতর সমস্যা। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য।
0
Updated: 1 day ago